ড্রোন ক্যামেরায় নজরদারি। গঙ্গাসাগরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
পুণ্যস্নানে এসে সাগর নয়, হাঁ করে আকাশের দিকেই চেয়ে ছিলেন বিহারের অজ গাঁ থেকে আসা পুনমদেবী। তাঁর মাথার উপর দিয়ে তখন ‘ফট ফট’ শব্দ করে উড়ে যাচ্ছে হেলিকপ্টার! মুড়িগঙ্গা পেরিয়ে সাগরদ্বীপে আসার সময় ভেসেলে বসেই ‘গোঁ-গোঁ’ শব্দ শুনেছিলেন উত্তরপ্রদেশের হুকুম চাঁদ। কিন্তু আকাশে তাকিয়ে বিমান দেখতে পাননি। শনিবার পুনমদেবীর পাশে দাঁড়িয়ে হেলিকপ্টার দেখেই আশ মিটিয়েছেন তিনি। এ দিন সাগরে দু’টি হোভারক্রাফট পৌঁছনোর পর ভিড় জমে যায়। কোনও কোনও সাধুকে জলযানের সঙ্গে নিজস্বী তুলতেও দেখা যায়! বারাণসী থেকে আসা সাধু তপেশ্বরানন্দের কথায়, প্রতি বছর মেলায় আসি। এ বার একসঙ্গে জাহাজ, হেলিকপ্টার দেখে খুব খুশি হয়েছি।”
ফি বছরই সাগরমেলার সময় জলপথে নিরাপত্তা জোরদার করে উপকূলরক্ষী বাহিনী। এ বার শুধু জলযান নয়, আকাশপথেও সাগরদ্বীপ ও তার চারপাশের উপরে কড়া নজরদারি রেখেছে তারা। বাহিনীর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ডিআইজি (অপারেশনস) অতুল জোশী বলেন, ‘‘এ বারই প্রথম হেলিকপ্টার ব্যবহার করছি আমরা। নিয়মিত ডর্নিয়ের বিমান দিয়েও টহলদারি চলছে।’’ বাহিনীর মুখপাত্র ডেপুটি কম্যান্ডান্ট অভিনন্দন মিত্র জানান, হেলিকপ্টার ও জাহাজের পাশাপাশি ‘আইসিজিএস বজ্র’ নামে একটি জাহাজ, হোভারক্রাফট মোতায়েন করা হয়েছে। হেলিকপ্টারের অস্থায়ী ঘাঁটি হয়েছে বজ্র নামে জাহাজের ডেকটি।
সাগরে এমনিতেই কয়েক লক্ষ লোকের ভিড় হয়। এর আগে কয়েক বার নৌকোডুবির ঘটনা ঘটেছে। ফলে এ ক্ষেত্রে জলপথে নিরাপত্তা ও নজরদারি এমনিতেই প্রয়োজন। প্রশাসনের একাংশের মতে, এর উপরে এমন ধরনের ধর্মীয় সমাগমে জঙ্গিহানার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে সম্প্রতি এ রাজ্যে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের ঘাঁটি মিলেছে এবং পরবর্তী কালে কলকাতায় হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে ভি়ডিও টেপ প্রকাশ করেছে আল কায়দা জঙ্গিরা।
আজ, রবিবার সাগরে ডুব দেবেন লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী। তার আগে এ দিন থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে কচুবেড়িয়া, চেমাগুড়িতে। সে দিকে তাকিয়েই সাগরদ্বীপে উপকূলরক্ষী বাহিনীর স্টেশন কম্যান্ডার অভিজিৎ দাশগুপ্ত বলছিলেন, ‘‘এই ভিড় এখন চলবে। প্রতি মুহূর্তে আমাদের সজাগ থাকতে হচ্ছে। ছোট ছোট নৌকোয় জওয়ানেরা টহল দিচ্ছেন। রয়েছেন ডুবুরিরাও।’’
উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর, হোভারক্র্যাফট জলে এবং উপকূল লাগোয়া স্থলভূমিতে কাজে লাগানো যাবে। কোনও বিপদে তাড়াতাড়ি ছুটে যাওয়ার জন্য ছোট মাপের দ্রুতগামী টহলদারি নৌকো ব্যবহার করা হবে। কপিলমুনির আশ্রম চত্বরটি নজরদারি ক্যামেরায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে।
ড্রোন ক্যামেরায় নজরদারিও চলছে। এ দিন স্পিডবোটে তদারকি করতে দেখা যায় পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। তাঁর কথায়, “সারা দেশ থেকে মানুষ এসেছেন। তাঁদের সব ধরনের সাহায্য করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy