Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ভদ্রেশ্বরে ডাকাতি করতে এসে বমাল গ্রেফতার

মায়ের মাথায় রিভলভার ঠেকাতে দেখে কিছু না ভেবেই ঝাঁপিয়ে পড়ি

মায়ের মাথায় রিভলভার ঠেকাতে দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারেনি ছেলে। দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন ডাকাতের উপর। একটাই লক্ষ্য, মাকে বাঁচাতে হবে। ধস্তাধস্তির মধ্যে রিভলভার থেকে গুলি ছুটে যায়। তবে তা কারও গায়ে লাগেনি, লাগে দেওয়ালে। ভয় না পেয়ে ওই দুষ্কৃতীকে আরও জোরে চেপে ধরেন তিনি।

তাপস ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:০৭
Share: Save:

মায়ের মাথায় রিভলভার ঠেকাতে দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারেনি ছেলে। দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন ডাকাতের উপর। একটাই লক্ষ্য, মাকে বাঁচাতে হবে। ধস্তাধস্তির মধ্যে রিভলভার থেকে গুলি ছুটে যায়। তবে তা কারও গায়ে লাগেনি, লাগে দেওয়ালে। ভয় না পেয়ে ওই দুষ্কৃতীকে আরও জোরে চেপে ধরেন তিনি। গুলির শব্দে লোকজন ছুটে এলে ধরা পড়ে ওই ডাকাত। বাইরে পাহারায় থাকা দুই দুষ্কৃতী পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চম্পট দেয়। শেষমেশ ধৃতকে রাতেই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

ডাকাতির অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়। বাকি দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে হুগলির ভদ্রেশ্বর থানার তারকেশ্বরপল্লিতে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তারকেশ্বরপল্লির বাসিন্দা মৃণ্ময়কান্তি রায়ের বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা নাগাদ জনা চারেকের এক দুষ্কৃতী দল হানা দেয়। সেই সময় বাড়ির সামনের ঘরে বসেছিলেন মৃণ্ময়বাবুর মা মঞ্জুশ্রীদেবী। বাবা মনতোষ রায় বাজারে কেনাকাটা করতে যাওয়ায় বাড়ি ছিলেন না। ওই রাতেই পটনা যাওয়ার জন্য ট্রেন ধরার কথা ছিল মৃণ্ময়বাবুর। সে জন্য পাশের ঘরে তিনি তৈরি হচ্ছিলেন। ছেলে বেরোবে বলে বাড়ির সামনের দরজা খোলাই রেখেছিলেন মঞ্জুশ্রীদেবী। পুলিশকে তিনি জানান, ছেলে বেরোবে বলে দরজা খোলা ছিল। তিনি ঘরে বসেছিলেন। হঠাৎই বছর তিরিশের এক যুবক ঘরে ঢুকে পড়ে। বাড়িতে সারাইয়ের কাজ চলায় প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন মিস্ত্রিদের কেউ ছেলের কাছে এসেছে। কিন্তু তার হাতে রিভলভার দেখে তিনি ভয় পেয়ে যান। দেখেন বাইরেও দু’জন দাঁড়িয়ে। মঞ্জুশ্রীদেবী বলেন, ‘‘কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘরে ঢুকে পড়া ছেলেটি আমার মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে আলমারির চাবি এবং টাকাপয়সা চায়। ভয়ে চিৎকার করে উঠি।’’

পাশের ঘরে মৃণ্ময়বাবু তখন পটনার ট্রেন ধরতে বেরোবার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। মায়ের চিৎকার শুনে কী হল দেখতে পাশের ঘরে ঢুকতেই দেখেন মায়ের মাথায় এক যুবক রিভলভার ধরে রয়েছে। মৃণ্ময়বাবুর কথায়, ‘‘কী হচ্ছে তা ভেবে দেখার সময় ছিল না। মাকে গুলি করতে পারে এই ভেবে কোনওমতে ওই যুবকের ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি। রিভলভার কেড়ে নিতে গিয়ে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু ওকে কোনওভাবেই ছাড়িনি। কারণ মাথায় ছিল, ছাড়া পেলেই ও গুলি চালাবে। দু’জনে প্রবল ঝটাপটি শুরু হয়। তার মধ্যেই রিভলবার থেকে ও গুলি চালায়। কিন্তু তা দেওয়ালে লাগে। গুলির আওয়াজ ও মায়ের চিৎকারে পাড়ার লোকজন ছুটে এলে ও পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু লোকজন তাড়া করে ওকে ধরে ফেলে। শুরু হয় মারধর। কিন্তু তার আগেই চিৎকার চেঁচামেচিতে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বাইরে পাহারায় থাকা বাকিরা সরে পড়ে।’’

খবর পেয়ে বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ভদ্রেশ্বর থানার ওসি। মুন্না রবি দাস নামে ওই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া রিভলভারটি সেভেন এমএম বলে জানিয়েছে পুলিশ। রায় পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘ধৃতকে জেরা করে বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে ধৃত দুষ্কৃতী ভদ্রেশ্বর অ্যাঙ্গাস জুটমিলের ঠিকা শ্রমিক।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সম্প্রতি এলাকায় বাইরের কিছু অপরিচিত যুবকের আনাগোনা বেড়েছে। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশের কড়া নজরদারির অভাবেই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দুষ্কৃতীরা। রায় পরিবারে হামলার ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়।

স্থানীয় বাসিন্দা সুকান্ত গঙ্গ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের পাড়ায় আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এখন দেখছি মানুষের হাতে অবাধেই পৌঁছে যাচ্ছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। এ সব তারই জন্য বলে মনে হচ্ছে। পুলিশের ভূমিকা আরও কড়া না হলে এ সব বন্ধ করা যাবে না।’’

সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পর পর ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। তদন্তে নেমে পুলিশ কয়েকটি ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার এবং লুঠ হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার করলেও দুষ্কৃতীদের দাপট যে কমেনি ভদ্রেশ্বরের ঘটনাই তার প্রমাণ। যদিও পুলিশের দাবি, বিভিন্ন এলাকায় রাতে টহলদারি রয়েছে। নজরদারিও চালানো হচ্ছে।

মঞ্জুশ্রীদেবীর কথায়, ‘‘ছেলে ওই ভাবে ডাকাতের উপর ঝাঁপিয়ে না পড়লে হয়তো আমাকে গুলিই করে দিত। ছেলের জন্যই বেঁচে গিয়েছি। তবে ওর সঙ্গে যখন ডাকাতাটার ধস্তাধস্তি হচ্ছিল তখন ছেলের কথা ভেবে খুব ভয় করছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE