Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কারখানা খোলার সামর্থ্যই নেই, বলছেন কর্তৃপক্ষ

বৈঠক হল। কিন্তু পরিস্থিতির হেরফের হল না। শালিমার পেন্টসের গেট বন্ধই রইল। বুধবার সকালে হাওড়ার শালিমার পেন্টস কারখানায় কাজ বন্ধের নোটিস পড়ার পরে সারা দিন সরকার পক্ষের বিশেষ হেলদোল দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক কারখানা-কর্তৃপক্ষের এক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

বৈঠক হল। কিন্তু পরিস্থিতির হেরফের হল না। শালিমার পেন্টসের গেট বন্ধই রইল।

বুধবার সকালে হাওড়ার শালিমার পেন্টস কারখানায় কাজ বন্ধের নোটিস পড়ার পরে সারা দিন সরকার পক্ষের বিশেষ হেলদোল দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক কারখানা-কর্তৃপক্ষের এক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সরকারি সূত্রে খবর, বৈঠকে মালিক পক্ষের প্রতিনিধি মন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন, মার্চ মাসে কারখানায় আগুন লেগে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করার মতো আর্থিক সঙ্গতি তাঁদের নেই। তাই কারখানার দরজাও আপাতত খুলছে না। এর পরেও শ্রমমন্ত্রী-সহ রাজ্যের তিন মন্ত্রী অবশ্য যথারীতি কারখানা খোলার আশ্বাসের কথা শুনিয়েছেন।

শালিমারের জট খুলতে এ দিন নব মহাকরণে বৈঠক ডেকেছিলেন মলয়বাবু। সেখানে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়, শ্রমসচিব অমল রায়চৌধুরী, শ্রম কমিশনার জাভেদ আখতার প্রমুখ। কর্তৃপক্ষের তরফে ছিলেন কারখানার ম্যানেজার (মানবসম্পদ) সঞ্জয় মজুমদার। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বৈঠকের পর শ্রমমন্ত্রী বলেন, “শালিমার কর্তৃপক্ষকে কারখানা খুলতেই হবে। আগামী ২৩ জুলাই ফের বৈঠক ডেকেছি।”

মন্ত্রীর এই চাপ সত্ত্বেও কারখানার ম্যানেজার ফের কাজ শুরু নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাননি। তাঁর কথায়, “পরের দিনের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে মন্ত্রী আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু আমাদের নতুন আর কিছু বলার নেই। কাজ বন্ধের নোটিসের তৃতীয় অনুচ্ছেদেই আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছি, কী কারণে কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। সেই অবস্থানে কোনও বদল ঘটছে না।”

কিন্তু ঈদ ও পুজোর মুখে কর্তৃপক্ষের এই একতরফা কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তে শ্রমিক-কর্মীরা কি চরম সঙ্কটে পড়লেন না? জবাবে ম্যানেজার বলেন, “আমাদের স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ১৫৪। সংস্থার অন্য রাজ্যের কারখানায় তাঁদের বদলি করার প্রস্তাব লিখিত ভাবে দেওয়া হলেও কর্মীরা তা মানেননি। বদলি নিয়ে হাইকোর্টের রায়ও কর্তৃপক্ষের পক্ষেই গিয়েছে। এর পরে আমাদের আর কী-ই বা করার আছে?”

কর্মীদের বদলির সিদ্ধান্ত যে সরকারের পছন্দ নয়, তা জানিয়ে অরূপ রায় বলেন, “এক জন কর্মীকেও বদলি করা চলবে না। যে-টাকা ওঁরা পান, তাতে অন্য শহরে গিয়ে থাকা পোষাবে না। এখানেই কারখানা খুলে চালাতে হবে।” শ্রমমন্ত্রীও বলেন, “সরকার এই কারখানা খুলতে বদ্ধপরিকর। তার জন্য যা যা করা দরকার, সবই করব।”

আগুন লাগার পরে দমকল দফতর ছাড়পত্র দিচ্ছে না শালিমার কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান। এ দিন তিনি বলেন, “মার্চ মাসে শালিমার কারখানায় আগুন লাগার পর আমরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলাম পুলিশের কাছে। তার পর কর্তৃপক্ষকে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও তাঁরা তা করেননি।” মন্ত্রী জানান, দমকলের অনুমতি চেয়ে আজ পর্যন্ত কোনও আবেদন কর্তৃপক্ষ করেননি। এখন আবেদন করলে সব দিক খতিয়ে দেখে তাঁর দফতর জরুরি ভিত্তিতে অনুমতি দিয়ে দেবে।

শালিমারের আগেও সম্প্রতি রাজ্যের কয়েকটি বড় কারখানা বন্ধ হয়েছে। সরকার তা হলে কী করছে? এই প্রশেনের জবাবে শ্রমমন্ত্রী বলেন, “আপনারা শুধু কারখানা বন্ধ হওয়াই দেখছেন। অনেক কারখানা যে খুলছে, সেটা দেখতে পাচ্ছেন না। এই রাজ্যে কারখানা বন্ধ হওয়ার চেয়ে খোলার ঘটনাই বেশি।”

এ দিন কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে শালিমারের প্রসঙ্গ তুলে শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রকে প্রশ্ন করা হয়, কারখানা বন্ধের এই ঘটনায় কি রাজ্যের শিল্প-বান্ধব ‘ভাবমূর্তি’ ধাক্কা খাচ্ছে না? বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, “কী সব আজেবাজে প্রশ্ন! এটা রফতানি নিয়ে অনুষ্ঠান। তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকলে করুন, উত্তর দেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shalimar paint factory locked out
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE