Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মাতঙ্গের সঙ্গেই চার্জশিটে নাম শিবনারায়ণের

মূল বা প্রথম পরিপূরক চার্জশিটে ছিলেন না। তৃতীয়টিতে এল প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহের নাম। সারদা রিয়েলটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে এত দিনে চার্জশিট দিল সিবিআই। শুক্রবার আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সেটি পেশ করেন তদন্তকারীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

মূল বা প্রথম পরিপূরক চার্জশিটে ছিলেন না। তৃতীয়টিতে এল প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহের নাম। সারদা রিয়েলটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে এত দিনে চার্জশিট দিল সিবিআই। শুক্রবার আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সেটি পেশ করেন তদন্তকারীরা।

ওই চার্জশিটে মাতঙ্গ ছাড়াও অন্য একটি বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার মালিক শিবনারায়ণ দাসকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। নাম রয়েছে মাতঙ্গের চারটি সংস্থারও।

এই মামলায় আলিপুর আদালতে গত ১৭ নভেম্বর প্রথম চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। তাতে নাম ছিল সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন, তাঁর ছায়াসঙ্গিনী দেবযানী মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজত মজুমদার এবং ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা দেবব্রত ওরফে নিতু সরকারের নাম ছিল। তার চার দিনের মাথায় গ্রেফতার করা হয় ব্যবসায়ী সৃঞ্জয় বসু এবং ১২ ডিসেম্বর এই মামলাতেই গ্রেফতার হন মন্ত্রী মদন মিত্র। ১৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় প্রথম সাপ্লিমেন্টারি বা অতিরিক্ত চার্জশিট দেওয়া হয়। তাতে নাম ছিল সৃঞ্জয় ও মদনের। সৃঞ্জয় পরে জামিন পেলেও মদন এখনও বন্দি। অসুস্থতার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। এ দিন সারদা মামলায় দেওয়া চার্জশিটটি সিবিআইয়ের দ্বিতীয় অতিরিক্ত বা পরিপূরক চার্জশিট।

অসমে সারদার ব্যবসার খোঁজ করতে গিয়ে মাতঙ্গের নাম পায় সিবিআই। তারা জানায়, তাঁর চারটি সংস্থা কেনার জন্য ৮১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার চুক্তি হয়েছিল সারদা-প্রধান সুদীপ্তের। সুদীপ্ত তাঁকে ২৮ কোটি টাকা দেন। ২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সেই চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু ২৮ কোটি টাকা ফেরত পাননি সুদীপ্ত। প্রশাসনের শীর্ষ মহলের একাংশের সঙ্গে সারদার লোকেদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কাজটাও করতেন মাতঙ্গ।

উঁচু তলার সঙ্গে মাতঙ্গের এই যোগাযোগ বিষয়টি তাঁর গ্রেফতারির পরেই প্রমাণিত হয়েছিল। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মাতঙ্গের গ্রেফতারি আটকানোর জন্য সিবি‌আই দফতরে ফোন করেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী। ফলে পদ ছাড়তে হয় তাঁকে। চার্জশিটে মাতঙ্গ এবং তাঁর চারটি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণা, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায় আর এক অভিযুক্ত শিবনারায়ণ দাসের বিরুদ্ধে ওই তিনটি ধারা ছাড়াও ‘প্রাইজ চিটস অ্যান্ড মানি সার্কুলেশন (ব্যান্‌ড) অ্যাক্ট’-এও অভিযোগ এনেছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা।

কে এই শিবনারায়ণ?

পুলিশি সূত্রের খবর, শিবনারায়ণ ‘সিলিকন’ নামে একটি লগ্নি সংস্থার মালিক। সারদা কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ায় কলকাতা ছেড়ে পালানোর আগে সিবিআইকে একটি চিঠি লিখেছিলেন সুদীপ্ত। তাতে শিবনারায়ণকে অর্থ লগ্নি ব্যবসায় নিজের ‘গুরু’ বলে জানিয়েছিলেন সারদা-প্রধান। সারদার লগ্নি ব্যবসার শুরুতে শিবনারায়ণই ছিলেন এই ব্যবসার অন্যতম চক্রী। সারদায় আট মাস শীর্ষ পদে কাজও করেছেন তিনি। বাজার থেকে টাকা তোলার বুদ্ধি ও পন্থা তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। সেই টাকা খাটানোরও পরামর্শ দিতেন তিনি। সারদা-তদন্ত শুরু হতেই গা-ঢাকা দেন শিবনারায়ণ। ১৭ জানুয়ারি সাঁতরাগাছি স্টেশনের কাছে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে ধরা পড়েন তিনি।

বৃহস্পতিবার মাতঙ্গের জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছিল। এ দিন চার্জশিটের প্রতিলিপি দাবি করে মাতঙ্গের আইনজীবী সেলিম রহমান ভারপ্রাপ্ত বিচারক মণিকুন্তলা রায়ের এজলাসে জানান, জামিনের আর্জি নিয়ে তাঁরা উচ্চতর আদালতে যাবেন। শিবনারায়ণের জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE