Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
তরজা শুরু দশ সওয়ালে

খাগড়াগড় অস্ত্রে বিঁধলেন সিদ্ধার্থনাথ

খাগড়াগড়-বিস্ফোরণ নিয়ে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর দল ও সরকারকে তীব্র আক্রমণ করলেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। ওই মামলায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) আদালতে চার্জশিট পেশ করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মঙ্গলবার কলকাতায় বসে সিদ্ধার্থনাথের প্রশ্ন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি এখন মানছেন যে খাগড়াগড় কাণ্ডের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত? সেই সঙ্গে, রাজ্য সরকার কেন এনআইএ তদন্তে আপত্তি করেছিল, এই পুরনো প্রশ্নও খুঁচিয়ে তুলেছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:০৩
Share: Save:

খাগড়াগড়-বিস্ফোরণ নিয়ে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর দল ও সরকারকে তীব্র আক্রমণ করলেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ।

ওই মামলায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) আদালতে চার্জশিট পেশ করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মঙ্গলবার কলকাতায় বসে সিদ্ধার্থনাথের প্রশ্ন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি এখন মানছেন যে খাগড়াগড় কাণ্ডের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত? সেই সঙ্গে, রাজ্য সরকার কেন এনআইএ তদন্তে আপত্তি করেছিল, এই পুরনো প্রশ্নও খুঁচিয়ে তুলেছেন তিনি। সিদ্ধার্থনাথের আরও জিজ্ঞাস্য, পশ্চিমবঙ্গের যে সব জেলায় বছরের পর বছর ধরে জঙ্গি ডেরা চলছিল, সেই সব জায়গার পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের বিরুদ্ধে কেন রাজ্য সরকার ব্যবস্থা নিল না? বস্তুত, এই ধরনের ঘটনা প্রকাশ্যে এসে পড়লে মমতার দল ও সরকার যে তা ধামাচাপা দেওয়ারই চেষ্টা করেছে, ঠারেঠোরে সেই অভিযোগ করে এ দিন দশটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন সিদ্ধার্থনাথ।

মুখ্যমন্ত্রী ও সরকারের উদ্দেশে করা এই সব প্রশ্নের কোনও জবাব অবশ্য শাসক দল দেয়নি। সিদ্ধার্থনাথকে ‘চার্জশিটবাবু’ আখ্যা দিয়ে রাজ্যের বর্ষীয়ান মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘উনি (সিদ্ধার্থনাথ) এত বড় কেউকেটা নন যে, ওঁর চার্জশিটের জবাব দিতে হবে।’’ একই সঙ্গে তাঁর পাল্টা আক্রমণ, ‘‘এনআইএ-র চার্জশিটে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একটি শব্দও খরচ করা হয়নি। তা হলে কোন সাহসে ওঁরা এই ধরনের কথাবার্তা বলেন?’’ চার্জশিটে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না-থাকা সত্ত্বেও সিদ্ধার্থনাথ কেন এমন কথা বললেন, সেই প্রসঙ্গ তুলে রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তারও প্রশ্ন, ‘‘তা হলে তদন্তটা কে করছে? এনআইএ নাকি অন্য কেউ?’’ কিন্তু সরকারি ভাবে কেন বিজেপির অভিযোগের জবাব দেওয়া হচ্ছে না? ওই শীর্ষকর্তার বক্তব্য, ‘‘কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তির তোলা অভিযোেগর উত্তর দিতে সরকার বাধ্য নয় এবং দেবেও না।’’

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন

গত বছর ২ অক্টোবর, দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিনে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণে দু’জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় আরও এক জন। তদন্তে নেমে এনআইএ জানতে পারে, এ রাজ্যের মাটিকে ব্যবহার করে প্রতিবেশী বাংলাদেশে নাশকতা চালানোর ছক কষেছিল জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জে‌এমবি)। সোমবার তারা যে চার্জশিট জমা দিয়েছে, তাতেও ওই একই অভিযোগ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত বতর্মান সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছিল জেএমবি জঙ্গিরা। তাদের লক্ষ্য ছিল, সে দেশে শরিয়তভিত্তিক, কট্টরপন্থী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সে জন্য বাংলাদেশে একের পর এক জঙ্গি কার্যকলাপ ঘটানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আর সেই কাজের প্রস্তুতি হিসেবেই জেএমবি মূলত পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি ডেরা, জেহাদি প্রশিক্ষণ ও মগজধোলাইয়ের কেন্দ্র, আত্মগোপনের জায়গা, অর্থ সংগ্রহের কেন্দ্র এবং অস্ত্র ও বোমা তৈরির কারখানা গড়ে তোলে। এ রাজ্য থেকে বহু সদস্যও নিয়োগ করে তারা।এনআইএ-র এই চার্জশিটের পরিপ্রেক্ষিতে মমতার উদ্দেশে সিদ্ধার্থনাথের প্রশ্ন, ‘‘আপনার সরকার কেন কর্মসংস্থান হতে পারে এমন কারখানার পরিবর্তে সন্ত্রাসের কারখানা তৈরি করল? আপনার আমলে রাজ্যে সন্ত্রাসবাদ বাড়ল এবং ছড়িয়ে পড়ল কেন?’’

বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গের মাটিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও। সবচেয়ে বড় অভিযোগের তির তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ইমরান হাসানের বিরুদ্ধে। তিনি অধুনা নিষিদ্ধ সংগঠন স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্টস অব ইন্ডিয়ার (সিমি) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এখন সিমির সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই বলে ইমরান দাবি করলেও তাঁর অন্যান্য বহু কার্যকলাপ সন্দেহজনক বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির দাবি। মমতা যখন তাঁকে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব নিজে কলকাতায় এসে ইমরান সম্পর্কে ফাইল মুখ্যমন্ত্রীর হাতে দিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও ইমরানকে সাংসদ না করার কেন্দ্রীয় অনুরোধ রাখেননি মমতা। এ দিন সিদ্ধার্থনাথের প্রশ্ন, ‘‘ভোটব্যাঙ্কের সস্তা রাজনীতির স্বার্থে আপনি (মমতা) কি জাতীয় নিরাপত্তাকে বলি দেননি? সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আপনার নীতি কী?’’

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তে রাজ্য সরকার বাধা তৈরির চেষ্টা করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছিল। মুম্বইয়ে ২৬/১১-র জঙ্গি হানার পর বিশেষ পারদর্শী সংস্থা হিসেবে এনআইএ গঠন করে কেন্দ্র। বলা হয়, জঙ্গি কার্যকলাপ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সব কিছুর তদন্ত করবে এই সংস্থা। রাজ্য সরকার কিন্তু খাগড়াগড়ের তদন্তভার এনআই-কে দিতে রাজি ছিল না। তারা প্রাথমিক ভাবে ঘটনার গুরুত্ব লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করে। এমনকী, ঘটনার পরের দিন রাজ্য পুলিশকে সহায়তা করার জন্য এনআইএ-র দু’জন অফিসার ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদের সঙ্গে অসহযোগিতা এবং অসম্মান করা হয় বলেও অভিযোগ। এই অবস্থায় বিস্ফোরণের সাত দিন পরে রাজ্যের সম্মতির তোয়াক্কা না করে নজিরবিহীন ভাবেই এনআইএ-র হাতে তদন্তভার দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের মদত দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

এই অবস্থায় গত ডিসেম্বরে এক দলীয় সভায়, তৃণমূলের ঘাড় থেকে যাবতীয় অভিযোগ ঝেড়ে ফেলার পাশাপাশি মমতা এই সন্দেহও প্রকাশ করেছিলেন যে, খাগড়াগড়-কাণ্ডে গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংয়ের (র) হাত থাকতে পারে। কেন্দ্রে মন্ত্রী থাকার সুবাদে কী ভাবে এ সব করা হয়, তা-ও তাঁর বিলক্ষণ জানা আছে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। কিন্তু তখনই প্রশ্ন , ‘র’-এর যাবতীয় কার্যকলাপ বিদেশে। দেশের ভিতরে তো তাদের কোনও ভূমিকা থাকার কথা নয়। কিন্তু মমতার নির্দেশে তৃণমূল তখন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেই পথে নেমেছিল। এনআইএ-র তদন্তকারীরা বর্ধমান, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমে একের পর এক জঙ্গি ডেরায় হানা দেওয়া এবং অভিযুক্তদের ধরপাকড় শুরু করার পরেই ‘বাড়াবাড়ি’-র অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামে তৃণমূল। কেন্দ্রের শাসক দলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগও তোলে তারা। এ দিন তাই সিদ্ধার্থনাথের প্রশ্ন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টিতে সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, এখনও কি তাঁর সেটাই মনে হচ্ছে?’’

তৃণমূল অবশ্য বিজেপির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ বহাল রেখেছে। পার্থবাবু এ দিন বলেন, ‘‘কিছু সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপি বাংলাকে কলঙ্কিত ও অশান্ত করতে চাইছে। এ সব কথা বলে আগুন লাগানোর মারাত্মক খেলা খেলছে। সেই আগুনে ওরা আগেও পুড়েছে, এ বারও পুড়বে।’’ কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার দু’মাস পর জঙ্গিদের খাগড়াগড়ের ওই বাড়ি ভাড়া নেওয়াটা তাৎপর্যপূর্ণ, এমন ইঙ্গিত দিয়ে পার্থবাবুর আরও মন্তব্য, ‘‘বিস্ফোরণ হয়েছে দুর্গাষ্টমীর দিন। সাধারণ মানুষ, পুলিশ সবাই তখন রাস্তায়। বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য ওই সময়টা বেছে নেওয়া হল কেন, কাশ্মীরেও কেনই বা বিস্ফোরণ হচ্ছে?’’

সিদ্ধার্থনাথ এ দিন প্রশ্ন তোলেন, ‘‘রাজ্য সরকার কেন খাগড়াগড় কাণ্ডের তদন্ত করল না?’’ পার্থবাবুর পাল্টা জিজ্ঞাস্য, ‘‘এনআইএ তদন্ত করলে সমান্তরাল আর একটা তদন্ত হয় কি?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE