শোকার্ত: কলকাতায় আসার পথে তখন বাগডোগরা বিমানবন্দরে। স্বামী অমিতাভ মালিকের কফিন সঙ্গে নিয়ে স্ত্রী বিউটি। ছবি: স্বরূপ সরকার
পাহাড় থেকে স্ত্রীকে নিয়ে অষ্টমীর রাতে শিলিগুড়ি এসেছিলেন। ওই দিন শেষ দেখা, অনেক গল্প হয়েছিল অমর্ত্য চক্রবর্তীর, সুবর্ণ রাউত, পালজন ভুটিয়াদের সঙ্গে। সেটাই যে শেষ কথা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না তাঁরা। এসআই অমিতাভ মালিকের একই ব্যাচের সতীর্থ অমর্ত্যবাবু, সুবর্ণ রাউতরা ১১ জন রয়েছেন শিলিগুড়িতে। শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ কমিশনারেটের মাঠে শোকসভায় অমিতাভবাবুর স্মৃতিচারণেই তাঁরা বিহ্বল হয়ে পড়েন।
শুধু কী সতীর্থ-পুলিশ কর্মীরাই! শহরের ব্যবসায়ী থেকে রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি তাঁদেরকেও স্পর্শ করেছে এই মৃত্যু। তাঁরাও হাজির শোকসভায়। ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তা ওমপ্রকাশ অগ্রবাল, চা ব্যবসায়ী রাজীব লোচন, পর্যটন ব্যবসায়ী সম্রাট সান্যাল, পুরসভার বিরোধী দলনেতা রঞ্জন সরকার, কৃষ্ণ পাল, তৃণমূল নেতা দীপক শীল, সঞ্চয় টিব্রুয়াল, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি প্রদীপ দাশগুপ্তরা অনেকেই। ছিলেন সাংস্কৃতিক সংস্থার সদস্যা অদিতি দাম ঘোষ, তাপসি চক্রবর্তীরাও। সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘এই মৃত্যু খুবই দুর্ভাগ্যনজক। অমিতাভবাবু সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁকে আমরা মনে রাখব।’’ ওমপ্রকাশবাবু জানান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ওই পুলিশ অফিসার তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। রাজ্যে মানুষ তাঁর জন্য গর্বিত।’’ মঞ্চে রাখা ছবিতে ফুল দিয়ে, মোমবাতি জ্বেলে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সকলে। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার সিংহ ঘোষণা করেন, এদিন অনুষ্ঠানস্থালের নতুন মঞ্চটি ‘শহিদ অমিতাভ মালিক মঞ্চ’ বলে নামকরণ হল।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘দক্ষ, সাহসী, বুদ্ধিমান এই পুলিশ অফিসারের মৃত্যু আমাদের মধ্যে গভীর বেদনা সৃষ্টি করেছে। রাজ্য সরকারের তরফে তার পরিবারকে আর্থিক সাহায্য এবং চাকরি দেওয়ার কথা ইতিধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের বাসিন্দারা অনেকেই এসে এ দিন প্রয়াত অমিতাভবাবুকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তার পরিবারের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দেব।’’
এদিন শোকসভায় প্ল্যাকার্ড হাতে পুলিশ কর্মীরা। যাতে লেখা ‘ভাই অমিতাভ, তোমার জন্য আমরা গর্বিত। তোমার আত্মবলিদানের মাধ্যমে আমরা শপথ নিলাম কোনও অশুভ শক্তি পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করতে পারবে না’। কোনটাতে লেখা ‘অমিতাভ অমর রহে’। পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘পুলিশের মনোবল সব সমতেই উঁচুতে রয়েছে। কখনও এ ধরণের ঘটনা দাগ কেটে যায়।’’
এ দিন উড়ানে কলকাতায় মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য বাগডোগরা বিমানবন্দরেও শেষ বিদায় জানাতে গিয়েছেন পুলিশকর্মী অনেকেই। সতীর্থ অমর্ত্যবাবু বলেন, ‘‘এভাবে ওকে হারাব ভাবতেই পারছি না। ও সব সময়ই ভাল কিছু করতে চাইত। পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে তাই টেনশনে থাকত।’’ এদিন সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ সেবকমোড়ে জয় বাংলা ফোরামের তরফে অমিতাভ মালিকের স্মৃতিতে মোমবাতি জ্বালানো হয়। এক মিনিট নীরবতা পালন হয়। ফোরামের তরফে প্রদীপ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘অমিতাভবাবুর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy