হোঁচট শুধু অঙ্ক বা ইংরেজিতেই নয়। ঘড়ি দেখতে পারে না, এমনকী দেশের রাজধানীর নামও জানে না পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের বহু স্কুলপড়ুয়া। জানে না নিজের রাজ্যের নাম।
সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই ছবি। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের (১৪-১৮ বছর) পড়ুয়াদের শিক্ষায় বিস্তর ফাঁক থেকে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছে শিক্ষা ক্ষেত্রে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘প্রথম’। আজ সংগঠনের ১৩তম বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। ওই সংগঠন এত দিন অল্পবয়সিদের নিয়ে কাজ করলেও ১৪ থেকে ১৮ বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে শিক্ষার ছবিটি ঠিক কেমন, তা খতিয়ে দেখে এ বারেই প্রথম সমীক্ষা চালায় তারা।
পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা বিশেষ আশাব্যঞ্জক নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৬০টি গ্রামে সমীক্ষা চালায় ওই সংগঠন। সমীক্ষা বলছে, ঠিকঠাক ভাগ বা বিয়োগ করতে পারছে মাত্র ৩০.৯ ও ২৩.৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। ইংরেজি বাক্য ঠিক ভাবে পড়তে ব্যর্থ ৫০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। দেশের রাজধানীর নাম জানে না দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রায় ৪৮ শতাংশ ছেলেমেয়ে। ৩৩ শতাংশ পড়ুয়া জানে না, তারা কোনও রাজ্যে থাকে। আর মানচিত্রে রাজ্যের অবস্থান বলতে অক্ষম প্রায় ৭৩.৫ শতাংশ পড়ুয়া। আর কম্পিউটার! তার মুখই দেখেনি ৬৪.৬ শতাংশ পড়ুয়া।
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জানিয়েছে, ২৪টি রাজ্যের ২৬টি গ্রামীণ জেলার ২৮ হাজার ছেলেমেয়ের উপরে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, গোটা দেশে গড়ে ৪০ শতাংশের বেশি গ্রামীণ ছাত্রছাত্রীরা ঘড়ির কাঁটা দেখে সময় বলতে সড়গড় নয়। সাধারণ যোগ-বিয়োগ করতে পারলেও প্রায় ৫৭ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ভাগের অঙ্ক কষতে বিপাকে পড়ে যায়। ঋণ শোধের অঙ্কে ব্যর্থ প্রায় ৮৫ শতাংশ পড়ুয়া। ইংরেজি বাক্য পড়তে সমস্যা রয়েছে প্রায় ৪২ শতাংশের। ৫৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ভারতের মানচিত্রে নিজের রাজ্যকে চিনতে পারে না!
আরও পড়ুন: দু’টাকায় চাল, তালিকায় অর্ধেক শহরই
এত নেতিবাচক ছবির মধ্যেও আশার আলো আছে। সেই আলোটা হল আট বছর ধরে চলা শিক্ষার অধিকার আইন। যার জোরে দেশের অসংখ্য ছেলেমেয়ে শিক্ষার আঙিনায় প্রবেশাধিকারটুকু অন্তত পেয়েছে। ২০০৪-এ গোটা দেশে অষ্টম শ্রেণি পাশ করা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল এক কোটি ১০ লক্ষ। ওই আইনের সৌজন্যে গত ১০ বছরে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দু’কোটি ২০ লক্ষ।
উচ্চশিক্ষায় ছাত্রছাত্রী বাড়াতে কেন্দ্র মরিয়া। কিন্তু স্কুলশিক্ষার বিবর্ণ ছবি দেখেই উদ্বিগ্ন শিক্ষা শিবির। শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষকদের দায় রয়েছে। অর্থনীতির শিক্ষক অভিরূপ সরকার জানান, শিক্ষকদের আরও দায়বদ্ধ হওয়া দরকার। ‘‘যে-ভাবে শিক্ষক বাছাই হচ্ছে, তাতেই বোধ হয় গলদ থেকে যাচ্ছে। এ ভাবে চললে ভবিষ্যতেও আমাদের হয়তো এই ধরনের তথ্যের মুখোমুখি হতে হবে,’’ বলছেন অভিরূপবাবু। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার জানান, এই তথ্য সত্যিই হতাশাব্যঞ্জক। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষকদের আত্মজিজ্ঞাসার সময় এসেছে। পড়ুয়ারা কেন শিখছে না, সেটা অবশ্যই তাঁদের ভাবতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy