সেই তুবড়ি। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
নিষিদ্ধ শব্দবাজির আঁতুড়ঘর চম্পাহাটিতে ‘হিট জেনারেটর তুবড়ি’ এক বিশেষ ধরনের আতসবাজি। সেটিও বিপজ্জনক তালিকায় রয়েছে। পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকলে ওই বাজি তৈরির পদ্ধতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। সেই কারণেই তা এক অর্থে নিষিদ্ধ। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পাশাপাশি, সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতিও ওই বাজি নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে।
দক্ষিণ শহরতলির চম্পাহাটি নিষিদ্ধ শব্দবাজির আঁতুড়ঘর বলেই পরিচিত। রাজ্যর বিভিন্ন প্রান্তে নানা কায়দায় নিষিদ্ধ শব্দবাজি সরবরাহ করেন চম্পাহাটির বাজি কারিগরেরা বলে দীর্ঘকাল ধরে অভিযোগ রয়েছে। ওই এলাকায় প্রায় শ’পাঁচেক বাজি কারখানা রয়েছে। তার অধিকাংশই বেআইনি বলে দাবি দুষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের। চকোলেটের পাশপাশি ওই সব কারখানাতেই এখন ঝুঁকি নিয়ে ‘জেনারেটর তুবড়ি’ তৈরি করা হচ্ছে। শুধু চম্পাহাটির বাজির বাজারে নয়, রমরমিয়ে তা বিক্রি হচ্ছে কলকাতার খোলা বাজারেও। কেউ কেউ ওই আতসবাজিকে ডাকছেন ‘জেনারেটর বোমাও’ নামেও।
শুধু চকোলেট বোম নয়। শব্দবাজির আঁতুড়ঘর চম্পাহাটিতে হাউই, চরকি, তারাবাতি, রং মশালও তৈরি হয়। কিন্তু কলকাতা বাজির বাজারে শিবকাশির আতসবাজির রমরমা। সে ক্ষেত্রে প্রতিযোগীতায় চম্পাহাটি পিছিয়ে রয়েছে। স্থানীয় আশপাশের বাজারেই চম্পাহাটির আতসবাজি বিক্রি হয়। কলকাতার বাজারে চম্পাহাটির তৈরি আতসবাজির কোনও কদর নেই বললেই চলে।
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কলকাতার আতসবাজির বাজারে চম্পাহাটির তৈরি ‘জেনারেটর তুবড়ি’ বেশ নাম করেছে। তুবড়িতে আগুন ধরালে জেনারেটরের মতো ঘট ঘট করে আওয়াজ হবে। আর শব্দের তালে তালে নানা রঙের আগুনের ফুলকি ঝরে পড়বে। প্রায় মিনিট খানেক ধরে ওই তুবড়িতে ঘট ঘট আওয়াজ আর নানা রঙের আগুনের ফুলকি ঝরবে।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ওই তুবড়ি তৈরিতে গন্ধক ও অ্যালুমিনিয়াম তরল শুকিয়ে কঠিন করা হয়। তার পরে ওই বাজি প্রস্তুত করা হয়। একটি নিদিষ্ট তাপমাত্রায় ওই তরল কঠিন করা হয়। কিন্তু কোনও ভাবে আনাড়ি হাতে তাপ প্রয়োগে তারতাম্যের ফারাক হলে ওই তরলে বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা থাকে। ওই বাজি তৈরিতে ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা। সেই কারণেই বাজিটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সারা বাংলা বাজি ব্যবসায়ী সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায়ও এ বিষয়ে এক মত। তিনি বলেন, ‘‘ওই বাজি তৈরি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটা নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে।’’
মাস আটেক আগে বজবজের চিংড়িপোঁতা এলাকায় জেনারেটর তুবড়ি তৈরি করতে গিয়ে একটি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়। ওই ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
কিন্তু চম্পাহাটি রয়েছে, চম্পাহাটিতেই। শত ঝুঁকি নিয়ে বছরের পর বছর শব্দাবজি তৈরি করা হচ্ছে। ওই এলাকার এক বাজি কারিগরের কথায়, ‘‘শব্দবাজি তৈরি একই রকম ঝুঁকির। তৈরির থেকেও বড় ঝুঁকি ওই বাজি পাচার করা। তবে প্রতি বছর চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতার হাতে আমারা শব্দবাজি পৌঁছে দিয়ে আসছি। সে ক্ষেত্রে একটাই মাত্র হিট আতসবাজি আমাদের এখানে তৈরি করা হচ্ছে। ওই বাজি শিবকাশিকে টেক্কা মেরেছে। তা যতই নিষিদ্ধ হোক না কেন, লুকিয়ে-চুরিয়ে তৈরি করাই হবে। শব্দবাজির মতো বিক্রিও করা হবে। প্রয়োজনে পাচারও করা হবে।’’
চম্পাহাটির বাজি করিগরদের কথায়, তিনটি জেনারেটর তুবড়ির দাম ৪০ টাকা। সে ক্ষেত্রে শিবকাশির তৈরি তিনটি তুবড়ি দাম ন্যূনতম একশো টাকা। সে ক্ষেত্রে চম্পাহাটির আতসবাজির দাম অনেক কম। তা ছাড়া চকোলেট তৈরির কারখানাতে একই শ্রমিকোরা ওই তুবড়ি তৈরি করছেন। সস্তায় বাজিমাত করছে বাজি। তিনটি জেনারেটর তুবড়ি তৈরিতে খরচ ১৫ টাকা। তা বিক্রি হয় ৪০ টাকায়। দেদার ‘অর্ডার’। এক মরসুমের ব্যবসায় ছাড়া যায় না, দাদা।’’
কলকাতার বড়বাজারের এক বাজি ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘ওই তুবড়ি যে নিষিদ্ধ, তা আমরা জানি না। আমরা গত বছর সরকারি বাজি বাজারের স্টল থেকে ওই তুবড়ি বিক্রি করছি। এ বারও ওই বাজি বিক্রি করা যাবে বলেই শুনেছি। এ বার পর্ষদের কর্তাদের থেকে বিষয়টি স্পষ্ট ভাবে জানাতে হবে।’’ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই আতসবাজি যে নিষিদ্ধ, তা এখনও তেমন প্রচার করা হয়নি। তবে ওই বাজি অনুমোদিত কারখানা ছাড়া তৈরির ব্যবস্থাটা বিপজ্জনক। কিন্তু বাজিটি নিষিদ্ধ নয়। আমার ওই বিষয়ে অভিযান করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy