Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পিতৃহীন কিশোরের জেদেই চক্ষুদান

ছেলের জেদ, বাবার ইচ্ছা সে পূরণ করবেই। সেই জেদের কাছে কার্যত হার মানল প্রশাসনিক জটিলতা আর টালবাহানা। মাঝরাতে মর্গ খুলিয়ে সংগ্রহ করা হল কর্নিয়া।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর  শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৪০
Share: Save:

স্কুল-পড়ুয়া ছেলের কাছে মরণোত্তর চক্ষুদানের কথা শুনে বাবা বলেছিলেন, ‘আমি মারা গেলে আমার চোখও দান করে দিস, পুড়িয়ে নষ্ট করিস না।’

ছেলের জেদ, বাবার ইচ্ছা সে পূরণ করবেই। সেই জেদের কাছে কার্যত হার মানল প্রশাসনিক জটিলতা আর টালবাহানা। মাঝরাতে মর্গ খুলিয়ে সংগ্রহ করা হল কর্নিয়া।

নদিয়ার ধর্মদায় মন্দির সংস্কারের জন্য লরিতে পাথর আনা হয়েছিল। মঙ্গলবার তা লরি থেকে নামাতে গিয়ে বুকে পাথর পড়ে গুরুতর জখম হন স্থানীয় বেনেপাড়ার বাসিন্দা সুজিত দত্ত (৪১)। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে মৃতদেহ মর্গে ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু ততক্ষণে মায়ের সঙ্গে কথা বলে তাঁর ছেলে সৌরভ ঠিক করে নিয়েছে, বাবার চোখ দান করবে।

মুড়াগাছা হাইস্কুলে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সৌরভের কথায়, “আমি স্কুলে এনএসএস করি। ওখানে চক্ষুদান নিয়ে কর্মশালা হয়েছিল। বাড়ি ফিরে বাবাকে সব বলি। বাবা বলেছিল, মরার পরে যদি আমার চোখ দিয়ে দু’জন মানুষ দেখতে পায়, তার চেয়ে বড় কী আছে? তাই এত বড় ধাক্কার মধ্যেও আমি সেই চেষ্টা করেছি।”

কাজটা শক্ত ছিল যথেষ্টই। কেননা হাসপাতাল জানায়, মৃতদেহটি যেহেতু ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, তাদের লিখিত অনুমতি ছাড়া মর্গের ভিতর থেকে কর্নিয়া সংগ্রহ করা যাবে না। যোগাযোগ করা হয় কোতোয়ালি থানার সঙ্গে। তারা বলে, আইন অনুযায়ী হাসপাতাল সুপারের কাছ থেকে লিখিয়ে আনতে হবে। এই দড়ি টানাটানিতে কেটে যায় কয়েক ঘণ্টা। সৌরভের সঙ্গে ছিলেন স্কুলের কয়েক জন শিক্ষকও। শেষমেশ জট খুলতে যোগাযোগ করা হয় কর্নিয়া সংগ্রকারী সংগঠন ‘শান্তিপুর মরমী’র সঙ্গে। তারা এসে রাত ১২টা নাগাদ মর্গের দরজা খুলিয়ে কর্নিয়া সংগ্রহ করেন।

মুড়াগাছা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিমলেন্দু সিংহরায় বলেন, “এমন একটা কাজে স্কুলের ছাত্রের পাশে থাকতে পেরে শিক্ষকেরাই গর্বিত বোধ করেছেন।” ‘শান্তিপুর মরমী’র সম্পাদক তপন মজুমদার বলেন, “ছেলেটা দৃষ্টান্ত তৈরি করল। ওর জেদ দেখে আমরাও মুগ্ধ।”

বুধবার বিকেলেই দু’জন দৃষ্টিহীনের চোখে সুজিতের দু’টি কর্নিয়া বসানো হয়ে গিয়েছে। মৃণ্ময়ীর চক্ষুদান হচ্ছে প্যান্ডেলে-প্যান্ডেলে। পিতৃশোক জয় করা এক কিশোরের মরিয়া চেষ্টায় চোখ মেলল দু’টি অন্ধজীবন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Eye donation Death চক্ষুদান
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE