Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সৌরভ-হত্যায় সব ফাঁসি রদ, বেকসুর দু’জন

বেআইনি মদ ব্যবসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সাড়ে তিন বছর আগে খুন হন বামনগাছির কলেজছাত্র সৌরভ চৌধুরী। সেই মামলায় বারাসত জেলা আদালতে আট জনের ফাঁসির সাজা হলেও কলকাতা হাইকোর্ট আট জনেরই মৃত্যুদণ্ড মকুব করে দিয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

সৌরভ চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

সৌরভ চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৫
Share: Save:

বেআইনি মদ ব্যবসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সাড়ে তিন বছর আগে খুন হন বামনগাছির কলেজছাত্র সৌরভ চৌধুরী। সেই মামলায় বারাসত জেলা আদালতে আট জনের ফাঁসির সাজা হলেও কলকাতা হাইকোর্ট আট জনেরই মৃত্যুদণ্ড মকুব করে দিয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া ও বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে-র ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার ওই আট জনের মধ্যে ছ’জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। বেকসুর খালাস পেয়েছে বাকি দু’জন। হাইকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায় জানান, আট জনের মধ্যে অমল বারুই ও সুমন দাসের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ না-মেলায় ডিভিশন বেঞ্চ তাদের অব্যাহতি দেয়। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, সৌরভ-হত্যার মূল আসামি শ্যামল কর্মকারকে ৩০ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতেই হবে।

শ্যামলের সঙ্গী সুমন সরকার, তারক দাস, সোমনাথ সর্দার, রতন সমাদ্দার ও তাপস বিশ্বাসের আইনজীবী নীলাদ্রিশেখর ঘোষ জানান, তাঁর মক্কেলদেরও ফাঁসি রদ করে যাবজ্জীবন কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। তবে ওই পাঁচ জন ১৪ বছর কারাদণ্ড ভোগ করার পরে সাজা কমানোর আবেদন জানানোর সুযোগ পাবে। পিপি জানান, সৌরভের খুনিদের আশ্রয় দেওয়ায় শিশির মুখোপাধ্যায় এবং পলি মাইতি নামে দু’জনকে পাঁচ বছর কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছিল বারাসত জেলা আদালত। নিম্ন আদালতের সেই নির্দেশ এ দিন বহাল রেখেছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।

পুলিশ জানায়, ২০১৪ সালের ৪ জুলাই রাতে উত্তর ২৪ পরগনার বামনগাছির কুলবেড়িয়ায় সৌরভের বাড়ির সামনে থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়। দেহটি টুকরো টুকরো করে রেললাইনে ফেলে রেখে যায় শ্যামল এবং তার শাগরেদরা। এলাকায় বেআইনি মদের কারবারের প্রতিবাদে নেমেই অকালে প্রাণ হারাতে হয় বিরাটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সৌরভকে। পরের দিন বামনগাছি ও দত্তপুকুরের মাঝখানে রেললাইনের উপরে তাঁর খণ্ডিত মৃতদেহ পাওয়া যায়।

সৌরভকে অপহরণ ও খুনের মামলায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। ৪০ জন সাক্ষীর বয়ান এবং তদন্তকারীদের সংগৃহীত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল আট জনকে ফাঁসির আদেশ শোনান বারাসত জেলা আদালতের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক দমনপ্রসাদ বিশ্বাস।

একসঙ্গে আট জনের ফাঁসির সেই আদেশ ঘিরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। আট জনেরই মৃত্যুদণ্ড মকুবে নিহতের বাবা-মা যুগপৎ বিস্মিত এবং আতঙ্কিত। সৌরভের বাবা সরোজ চৌধুরীর প্রশ্ন, এই রায়-বদলে ছেলেটার আত্মা শান্তি পাবে কি? নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা নিয়েও তাঁরা আতঙ্কিত। সরোজবাবু বলেন, ‘‘যারা খালাস পেয়ে গেল, তারা কি আমাদের ছেড়ে দেবে?’’ নতুন রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সৌরভের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE