লেখায় ব্যস্ত আনারকলি।নিজস্ব চিত্র।
জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। সোমবার প্রথম দিনে সবাই একটু তাড়াতাড়িই এসে পৌঁছে যাচ্ছিল পঞ্চাননতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্রে। বাবার সাইকেলে চড়ে পরীক্ষা দিতে এসে পৌঁছয় কাটোয়া কৈথন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী আনারকলি খাতুন। অন্যদের সাথে তার পার্থক্য একটাই। জন্ম থেকেই দুটি হাত না থাকায় পা দিয়েই লেখে সে।
জন্ম থেকেই হাত না থাকলেও তা কোনও দিন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেনি তার লেখাপড়ায়। দিদি আর বোনেদের পড়ার সময়ে পাশে বসে পড়ত সে। পা দিয়ে ছবি আঁকত। বোনের আগ্রহ দেখে তারা আনারকলিকে স্কুলে ভর্তি করায়। তার সর্বক্ষনের সঙ্গী বোন রবিনা খাতুন জানায়, নিজের কাজগুলির বেশিরভাগটাই নিজে করে নেয় আনারকলি। স্কুলেও সব সময় ভাল নাম্বার নিয়ে পাশ করেছে। পরীক্ষার আনারকলির সাথে একই ঘরে পরীক্ষা দিচ্ছে ফুলটুসি খাতুন, রুবিয়া খাতুনরা। তারা জানায়, আনারকলিকে দেখে তারাও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা জয় করে এগিয়ে চলার মানসিক শক্তি পায়। কৈথন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, শারিরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তার প্রভাব কোনও দিন নিজের উপরে পড়তে দেয়নি আনারকলি। পা দিয়ে লিখলেও তা বেশ স্পষ্ট ও সুন্দর বলে জানান তিনি। পঞ্চাননতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নানুকুমার ঘোষ জানান, পরীক্ষা শুরুর পরে কিছুটা সমস্যা হওয়ায় তাকে অন্য জায়গায় পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
আনারকলির বাবা নুরুল ইসলাম শেখ পেশায় দিনমজুর। পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তিনি জানান, জন্মের পর থেকে মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না তাঁর। কিন্তু মেয়েদের কথায় আর আনারকলির লেখাপড়ায় আগ্রহ দেখে তাকে স্কুলে ভর্তি করান তিনি। সব সময়ে মেয়েকে আগলে রাখতেন আনারকলির মা ফিরোজা বিবি। তাঁর স্বপ্ন ছিল মেয়েকে শিক্ষিকা হিসেবে দেখার। কিন্তু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অক্টোবরে মারা যান তিনি। তার পরেও মানসিকভাবে দুর্বল না হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রস্ততি নিয়েছে সে। শুরুর আগে কিছুটা ভয় পেলেও পরীক্ষা শেষের পরে তাকে হাসিমুখেই বের হতে দেখা গেল। বেরিয়ে বাবাকে জানালো, পরীক্ষা ভাল হয়েছে আনারকলির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy