Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চুক্তির নেপথ্যে কে, কুণালকেই দেখাচ্ছেন সৃঞ্জয়

বেআইনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে একদা তাঁর বাংলা দৈনিকেই পরের পর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। অথচ তার কিছু দিন পরেই সেই সৃঞ্জয় বসুই বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে মাসিক ৬০ লক্ষ টাকার চুক্তি করেন। এমন চুক্তির কারণ কী, তা নিয়ে রবিবার দফায় দফায় জেরা করা হয় তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয়কে। সিবিআই গত শুক্রবার ওই সাংসদকে গ্রেফতার করেছে।

সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআইয়ের জেরার পর থানার পথে সৃঞ্জয় বসু। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআইয়ের জেরার পর থানার পথে সৃঞ্জয় বসু। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
Share: Save:

বেআইনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে একদা তাঁর বাংলা দৈনিকেই পরের পর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। অথচ তার কিছু দিন পরেই সেই সৃঞ্জয় বসুই বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে মাসিক ৬০ লক্ষ টাকার চুক্তি করেন। এমন চুক্তির কারণ কী, তা নিয়ে রবিবার দফায় দফায় জেরা করা হয় তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয়কে।

সিবিআই গত শুক্রবার ওই সাংসদকে গ্রেফতার করেছে। তার পর থেকেই তাঁকে বারংবার জেরা করে তদন্তকারীরা জানার চেষ্টা করছেন, ওই চুক্তির নেপথ্যে কে বা কারা আছেন? সিবিআই সূত্রের খবর, জেরার জবাবে সৃঞ্জয় বারে বারেই জানিয়েছেন, সারদার মিডিয়ার সঙ্গে তাঁর চুক্তি হয়েছিল মূলত কুণাল ঘোষের মধ্যস্থতায়। দল থেকে সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূল সাংসদ কুণাল অবশ্য তদন্তকারীদের বলে এসেছেন, মূলত সৃঞ্জয়ই জোর করে ওই চুক্তি করিয়েছেন। এই অবস্থায় ওই দুই সাংসদকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার কথা ভাবছেন তদন্তকারীরা।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার প্রায় ১৫টি প্রশ্ন নিয়ে সৃঞ্জয়ের সামনে বসেছিলেন তদন্তকারীরা। ঘুরিয়েফিরিয়ে ওই চুক্তি সম্পর্কে সৃঞ্জয়ের সঙ্গে বিস্তারিত ভাবে কথা বলেন তাঁরা। জানতে চাওয়া হয়েছে, যে-সব ক্ষেত্রে ‘সাহায্য’ করার জন্য চুক্তি করা হয়েছিল, সেগুলো ঠিক কী?

সেই সাহায্যের জন্য মাসে কত টাকা খরচ করা হয়েছে? ৬০ লক্ষ টাকার মধ্যে সৃঞ্জয়ের লাভের অংশ কত ছিল? এত টাকার চুক্তির ক্ষেত্রে সাধারণত কিছু শর্ত থাকে। এমনকী কিছু না কিছু ‘সিকিওরিটি ডিপোজিট’ বা বন্ধকও রাখা হয়। কিন্তু সুদীপ্ত-সৃঞ্জয় চুক্তির মধ্যে তেমন কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

আইনজীবীদের মতে, এত বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে চুক্তির ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থেই শর্ত ও বন্ধক রাখাটা রেওয়াজ। তবে সেটা যে রাখতেই হবে, এমন কোনও আইন নেই। আসলে যে-দু’জনের মধ্যে চুক্তি হচ্ছে, ব্যাপারটা পুরোপুরি তাঁদের উপরেই নির্ভর করে। সিবিআই সূত্রের খবর, জেরার মুখে সুদীপ্ত একাধিক বার জানিয়েছেন যে, তাঁর উপরে জোর খাটিয়েই ওই চুক্তি করা হয়েছিল।

সুদীপ্ত-সৃঞ্জয় চুক্তি নিয়ে আরও কিছু প্রশ্ন তুলেছেন তদন্তকারীরা। কী ভাবে সুদীপ্তকে চিনলেন সৃঞ্জয়? এক সময় যে-ব্যবসায়ী বেআইনি ভাবে বাজার থেকে টাকা তুলছিলেন বলে সৃঞ্জয়ের দৈনিকে নিয়মিত প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, কেন সেই ব্যক্তির সঙ্গেই চুক্তি করলেন ওই সাংসদ? বিশেষ করে এমন একটা সময়ে সেই চুক্তি করা হয়েছিল, যার কয়েক মাস পরেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তদন্তকারীদের কথায়, সেই নির্বাচনের আগে সারদার মিডিয়ার কাছ থেকে বিপুল সমর্থন পেয়েছিল তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচনে জিতে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল তারা। তখন সৃঞ্জয়ের বাবা স্বপনসাধন বসু ছিলেন রাজ্যসভায় ওই দলের সদস্য। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে সেই বছরেই সৃঞ্জয় তাঁর বাবার জায়গায় তৃণমূলের সাংসদ হন।

সিবিআই অফিসারদের প্রশ্ন, তা হলে সারদার মিডিয়ার সঙ্গে চুক্তি কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যই করা হয়েছিল? তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে ২০১২ সালের মার্চে কালিম্পঙের ডেলোয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন সুদীপ্ত। অথচ তার মাত্র দু’মাস পরে, ২০১২ সালের মে-তে সৃঞ্জয় কেন সেই চুক্তি বাতিল করে দেন, এ দিন তা-ও জানতে চান তদন্তকারীরা।

চুক্তিতে উল্লিখিত মাসিক ৬০ লক্ষ টাকা ছাড়াও সৃঞ্জয় মাঝেমধ্যে সুদীপ্তের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ। রবিবারের জেরায় সেই টাকার প্রসঙ্গও ওঠে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, চুক্তির বাইরে কত টাকা নিয়েছিলেন তিনি? কেনই বা এত টাকা নিলেন? সেই টাকা কোথায় খরচ করেছেন? সিবিআইয়ের খবর, এ দিন বেশির ভাগ প্রশ্নেই সৃঞ্জয়ের কাছ থেকে যে-উত্তর পাওয়া গিয়েছে, তা সন্তোষজনক নয়। সৃঞ্জয় যে-সব তথ্য ও যুক্তি দিয়েছেন, তদন্তকারী অফিসারেরা তা খতিয়ে দেখছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE