এনআরএস হাসপাতালে জমা জল ও জঞ্জাল। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
ছিল ১৯। হয়ে গেল ৩৮!
গত ৯ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ করে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছিলেন, ওই দিন পর্যন্ত এ বছর রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা ১৯। হাইকোর্ট সেই রিপোর্টে সন্তুষ্ট না হয়ে বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য-সহ পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তলব করে। বৃহস্পতিবার সেই রিপোর্ট পেশ করে রাজ্য জানাল, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা ৩৮। আরও ২২ জনের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখার কাজ চলছে।
ডেঙ্গি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকে রাজ্য সরকার শেষ রিপোর্ট পাঠিয়েছে ৪ অক্টোবর। তাতেও মৃতের সংখ্যা বলা হয়েছিল ১৯। ফলে তারা হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশের পরে প্রশ্ন ওঠে, তবে মাঝের ৩৫ দিনে কি রাজ্যে ডেঙ্গিতে এক জনেরও মৃত্যু হয়নি! রাজ্য সরকার ডেঙ্গি সংক্রান্ত তথ্য ধামাচাপা দিতে চাইছে বলে আরও সরব হয় বিরোধীরা।
এ দিন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী ফের যে রিপোর্ট কোর্টে দায়ের করেছেন, তাতে বলা হয়েছে, চলতি বছরে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে ৪ জনের ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছিল। বেসরকারি হাসপাতালে মারা গিয়েছিলেন ১৫ জন। সরকারের তরফে রিপোর্ট পেশ করে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত বলেন, ৯ নভেম্বর জমা দেওয়া রিপোর্টে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যাই দেওয়া ছিল। (যদিও রিপোর্টে লেখা হয়েছিল, মৃত্যুর হিসেব রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময় পর্যন্ত)। স্বাস্থ্য অধিকর্তার রিপোর্ট অনুযায়ী, ৪ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে ১৫ জন মারা যান। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে মারা গিয়েছেন আরও ৪ জন। ফলে এ পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা ২৩।
স্বাস্থ্য অধিকর্তার দেওয়া হিসেবমতো বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা ৪ অক্টোবরের পরে আর বাড়েনি। যদিও সেখানে মৃত মোট ২২ জনের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখার কাজ চলছে। এঁদের মধ্যে ১৫ জন মারা গিয়েছেন ৪ অক্টোবরের আগে। এর পর ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে আরও ৭ জনের।
সরকারের এ দিনের রিপোর্টও হাইকোর্টকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এজি-কে জানিয়ে দিয়েছে, ডেঙ্গি নিয়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের কাজে খুশি নয় আদালত। ডেঙ্গি সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর কী করছে?’’
এজি এ দিন আদালতে জানান, জনস্বার্থ মামলাকারীরা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের উপর ভিত্তি করে অভিযোগ করছেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম, বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে তথ্য জোগাড় করে, তা বিশ্লেষণ করে মামলা করেননি। এমনকী তাঁরা এ-ও জানার চেষ্টা করেননি, বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলি ‘এলাইজা এনএস-ওয়ান’ পরীক্ষা করাচ্ছে কি না।
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম যদি এলাইজা এনএস-ওয়ান পরীক্ষা না করায়, তা হলে স্বাস্থ্য দফতর তাদের চেপে ধরছে না কেন?’’ এই প্রশ্নের সরাসরি কোনও জবাব এজি দেননি।
এজি জানান, ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালগুলিতে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮ হাজারের বেশি। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত তা বেড়ে ২১ হাজারের কিছু বেশি হয়েছে। জানুয়ারি থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ৬ হাজারের মতো ডেঙ্গি আক্রান্ত মানুষ ভর্তি হয়েছেন।
মৃত্যু খতিয়ান
সরকারি হাসপাতাল বেসরকারি হাসপাতাল মোট
৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৪ ১৫ ১৯
৮ নভেম্বর পর্যন্ত ১৯ ১৫ ৩৪
১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২৩ ১৫ ৩৮
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy