Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পাঠাগার ঢেলে সাজতে বাধা কর্মীর অভাব

কর্মী সঙ্কটের ফলে কলকাতা ও শহরতলির বহু গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ধুঁকছে আরও বেশ কয়েকটি। ফলে দ্রুত কর্মী নিয়োগ না হলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, গ্রন্থাগারগুলিই বাঁচানো সম্ভব নয় বলে দাবি কর্মীদেরই।


ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ০৮:৪০
Share: Save:

রাজ্যের গ্রন্থাগারগুলিকে ঢেলে সাজতে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। গ্রন্থাগারের চাহিদা ফেরাতে গোটা চরিত্রই বদলে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু ওটুকুই! গোড়ায় গলদ থাকার জন্য সেই পরিকল্পনা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে গ্রন্থাগার দফতরের কর্মীদের মধ্যেই।

কর্মী সঙ্কটের ফলে কলকাতা ও শহরতলির বহু গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ধুঁকছে আরও বেশ কয়েকটি। ফলে দ্রুত কর্মী নিয়োগ না হলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, গ্রন্থাগারগুলিই বাঁচানো সম্ভব নয় বলে দাবি কর্মীদেরই।

দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্ভূক্ত। সেখানেও কর্মীর অভাবে ধুঁকছে বহু গ্রন্থাগার। বই থাকলেও দেখা মেলে না পাঠকের। পাঠক টানতে সরকার যে প্রকল্পগুলি করেছে তার কোনওটাই বাস্তবায়িত করা যাচ্ছে না বলে জানান ঠাকুরপুকুরের একটি গ্রন্থাগারের কর্মী।

গ্রন্থাগার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় মোট ১৫৬টি সরকারি গ্রন্থাগার রয়েছে। জেলা গ্রন্থাগারে দশ জন, শহরের গ্রন্থাগারে চার জন এবং গ্রামের গ্রন্থাগারে দু’জন করে কর্মী থাকার কথা। ওই জেলায় মোট ৩৫৬ জন কর্মীর প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে রয়েছেন মাত্র ১৫০ জন। যার মধ্যে চলতি মাসেই অনেকের অবসর নেওয়ার কথা। ফলে আরও কিছু গ্রন্থাগারে ঝাঁপ পড়তে চলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, পাঠকের সংখ্যা কমে যাওয়ার জন্য বর্তমানে গ্রন্থাগারের চরিত্র বদলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দু’হাজারের বেশি সরকারি গ্রন্থাগারে কম্পিউটারেও পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। সরকারি কোন দফতরে কত লোক নেওয়া
হবে, সেই তথ্যও দেওয়ার কথা গ্রন্থাগারের কর্মীদের। কোন জমিতে কী চাষ ভালো হয়, সেই সংক্রান্ত বইও পাঠানো শুরু হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে স্কুলের বই বিনামূল্যে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, সেখানে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে পাঠাগারের গুরুত্ব বাড়ছে। নিকটবর্তী স্কুলগুলিতে বই পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় কর্মী সঙ্কটে সিঁদুরে মেঘ দেখছে দফতর।

কী অবস্থায় রয়েছে গ্রন্থাগারগুলি? দফতরের এক কর্তা জানান, বড়িশার সাহিত্য পরিষদ পাঠাগার কর্মীর অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ রকম ২১টি গ্রন্থাগার পুরোপুরি বন্ধ। গার্ডেনরিচের মুদিয়ালি লাইব্রেরি, মহেশতলার শম্পা মির্জানগরের সুকান্ত গ্রন্থাগার, যাদবপুরের সুরেশ স্মৃতি পাঠাগার, ঠাকুরপুকুরের সামালী লাইব্রেরি, সন্তোষপুরের রবীন্দ্রনগর লাইব্রেরী সপ্তাহে কিছু দিন খোলা থাকে। গড়িয়ার দেশগৌরব পাঠাগারে চার জনের জায়গায় রয়েছেন এক জন কর্মী। বেহালা টাউন পাঠাগারেও এখন এক জন কর্মী রয়েছেন। শীঘ্রই তাঁর অবসরের কথা। পাশাপাশি ক্যানিং, আলিপুর মহকুমার বহু জায়গায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে গ্রন্থাগার। হা‌ওড়া শহর ও শহরতলি, নামখানা, ডায়মন্ডহারবার, কাকদ্বীপ, বারুইপুরেও একই অবস্থা।

পশ্চিমবঙ্গ সাধারণের গ্রন্থাগার ও কর্মী উন্নয়ন সমিতির রাজ্য কমিটির প্রধান উপদেষ্টা মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গ্রন্থাগারগুলির উন্নয়নের স্বার্থে শীঘ্র লোক নিয়োগ প্রয়োজন।’’ গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, ‘‘রাজ্যে দু’হাজারের বেশি পদ খালি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ইতিমধ্যেই এক হাজার পদে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি দেখছেন। দ্রুত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতে পারে।’’ তিনি জানান, ১৫টি জেলার গ্রন্থাগার পরিদর্শন করা হয়েছে। রিপোর্টও তৈরি হয়ে গিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন গ্রন্থাগারে ওই এক হাজার কর্মীদের নিয়োগ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Library গ্রন্থাগার
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE