নিষেধাজ্ঞা জারিই ছিল। তবু সেই নিষেধ অমান্য করে রাজ্য সরকারের কোনও কোনও অফিসার মোদী সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছেন, তথ্য আদান-প্রদান করছেন বলে খবর। এতেই ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টিতে লাগাম টানতে এ বার তিনি নিজেই সমস্ত দফতরে ‘নোট’ পাঠিয়ে বলেছেন, তাঁকে না জানিয়ে কেউ যেন দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা না করেন।
যোগাযোগ করলে কী হবে, তা অবশ্য নোটে বলা নেই। কিন্তু সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে আসা নির্দেশ অমান্য করলে শাস্তির খাঁড়া নেমে আসতে পারে বলেই মনে করছেন আমলাদের বড় অংশ।
২১ মার্চের ওই নোটে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আগের নির্দেশ থাকার পরেও বেশ কিছু দফতরের সিনিয়র অফিসারেরা কেন্দ্রকে সরাসরি চিঠি লিখছেন, পরিসংখ্যান পেশ করছেন বা তথ্য দিচ্ছেন। যা আমরা জানতেও পারছি না। এর ফলে বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয়ের অভাব দেখা দিচ্ছে।’ এর পরেই তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা, ‘এখন থেকে কোনও দফতর, পর্ষদ, নিগম বা সোসাইটির দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার কেন্দ্রীয় সরকারকে সরাসরি কোনও চিঠি, পরিসংখ্যান বা তথ্য দিতে পারবেন না। কিছু দিতে হলে মুখ্যমন্ত্রীর অফিস ও মুখ্যসচিবের অনুমোদন ক্রমেই তা করতে হবে।’
রাজ্যের অফিসারদের দিল্লি-যোগ নিয়ে বছর দেড়েক আগে থেকেই সরব নবান্ন। মমতার দফতর প্রথম বার নির্দেশ জারি করে বলেছিল, কোনও অফিসার কেন্দ্রের ডাকা বৈঠকে যেতে চাইলে সিএমও-র অনুমতি নিতে হবে। এর পর মোদী প্রশাসন ২০১৪ ব্যাচের আইএএস-দের বাড়তি তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মাস ছয়েক আগে রাজ্যের দুই জেলাশাসক প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পুরস্কারের জন্য আবেদন করায় ধমক খেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী ‘প্রগতি’ নাম দিয়ে আমলাদের নিয়ে যে ভিডিও-বৈঠক করেছিলেন, মুখ্যসচিব তাতে অংশ নিয়েছিলেন। মমতা নিজে সেটারও বিরোধী ছিলেন। কারণ মমতার অভিযোগ, সরাসরি আমলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো লঙ্ঘন করছে। এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতেই দিল্লির সঙ্গে রাজ্যের অফিসারদের সরাসরি যোগাযোগের উপর দাঁড়ি টেনেছে সরকার। নবান্নের কর্তারা বলছেন, এত দিন দিল্লির বিরুদ্ধে দরজা বন্ধ করার অভিযোগ উঠত। এখন রাজ্যই নিজের দরজা বন্ধ করে দিতে চাইছে। মুখ্যসচিবের মাধ্যমে সেই বার্তা পৌঁছেছে অফিসারদের কাছে।
কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি দেখে এ বার নিজেই ‘নোট’ পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কাছ থেকে এ ভাবে ‘নোট’ পেতে অভ্যস্ত নন আমলারা। তাঁদের কথায়, ‘‘সরকারের কোনও নির্দেশ থাকলে সাধারণত তা জানান মুখ্যসচিব বা কর্মিবর্গ বা প্রশাসনিক সচিব। খোদ মুখ্যমন্ত্রী... নজিরবিহীন!’’
আরও পড়ুন: চুটিয়ে খান বাংলার ডিম, অভয় দিলেন খোদ মমতা
কিন্তু এর ফলে দফতরগুলির নিজেদের উদ্যোগে দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আনার চেষ্টা মার খাবে বলে মনে করছেন অনেকে। আবার দিল্লির সঙ্গে আদানপ্রদানের প্রতিটি পর্বে যদি নবান্নের শীর্ষ স্তরের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকতে হয়, তাতে কাজের জটিলতা এবং দীর্ঘসূত্রিতা বাড়বে বলেও আশঙ্কা। অফিসারদের একাংশ বলছেন, প্রতিদিন মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে কয়েকশো চিঠি জমা পড়ে। তার সঙ্গে ৫২টি দফতরের অফিসারদের (দিল্লিকে পাঠানোর জন্য) কোনও চিঠি বা রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য গেলে জটিলতা বাড়বেই। এক সচিবের কথায়, ‘‘অফিসারেরা প্রায় রোজই কোনও-না-কোনও কাজে দিল্লিতে চিঠি পাঠান। নইলে কেন্দ্রের টাকা আসবে না। সেটা নবান্নের অনুমোদন নিয়ে করতে হলে পরিণতির কথা ভেবে আশঙ্কিত হচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy