Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মায়েদের গুরুত্ব বাড়াতে পাশে স্কুল

হাওড়া যোগেশচন্দ্র গার্লস স্কুল, মিত্র ইনস্টিটিউশন (ভবানীপুর), গার্ডেনরিচের নুটবিহারী দাস গার্লস হাই স্কুল এবং যাদবপুর বিদ্যাপীঠের উদ্যোগে জেগে উঠছে শীতঘুমে যাওয়া ‘এমটিএ’ অর্থাৎ মাদার-টিচার অ্যাসোসিয়েশন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০২
Share: Save:

এক জন মা একশো শিক্ষকের সমান। সন্তানদের মানুষ করার পথে তাঁর অবদানই সর্বাধিক। মায়েদের এই অবদানকে কুর্নিশ জানিয়ে তাঁদের গুরুত্ব বাড়াতে পাঠ দিতে এগিয়ে আসছে শহরের বেশ কয়েকটি সরকারি ও সরকারপোষিত স্কুল।

হাওড়া যোগেশচন্দ্র গার্লস স্কুল, মিত্র ইনস্টিটিউশন (ভবানীপুর), গার্ডেনরিচের নুটবিহারী দাস গার্লস হাই স্কুল এবং যাদবপুর বিদ্যাপীঠের উদ্যোগে জেগে উঠছে শীতঘুমে যাওয়া ‘এমটিএ’ অর্থাৎ মাদার-টিচার অ্যাসোসিয়েশন। সর্বশিক্ষা মিশনের এক কর্তা জানান, প্রতিটি সরকারি ও সরকারপোষিত স্কুলে এই অ্যাসোসিয়েশনের অস্তিত্ব ২০১০ থেকেই। তবে বেশির ভাগ স্কুলে এর কার্যকারিতা নেই বললেই চলে।

সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পড়ুয়াদের শিক্ষিত করতে মায়েরাই ভরসা বলে মনে করছে স্কুলগুলি। অ্যাসোসিয়েশনকে সক্রিয় করতে পথ দুর্ঘটনা রোধ, দূষণ সচেতনতা, যৌন হেনস্থার মতো বিষয়গুলিও উঠে আসবে।

পিছিয়ে পড়া এলাকায় রয়েছে গার্ডেনরিচের নুটবিহারী দাস গার্লস হাই স্কুল। প্রথম পর্যায়ে সেখানে কাজ চালানোর মতো ইংরেজি শেখানো হবে। প্রয়োজনে মায়েদের অক্ষরজ্ঞানও দেওয়া হবে, যাতে সন্তান বাড়িতে প্রশ্ন করলে, সাহায্য করতে পারেন মা। সন্তান স্কুল থেকে ফিরলে তার সে দিনের পড়াশোনার বিস্তারিত খোঁজ নিন, কোনও অন্যায়ের হদিস পেলে ভুল শোধরান, মায়েদের কাছে এমন আবেদন রাখবেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

জিডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনের এক ছাত্রীর উপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে নড়ে বসেছে গোটা সমাজ। তাই ‘ব্যাড টাচ’, ‘গুড টাচ’ নিয়ে সন্তানকে কী ভাবে সচেতন করবেন মায়েরা, সে পাঠও দেবে ওই চার স্কুল। যাতে পড়ুয়া বুঝতে পারে স্কুলে বা অন্যত্র কেউ তার সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করছে কি না। আগামী প্রজন্ম সামাজিক হোক মাকে দেখে, সেই লক্ষ্যে মায়েদেরও নানা সামাজিক অনুষ্ঠান ও কাজে অংশগ্রহণ করতে শেখাবে স্কুল।

দূষণ কমাতে কী করতে হবে, মায়েদের তা-ও শেখাবে স্কুল। সাম্প্রতিক কালে পথদুর্ঘটনার বলি হয়েছে বেশ কয়েক জন পড়ুয়া। কুঁড়ি ফোটার আগেই যাতে ঝরে না পড়ে, তাই ওই স্কুলগুলি সচেতনতামূলক পদক্ষেপও রাখছে। কলকাতা পুলিশের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর প্রচারকে আরও কার্যকর করতে ট্র্যাফিক নিয়ম নিয়ে সচেতন করা হবে মায়েদের। নৈতিকতার শিক্ষাও দেওয়া হবে। সহপাঠীকে প্রতিযোগী ভাবো, কিন্তু হিংসা করবে না— এই বার্তা মায়েদের মাধ্যমে ছড়ানো হবে।

২০১৮-র শিক্ষাবর্ষ থেকে কলকাতার ওই চারটি-সহ কয়েকটি স্কুল শুরু হবে এই কাজ। মাসে তিন-চার দিন শিক্ষক এবং মায়েদের এই যোগাযোগ গড়ে তোলা হবে। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের অ্যাসোসিয়েশন আগেও সক্রিয় ছিল। এখন কাজের পরিধি প্রসারিত হচ্ছে। প্রয়োজনে মায়েদের কাউন্সেলিং হবে।’’ মিত্র ইনস্টিটিউশন (ভবানীপুর)-এর প্রধান শিক্ষক অসিতবরণ গিরি বলেন, ‘‘মায়েদের উন্নয়নের সঙ্গে জড়িয়ে সন্তানের ভবিষ্যৎ। পাশাপাশি নারীর উন্নয়নের সঙ্গে জড়িয়ে গোটা সমাজ।’’

সর্বশিক্ষা মিশনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এমটিএ-র নির্দেশিকা আগেই ছিল। লক্ষ্য ছিল, পড়ুয়াদের পঠনপাঠনে মায়েদের যুক্ত করা। কলকাতার কিছু স্কুল এগিয়ে আসছে শুনে ভাল লাগল। সব স্কুলে বাধ্যতামূলক করা যায় কি না তা নিয়ে আলোচনা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE