Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙড়ে জট ছাড়াতে ক্ষতিপূরণের ইঙ্গিত

মাস চারেক আগে ভাঙড়ে প্রশাসনিক সভা করতে গিয়ে উন্নয়নের প্রশ্নে আপস না-করার বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার পাওয়ার গ্রিড নিয়ে সমস্যা মেটাতে যে সব জমির উপর দিয়ে প্রকল্পের হাইটেনশন তার গিয়েছে, সেই সব জমি-মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পথে হাঁটতে চলেছে নবান্ন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভাঙড় ও কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৫:২১
Share: Save:

মাস চারেক আগে ভাঙড়ে প্রশাসনিক সভা করতে গিয়ে উন্নয়নের প্রশ্নে আপস না-করার বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার পাওয়ার গ্রিড নিয়ে সমস্যা মেটাতে যে সব জমির উপর দিয়ে প্রকল্পের হাইটেনশন তার গিয়েছে, সেই সব জমি-মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পথে হাঁটতে চলেছে নবান্ন।

ভাঙড়-জট নিয়ে শুক্রবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাঙড়ের নেতাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক পূর্ব নির্ধারিত ছিল। যে সব জমির উপর দিয়ে পাওয়ার গ্রিডের হাইটেনশন লাইন গিয়েছে, সেই সব জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ভাবনাচিন্তা করছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’

বৃহস্পতিবারই গ্রিড-বিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের বোমার লড়াইয়ে তেতে উঠেছিল ভাঙড়ের পোলেরহাট। পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য শোভন ছাড়াও ভাঙড়ের বিধায়ক তথা মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা, নেতা আরাবুল ইসলাম, কাইজার আহমেদ এবং নানু হোসেনকে ডেকে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী।

সূত্রের খবর, পাওয়ার গ্রিড সমস্যা মেটাতে দলের নেতাদের একজোট হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইমতো তড়িঘড়ি আজ, শনিবারই কাশীপুর থেকে অনন্তপুর পর্যন্ত একসঙ্গে মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেন জেলা তৃণমূল নেতারা। মুখ্যমন্ত্রী গ্রিড সংলগ্ন খামারআইট ও মাছিভাঙা গ্রামে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করারও নির্দেশ দেন। ওই দু’টি গ্রামে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানোর জন্য আবেদন জানান তৃণমূল নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, ওখানে বাসিন্দাদের ভয় দেখিয়ে আন্দোলনে সামিল করতে চাইছেন নকশাল নেতারা।

ভাঙড় তৃণমূলের একাংশের মতে, অবিলম্বে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে লাগাম টানা না-গেলে ১২০০ কোটি টাকার ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের জট যে সহজে কাটবে না, তা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন। চলতি বছরের গোড়ায় গ্রিড-বিরোধী আন্দোলন যখন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল, তখন গ্রামবাসীরা বারবার আরাবুল ইসলাম-সহ কিছু তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন। তার পর থেকে গ্রিডের কাজ থমকেই। সে দিকে নজর না-দিয়ে কখনও আরাবুল, রেজ্জাক ও কাইজারের অনুগামীরা পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে সেই দ্বন্দ্বে লাগাম টেনে উন্নয়নকেই ‘পাখির চোখ’ করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।

জেলা পুলিশকর্তাদের একাংশও মনে করছেন, কিছু তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েই গ্রামবাসীদের আন্দোলনে নামতে পেরেছেন নকশাল নেতারা। টাকা ঢেলে জমি-মাফিয়ারাও যে তাঁদের মদত দিয়েছে, তদন্তে এ তথ্যও পেয়েছিল পুলিশ। এখনও জমি-মাফিয়ারা সক্রিয় বলে দাবি তাঁদের। তাঁরা মনে করছেন, প্রকল্প আটকানো গেলে জমি-মাফিয়াদের পক্ষে জমি হাতানো সহজ হবে। কিন্তু নেতারা একজোট হলে জমি-মাফিয়ারা ততটা সুবিধে করতে পারবে না।

আন্দোলনকারীরা অবশ্য তাঁদের অবস্থানে অনড়। বৃহস্পতিবারের ‘হামলা’র প্রতিবাদে এ দিন নতুনহাট থেকে ডিবডিবা পর্যন্ত মিছিল করেন তাঁরা। নকশাল নেতা অলীক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুলিশ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে। মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণের কথা বলছেন। কিন্তু পাওয়ার গ্রিড বন্ধ করার কথা বলছেন না।’’ বামফ্রন্টের বৈঠকের পর চেয়ারম্যান বিমান বসুও জমি কমিটির মিছিলে ‘হামলা’র প্রতিবাদ জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE