বিকল্প শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্র বাড়াতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই জন্য এ বার সেচ খালের উপরে অথবা তার পাড়ে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প (ফোটোভোলটাইক) গড়লে মোটা টাকা ভর্তুকি দেবে তারা। এতে উৎসাহিত হয়ে উত্তর দিনাজপুরের হাপতিয়াগাছ এলাকায় তিস্তা খালের ধারে ১০ মেগাওয়াটের একটি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়াছে রাজ্য সরকার। ওই প্রকল্পের সঙ্গে রাজ্যের গ্রিডের সরাসরি যোগ থাকবে।
সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এখন সেচসেবিত এলাকাকেই বেছে নিচ্ছে কেন?
রাজ্য সরকারের এক মুখপাত্র জানান, সেচসেবিত এলাকায় এই ধরনের প্রকল্প গড়ে তোলার অন্তত দু’টি বিশেষ উপযোগিতা আছে। ওই সব এলাকায় প্রকল্প নির্মাণ করলে রাজ্যগুলিকে নতুন করে
জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না। সেচ খালের জন্য নেওয়া জমিতেই প্রকল্পের কাজ চলে যাবে। তা সে ‘ক্যানাল ব্যাঙ্ক’ বা খালের পাড় প্রকল্পই হোক বা ‘ক্যানাল টপ’ বা খালের উপরের প্রকল্প। সেচখালের উপরে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করলে খালের জল রোদের তাপ এড়াতে পারবে অনেকটাই। প্রকল্পের ছাউনির আড়ালে থাকায় বাষ্প হয়ে সেই জল উড়ে যাবে না।
রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, তিস্তা খালের উপরে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পটি গড়বে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। প্রাথমিক সমীক্ষা শেষ করে ওই প্রস্তাবিত প্রকল্পের ব্যাপারে অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রকের কাছে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। তারা প্রকল্পটি অনুমোদন করেছে। এর জন্য ভর্তুকি বাবদ রাজ্যকে ১৫ কোটি টাকা দেবে তারা।
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের মান উন্নত করাই এখন কেন্দ্রের লক্ষ্য। সেই জন্য জাতীয় গ্রিডে তাপবিদ্যুতের সঙ্গে অন্যান্য বিদ্যুতের মিশ্রণের হার বাড়াতে চাইছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এই প্রক্রিয়ায় গ্রিডের বিদ্যুতের মান আরও ভাল হয়। সেই জন্যই জলবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎ, সৌর বিদ্যুতের মতো ‘বিকল্প’ শক্তি উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহ দিচ্ছে কেন্দ্র। রাজ্যগুলির কাছে এই মর্মেই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। ২০১৭ সালের মধ্যে বিভিন্ন রাজ্যের সেচ খালের উপরে বা পাড়ের জমিতে কমপক্ষে ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রক।
এ রাজ্যে সেচ খালের উপরে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রথম পরিকল্পনা করেছিল ডিভিসি। বিশ্ব ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় বর্ধমানের খণ্ডঘোষে ১৫ মেগাওয়াটের ওই প্রকল্প গড়ার কথা ভাবা হয়েছিল। সম্প্রতি প্রকল্পটি স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে তা গড়ে তোলা হতে পারে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড মিলিয়ে ডিভিসি-র প্রায় ২৫০০ কিলোমিটার সেচ খাল রয়েছে।
উত্তর দিনাজপুরের হাপতিয়াগাছে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পটি অবশ্য খালের উপরে নয়, পাড়ে গড়ে তোলা হবে। তার জন্য ৫০ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজ্যের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক কর্তা জানান, ওই প্রকল্পের
একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সংস্থা সৌর শক্তি নিগমের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক কাজের জন্য ছ’কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে নিগমের কাছে। তবে প্রকল্প রূপায়ণে মোট খরচ হবে ৭০ কোটি টাকা।
বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘কেন্দ্রের প্রস্তাব মেনে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ু সরকারই এই ধরনের প্রকল্প গড়ছে। আগামী মার্চের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার চেষ্টা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy