ঠাণে পারে। বেঙ্গালুরু পারে। কলকাতা পারে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় অপ্রচলিত শক্তির হাত ধরেছে দেশের অনেক রাজ্যই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এই ক্ষেত্রে এখনও পিছিয়ে। অথচ এ দেশে অপ্রচলিত শক্তি অর্থাৎ সৌর বিদ্যুতের পথিকৃৎ বাংলাই। কিন্তু এখন অবস্থা এমনই যে, আগামী দিনেও পশ্চিমবঙ্গ এই নিয়ে কতটা এগোতে পারবে, তার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না পরিবেশ দফতরের কর্তারা।
মঙ্গলবার কলকাতার একটি হোটেলে জলবায়ু বদলের মোকাবিলা নিয়ে আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছিল বণিকসভা সিআইআই। সেখানেই অপ্রচলিত শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের ক্রমশ পিছিয়ে পড়ার কথা উঠে আসে। অগ্রগতি নেই কেন, তার বিশ্লেষণও করেন কেউ কেউ। শিল্পকর্তা ও পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, অপ্রচলিত শক্তি নিয়ে নীতিগত খামতির জন্যই পিছিয়ে পড়ছে রাজ্য। অর্থাৎ পথিকৃৎ হলেও গলদটা থেকে গিয়েছে গোড়াতেই।
ঠাণের উদাহরণ টেনে এর দাওয়াইয়ের সুলুকসন্ধান দিয়েছেন সিআইআই-এর ডেপুটি এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর কে এস বেঙ্কটগিরি। আলোচনাসভার বাইরে তিনি বলেন, “অপ্রচলিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজন নীতিগত কঠোরতা।” কী ধরনের কঠোরতা? “কয়েক বছর আগে ঠাণে পুর এলাকায় বাড়ির কর তিন গুণ দেওয়া হয়। তার পরে বলা হয় বাড়ির ছাদে সোলার থার্মাল হিটার বসালে করের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ ছাড় মিলবে,” বললেন বেঙ্কটগিরি। সেই দাওয়াইয়ের ফল কী দাঁড়াল? বেঙ্কটগিরি জানান, এক বছরের মধ্যে ওখানে প্রায় সব বাড়িতেই সোলার হিটার বসে গেল!
কলকাতায় এটা হয় না কেন?
পরিবেশবিদদের অনেকেই বলছেন, কলকাতা পুর এলাকাতেও বহুতলের ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না।
শুধু কলকাতা নয়, সামগ্রিক ভাবে রাজ্যই যে এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে, ঠারেঠোরে তা মেনে নিয়েছেন পরিবেশকর্তারাও। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত জানান, বাংলায় এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত কর্মীই নেই। এর পাশাপাশি অপ্রচলিত বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়েও মানসিকতার সমস্যা আছে। সেটা যেমন আছে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে, তেমনই ব্যবসায়ী সংস্থা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেও। অনেকেই এক বারে বেশি খরচের ভয়ে এই ধরনের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা চালু করতেই চান না। তার উপরে বাজারে এই ধরনের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সহজে পাওয়া যায় না বলেও অনেকের অভিযোগ।
এর পাল্টা যুক্তিও আছে। অনেকে বলছেন, বাজারে চাহিদা নেই বলেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সহজে পাওয়া যায় না। লোকজনের মধ্যে এর চাহিদা বাড়লে ব্যবসায়ীরাও এই ধরনের যন্ত্রপাতি বিক্রি করতে উৎসাহিত হবেন। “এটা অনেকটা ডিম আগে না মুরগি আগের মতো অবস্থা! আসলে দু’টোই পরস্পরের উপরে নির্ভরশীল। আর সরকারি নীতির প্রয়োজনটা এখানেই,” বলছেন বেঙ্কটগিরি।
কিন্তু সেই জরুরি নীতিটা এ রাজ্যে আদৌ চালু হবে কি?
পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার জানান, সৌর শক্তির ব্যবহার বাড়াতে ইতিমধ্যেই তাঁরা কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে স্কুল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র মিলিয়ে ১০০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে। ওই সব প্রতিষ্ঠানে পাঁচ কিলোওয়াট করে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের যন্ত্র বসানো হবে। কাজ শুরু হবে নভেম্বরে।
কিন্তু সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের যন্ত্র বসানো আবশ্যিক করতে কলকাতা পুরসভা কঠোর হবে কি?
প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy