Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ঘেরাও-বিক্ষোভ চলবে না, ছাত্র-শিক্ষকদের কড়া বার্তা পার্থর

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘেরাও-বিক্ষোভ, বিশৃঙ্খলার আবহের মধ্যেই দলের ছাত্র ও শিক্ষক সংগঠনকে সংযত থাকার বার্তা দিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার তৃণমূল ভবনে শঙ্কুদেব পণ্ডা-সহ টিএমসিপি নেতৃত্বের সঙ্গে এক বৈঠকে পার্থবাবু তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে দেন। জানিয়ে দেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘেরাও-বিক্ষোভ করা চলবে না। বহিরাগতদের যখন তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢোকা চলবে না। এ দিনই দলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র অনুষ্ঠানে শিক্ষকদেরও পার্থবাবু ‘খবরদারি’ না করার পরামর্শ দেন।

শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফেরাব ওয়েবকুপা-র উপস্থিতিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে এই আশ্বাসই কি দিচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী? সোমবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সংবর্ধনায়। —নিজস্ব চিত্র

শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফেরাব ওয়েবকুপা-র উপস্থিতিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে এই আশ্বাসই কি দিচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী? সোমবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সংবর্ধনায়। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৭
Share: Save:

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘেরাও-বিক্ষোভ, বিশৃঙ্খলার আবহের মধ্যেই দলের ছাত্র ও শিক্ষক সংগঠনকে সংযত থাকার বার্তা দিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

সোমবার তৃণমূল ভবনে শঙ্কুদেব পণ্ডা-সহ টিএমসিপি নেতৃত্বের সঙ্গে এক বৈঠকে পার্থবাবু তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে দেন। জানিয়ে দেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘেরাও-বিক্ষোভ করা চলবে না। বহিরাগতদের যখন তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢোকা চলবে না। এ দিনই দলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র অনুষ্ঠানে শিক্ষকদেরও পার্থবাবু ‘খবরদারি’ না করার পরামর্শ দেন।

মাত্র মাস দুয়েক আগে শিক্ষা দফতরের দায়িত্ব পেয়েছেন পার্থবাবু। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক বিশৃঙ্খল ঘটনায় তাঁকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে। বিভিন্ন কলেজে ছাত্রভর্তিকে কেন্দ্র করে অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে টাকাপয়সা লেনদেনের। আবার সম্প্রতি টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব দলবল-সহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বৈঠকের বাইরে যে তাণ্ডব চালিয়েছেন, তাতে তৃণমূলেরই অনেকে বিব্রত বোধ করেছেন। পাশাপাশি কৃষ্ণকলি বসু-র নেতৃত্বে ওয়েবকুপা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ঘিরে যে ভাবে বিক্ষোভ দেখিয়েছে, তাতেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেরই ধারণা, এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতে পার্থবাবু এ দিন মূলত শঙ্কুদেব এবং কৃষ্ণকলিদেবীকে উদ্দেশ করেই যা বলার বলেছেন। এ দিন দলের ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্ন জেলার টিএমসিপি নেতাদের সঙ্গে তৃণমূল ভবনে বৈঠক করেন পার্থবাবু। সেখানে শঙ্কুদেবের উপস্থিতিতেই তিনি জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। সমস্যা হলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধিরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। বহিরাগতরা কোনও ভাবেই প্রতিষ্ঠানে ঢুকবেন না। প্রয়োজনে বহিরাগতদের চার-পাঁচ জনের প্রতিনিধি কলেজ অধ্যক্ষ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমতি নিয়ে ভিতরে ঢুকে নিজেদের বক্তব্য জানাতে পারেন। কিন্তু অধ্যক্ষ বা উপাচার্যদের ঘেরাও করা যাবে না। বিনা অনুমতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ঢুকে হামলা চালানোটা তিনি বরদাস্ত করবেন না বলে পার্থবাবু তাঁর দলের ছাত্র নেতাদের জানিয়ে দেন। ছাত্র ভর্তির ব্যাপারেও হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে তাঁদের পরামর্শ দেন তৃণমূলের মহাসচিব।

এ দিনই আবার বিকেলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট হলে শিক্ষামন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয় ওয়েবকুপা। সেখানে মন্ত্রী বলেন, “খুব খারাপ লাগে যখন গোলমাল হতে দেখি। একসঙ্গে বসে আলোচনার কি সুযোগ নেই? সরাসরি মন্ত্রীর কাছে তো কেউ বিক্ষোভ দেখাতে যান না। তা হলে উপাচার্যের কাছে যান কেন?”

গত মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙা ভবনের দোতলায় সিন্ডিকেট বৈঠকের বাইরে দল নিয়ে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা চালাতে দেখা গিয়েছিল টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডাকে। ১৫ জুলাই স্মারকলিপি দিতে গিয়ে ওই সেনেট হলেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় ওয়েবকুপা। উপাচার্যের কর্তব্য স্মরণ করিয়ে আঙুল উঁচিয়ে কার্যত শাসানি দেন সংগঠনের সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসু। এ দিন শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও সংযত আচরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর কথায়, “ওয়েবকুপা-কে বলব নজরদারি রাখতে। কিন্তু খবরদারি যেন না করা হয়।” পরে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “প্রতিষ্ঠানে ক্লাস হচ্ছে কি না, কোথাও কোনও সমস্যা আছে কি না, সে সব দেখুন শিক্ষকেরা। কর্তৃপক্ষকে জানান। কিন্তু খবরদারি করা চলবে না।”

শিক্ষামন্ত্রীর এই বার্তায় তাঁদের প্রতিক্রিয়া কী? শঙ্কুদেব পণ্ডা বলেন, “শিক্ষামন্ত্রীর কথা শিরোধার্য। টিএমসিপি ঘেরাও করে না, অবস্থান করে।” কৃষ্ণকলিদেবীর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, “কী আর বলব? উনি যা বলেছেন, মেনে চলব!” নেতা-নেত্রীরা মুখে যাই বলুন, বাস্তবে তাঁরা মন্ত্রীর কথা কতটা মেনে চলবেন, তা নিয়ে শিক্ষানুরাগীদের অনেকেরই সংশয় আছে। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই কথাটা যে বলতে পেরেছেন, তার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে অভিনন্দন! কিন্তু তাঁর এই কথা যে দলের নেতা-নেত্রীরা মেনে চলবেন, এমন ভরসা পাচ্ছি না।” আইআইএম, কলকাতার শিক্ষক অনুপ সিংহ আরও সংশয়ী। তিনি বলেন, “মন্ত্রী হলে কিছু কথা বলার দরকার হয়, তা-ই বলেছেন। কিন্তু এই কথাতেই একটা বড় দলের সংস্কৃতি বদলে যাবে বলে মনে হয় না।”

বস্তুত পার্থবাবুর নিজের বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্যেও কিছুটা স্ববিরোধ রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। এ দিন আশুতোষ কলেজের একটি অনুষ্ঠানে পার্থবাবুর উপস্থিতিতেই বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। চলতি মাসে উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়াতে আইন পরিবর্তন করেছে সরকার। তখন পার্থবাবু সরাসরি বলেন, সরকারি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন আছে। সরকার আর দল এক নয়। এ দিন আশুতোষ কলেজে পার্থবাবু কিন্তু উপাচার্য প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে অনলাইন ভর্তির প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি দাবি করেন, কলেজগুলির স্বাধিকার রক্ষার স্বার্থে রাজ্য কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন ভর্তি চালু করেনি।

অথচ ছাত্র সংসদের যে দাদাগিরি এবং উচ্ছৃঙ্খল আচরণের সমালোচনা এ দিন পার্থবাবু করেছেন, কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন ভর্তি চালু হলে সেটা অনেকটা ঠেকানো যেত বলে শিক্ষা মহল মনে করে। ঠেকানো যেত ভর্তিকে কেন্দ্র করে টাকার লেনদেন। তা না করে সরকারই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতির ছড়ি ঘোরানোর পথ আরও প্রশস্ত করেছে বলে অভিযোগ। পার্থবাবু এখন এক দিকে টিএমসিপি-ওয়েবকুপাকে সংযত হতে বলছেন, অন্য দিকে স্বাধিকারের যুক্তি দিয়ে কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন ভর্তির সিদ্ধান্ত স্থগিত করার সপক্ষেই কথা বলছেন। এর মধ্যে স্ববিরোধ দেখছেন শিক্ষা জগতের একাংশ। শিক্ষানুরাগীদের অনেকের মত হলো, উপাচার্য নিয়োগে সরকারি নিয়ন্ত্রণ না রেখে ছাত্রভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা প্রয়োজন ছিল। সরকার ঠিক উল্টো কাজটাই করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

partha chattopadhyay gherao agitation suranjan das
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE