Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

হাজারো বাধায় সম্বল বলতে শুধু মনের জোর

কারও হাত ভেঙেছে। কারও হাত নেই-ই। কারও প্রতিবন্ধকতা দারিদ্র। তবু এগোচ্ছেন ওঁরা। স্বপ্ন দেখছেন, দেখাচ্ছেন।কারও হাত ভেঙেছে। কারও হাত নেই-ই। কারও প্রতিবন্ধকতা দারিদ্র। তবু এগোচ্ছেন ওঁরা। স্বপ্ন দেখছেন, দেখাচ্ছেন।

আবিরচন্দ্র কর্মকার (টাকি বয়েজ স্কুল) —নিজস্ব চিত্র

আবিরচন্দ্র কর্মকার (টাকি বয়েজ স্কুল) —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০৩:৪৫
Share: Save:

মায়ের জন্যই
টাকি বয়েজ স্কুলের আবিরচন্দ্র কর্মকার মামাবাড়িতে থেকে মানুষ। জন্মের পর থেকে বাবাকে পাশে পাননি তিনি। পথ দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম হন আবিরের বাবা। প্রাণে বেঁচে গেলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তারপর থেকেই লড়াই শুরু আবিরের মায়ের। ভাইদের সংসারে থেকে বাড়ি-বাড়ি ছাত্র পড়িয়েই ছেলেকে মানুষ করেছেন। ছেলে ৯০% নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন উচ্চ মাধ্যমিক। মা জানাচ্ছেন, ‘‘ওকে আরও অনেক দূর এগোতে হবে! দুঃখ একটাই। ওর বাবা কিছু বুঝতে পারল না।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরেশকুমার নন্দ বলেন, মাধ্যমিকে ৮৫%-এর কাছাকাছি পেয়েছিল আবির। তার পর থেকেই পরিশ্রম বাড়িয়ে দেয়। উচ্চমাধ্যমিকে এই সাফল্য এসেছে তারই ফলে।

ভাঙা হাতেই পরীক্ষা
বাংলা পরীক্ষার পরের দিন ছুটি থাকায় খেলতে বেরিয়েছিলেন অনিরুদ্ধ। পড়ার ফাঁকে এই খেলতে যাওয়াই কাল হল। পড়ে গিয়ে ভেঙে গেল ডান হাতের তিনটি হাড়। ভাঙা হাতে প্লাস্টার করিয়েই পরের দিন ‘রাইটারে’র সাহায্যে ইংরেজি পরীক্ষা দিলেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র অনিরুদ্ধ কুণ্ডু। কিন্তু ‘রাইটার’ নিয়ে বিজ্ঞানের পরীক্ষা কী করে হবে? কড়া পেন-কিলার খেয়ে অগত্যা নিজেই পরীক্ষা দিলেন। ৮৯% পেয়েছেন অনিরুদ্ধ। ভাঙা হাতে হাত বুলিয়ে বললেন, ‘‘রাইটার নিতে হলে নবম বা দশম শ্রেণির কাউকে নিতে হতো। সে ক্ষেত্রে দ্বাদশ শ্রেণির অঙ্ক রাইটারের মাধ্যমে করতে হলে সমস্যা হতো।’’ হাড় এখনও সম্পূর্ণ জোড়া লাগেনি। এরই মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জয়েন্টে বসবেন অনিরুদ্ধ। পাখির চোখ অবশ্য ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি এন্ট্রান্স টেস্ট। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নই মনের জোর বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুণ।


১। সোনামণি মণ্ডল (অলিগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়) ২। জগন্নাথ মাহাড়া (সিউড়ি জেলা স্কুল, বীরভূম) ৩। অনিরুদ্ধ কুণ্ডু (নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন) —নিজস্ব চিত্র

স্বাবলম্বী সোনামণি
নিজের পড়ার খরচ জোগাতে টিউশনি করতেন পশ্চিম মেদিনীপুরের অলিগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী সোনামণি মণ্ডল। বাবা ভরতচন্দ্র মণ্ডল ছুতোর মিস্ত্রি, মা সন্ধ্যারাণী অন্যের বাড়িতে রান্না করে সংসার চালান। অভাবের ঘরে খুশির বাঁধ ভেঙেছে সোমবার। ৮৮% পেয়ে কলা বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন সোনামণি। “মাধ্যমিকের ফল দেখেই ঠিক করেছিলাম, আরও ভাল পড়াশোনা করতে হবে। পরিস্থিতি সঙ্গ দেয়নি। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে থেকেও লড়াই চালিয়ে গিয়েছি,” বললেন সোনামণি। ইংরেজি নিয়ে স্নাতক হতে চান। ইচ্ছা আইপিএস অফিসার হওয়ার। কী ভাবে খরচ জুটবে পড়াশোনার? ‘‘হাল ছাড়ব না,’’ আত্মবিশ্বাসের সুর মেদিনীপুরের লড়াকু মেয়ের গলায়।

অন্য জগন্নাথ

জন্ম থেকেই দু’হাত নেই। অভাবের সংসারে আছে বলতে কেবল ওঁর অদম্য ইচ্ছা। দাদাকে পড়তে দেখে মায়ের কাছে বায়না ধরত বীরভূমের ছোট্ট ছেলেটি। কিন্তু দু’হাতই যার নেই তার লেখাপড়া কি সম্ভব? সিউড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র জগন্নাথ মাহাড়া হঠাৎ একদিন পায়ের আঙুলের ফাঁকে পেনসিল গুঁজে আঁকিবুঁকি কাটতে শুরু করেছিলেন। পায়ে লিখেই উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি নম্বর নিয়ে পাশ করলেন তিনি। ‘‘নম্বরের বিচারে জগন্নাথ হয়তো খুব বেশি পায়নি। কিন্তু শারীরিক প্রতিকূলতা ও অনটনকে হারিয়ে ওর লড়াই কুর্নিশ করার মতো,’’ বলছেন প্রধান শিক্ষক অশোককুমার সাহা। দু’বছর আগেই জগন্নাথের বাবা মারা গিয়েছেন। মা ছায়াদেবী লোকের বাড়িতে রান্না করেন। লটারির টিকিট বিক্রি করে সামান্য টাকার জোগান দিতেন জগন্নাথও। মা বললেন, ‘‘ও যে পাশ করেছে, তাতেই আমি খুশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

determination Students HS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE