Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

স্কুল থেকে নামল কচিকাঁচা পড়ুয়ারা

দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে তো বটেই। তাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, জাপান, ভুটান থেকেও পাহাড়ের নামকরা আবাসিক স্কুলগুলোতে পড়তে আসে ছাত্রছাত্রীরা। বন্‌ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই তাদের অভিভাবকেরা চিন্তায় ছিলেন।

আদর: পাহাড় থেকে ফিরেই মাকে জড়িয়ে ধরল পড়ুয়া। শিলিগুড়িতে শুক্রবার। এএফপি

আদর: পাহাড় থেকে ফিরেই মাকে জড়িয়ে ধরল পড়ুয়া। শিলিগুড়িতে শুক্রবার। এএফপি

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৭ ০৪:৪৬
Share: Save:

পাহাড়ের বুকে অন্ধকার তখনও পুরো কাটেনি। আলোয় ভরে উঠল একরাশ কচিকাঁচা পড়ুয়ার মুখ।

আট দিন ধরে চলছে মোর্চার ডাকা অনির্দিষ্ট কালের বন্‌ধ। তার মধ্যেই শুক্রবার ভোর ছ’টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের পাহাড় ছাড়ার জন্য ছাড় দিয়েছিল মোর্চা। দার্জিলিং, কার্শিয়াঙের বিভিন্ন স্কুলের হস্টেল থেকে তাই রাত থাকতে থাকতেই সমতলে নামার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। রাত তিনটে নাগাদই স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বাস, ছোট গাড়ি করে পড়ুয়ারা নামতে শুরু করে। শিলিগুড়ির কাছে দাগাপুরের একটি পার্কের সামনে অপেক্ষা করছিলেন অভিভাবকেরা।

দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে তো বটেই। তাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, জাপান, ভুটান থেকেও পাহাড়ের নামকরা আবাসিক স্কুলগুলোতে পড়তে আসে ছাত্রছাত্রীরা। বন্‌ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই তাদের অভিভাবকেরা চিন্তায় ছিলেন। যে কোনও সময় পাহাড় অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠলে তার আঁচ হস্টেলগুলোতেও পড়তে পারত। তার উপরে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে উদ্বেগ আরও ছড়িয়ে পড়ে। ডিমাপুর থেকে আসা জোসেফ ইয়েম বলেন, ‘‘ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক সময় যোগাযোগই করা যাচ্ছিল না। কী দুশ্চিন্তা হচ্ছিল, বুঝতে পারছেন?’’

ভোর থেকে অপেক্ষা করছিলেন বাংলাদেশ থেকে আসা মহম্মদ ফরিউদ্দিন, শিরনি বিবির মতো অনেকে। সারা রাত কেটেছে অনিদ্রায়। কেউ মুখে কিছু তুলতে পারেননি রাতভর। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা আনোয়ার শেখ বললেন, ‘‘এই রাতের কথা ছেড়েই দিন। গত এক সপ্তাহ ঘুমোতে পারিনি। কত দিন পরে মেয়ের মুখ দেখব। উত্তেজনায় কিছু খেতেও পারিনি।’’

ভোর ছ’টা নাগাদ পড়ুয়াদের নিয়ে দু’একটা করে গাড়ি শিলিগুড়িতে পৌঁছয়। দূর থেকে বাস দেখতে পেয়েই খুশিতে ফেটে পড়েন অনেকে। কচিকাঁচাদের ঘুমভাঙা, উদ্বিগ্ন মুখচোখ খুশিতে ভরে উঠল। তখন দাগাপুরে কেউ চোখের জল মুছে হাসছেন। কেউ তড়িঘড়ি ছেলেমেয়েকে নিয়ে ট্রেন বা বাস ধরতে রওনা হলেন।

এ দিন বাস, জিপ, ছোটগাড়ি সব মিলিয়ে শতাধিক গাড়িতে করে আবাসিক স্কুলগুলোর পড়ুয়াদের পাহাড় থেকে নামানো হয়। বিভিন্ন স্কুল সূত্রেই খবর, ২৪ জুন থেকে তাদের নিয়মমাফিক ছুটি হওয়ার কথাই ছিল। কিন্তু তার মধ্যে বন্‌ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছিলেন তাঁরা। বন্‌ধে ছাড় না দেওয়া হলে সমস্যা হতো।

বন্‌ধের জের হস্টেলে পড়তে শুরু করেছিল। দশম শ্রেণির এক ছাত্রী জানায়, দিন তিনেক ধরে মাছ-মাংস মিলছিল না। যা শুনে অনেক অভিভাবকই প্রথমে ছেলেমেয়েকে নিয়ে ছোটেন খাবারের দোকানে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Darjeeling Unrest GJM Indefinite Strike School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE