Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
পশ্চিম এগিয়ে দ্বিতীয় স্থানে

সেরার ধারাবাহিকতা ধরে রাখল পূর্ব

মাধ্যমিকের পর এ বার উচ্চ মাধ্যমিক। পাশের হারে রাজ্যের মধ্যে ফের শীর্ষে পূর্ব মেদিনীপুর। শুধু তাই নয়, গত বছরের তুলনায় এ বার পাশের হার বেড়েছে অনেকটাই। আর এ সব কিছুর পিছনে এলাকার উন্নয়ন যেমন রয়েছে, তেমনই পরীক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনও অনেকাংশ সহায়ক হয়েছে বলে মানছেন শিক্ষকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০০:২২
Share: Save:

মাধ্যমিকের পর এ বার উচ্চ মাধ্যমিক। পাশের হারে রাজ্যের মধ্যে ফের শীর্ষে পূর্ব মেদিনীপুর। শুধু তাই নয়, গত বছরের তুলনায় এ বার পাশের হার বেড়েছে অনেকটাই। আর এ সব কিছুর পিছনে এলাকার উন্নয়ন যেমন রয়েছে, তেমনই পরীক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনও অনেকাংশ সহায়ক হয়েছে বলে মানছেন শিক্ষকরা।

সারা রাজ্যে গড় পাশের হার যেখানে ৮২.৩৮ শতাংশ, সেখানে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় পাশের হার ৯১.৬৫ শতাংশ। রাজ্য মেধা তালিকায় অবশ্য পূর্ব মেদিনীপুরের কোনও স্কুল স্থান পায়নি। তবে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র হিসাবে ১ থেকে ১০-এর মধ্যে রয়েছে জেলার তিন ছাত্র। কিন্তু পাশের হার এ ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় খুশি জেলার স্কুলগুলি।

এ বারের ফলে জেলায় ছেলেদের থেকে মেয়েদের পাশের হার বেশি। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৫০ হাজার ৮১৩ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ৪৫ হাজার ৮৩৯ জন। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ২৪ হাজার ৮৩৩ জন। এ দের মধ্যে পাশ করেছে ২২ হাজার ৩৮ জন। অর্থাৎ ছেলেদের পাশের হার ৮৮.৭৪ শতাংশ। অন্যদিকে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৯৮০ জন। পাশ করেছে ২৩ হাজার ৮০১ জন। অর্থাৎ মেয়েদের পাশের হার ৯১.৬১ শতাংশ। অর্থাৎ জেলায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের গড় পাশের হার প্রায় তিন শতাংশ বেশি।

মাধ্যমিকের মতো এ বার জেলায় উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার রাজ্যের মধ্যে প্রথম হওয়ায় খুশি জেলার শিক্ষামহল। তবে মেধা তালিকায় জেলার স্কুল থেকে কেউ স্থান না-পাওয়ার আক্ষেপও রয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন এ দিন বলেন, ‘ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের অভিননন্দন। তবে আমাদের জেলার স্কুলগুলি থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা রাজ্যের মেধা তালিকায় স্থান পেলে আরও ভাল হত।’’

নন্দীগ্রাম বিএমটি শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক বাপ্পাদিত্য মাইতি বলেন, ‘‘সামগ্রিক ভাবে আমাদের জেলার ছাত্রছাত্রীদের ফলাফল ভাল হওয়ায় আমরা খুবই খুশি। ছাত্রছাত্রীদের এই সাফল্য আমাদের আরও উৎসাহিত করবে। তবে আমাদের জেলার ছাত্রছাত্রীদের রাজ্যের মেধা তালিকায় স্থান পেলে খুব ভাল হত।’’

পাঁশকুড়ার ঘোষপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুপ্রতিম মান্না বলেন, ‘‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হারে কলকাতাকে পেছনে ফেলে রাজ্যের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে তাঁর প্রমাণ দিয়েছে। তবে মেধা তালিকায় স্থান পেতে আরও কঠিন প্রতিযোগিতার মানসিকতা নিতে হবে।’’

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিকে জেলার সাফল্যে আমরা খুশি । স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের আরও ভাল ফল করার জন্য আমাদের আরও বেশী মনযোগী হতে হবে।’’

তবে শুধু পূর্ব নয়। পাশের হারে এগোচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরও। এ বার পশ্চিমে পাশের হার ৮৮.৮৯ শতাংশ। রাজ্যের মধ্যে তারা দ্বিতীয়।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র বলেন, “আগে আমরা কখনও চতুর্থ, কখনও পঞ্চম হতাম। এ বার জেলার ফলাফলে সত্যিই আমরা খুব খুশি।” কারণ হিসাবে তিনি অবশ্য তুলে এনেছেন বেশ কিছু তত্ত্ব। জেলার সর্বত্র বিশেষত জঙ্গলমহল এলাকায় শিক্ষার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ছিল না এতদিন। গত চার বছরে তার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। বেশ কিছু স্কুল উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত হয়েছে। ফলে, অনেকে গ্রামের কাছাকাছি স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। শ্যামপদবাবুর আশা, “এর সুফল আগামী দিনেও মিলবে।”

গত বছর উচ্চ মাধ্যমিকে পশ্চিমে পাশের হার ছিল ৮২ শতাংশ। শিক্ষকদের একাংশও মনে করেছেন, এত দিন পশ্চিমের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ ছিল জঙ্গলমহলের অনুন্নয়ন। বেলপাহাড়ি, গোয়ালতোড়ের মতো এলাকার একাংশ দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত থেকেছে। সর্বত্র শিক্ষার আলো পৌঁছয়নি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। প্রত্যন্ত এলাকাতেও তৈরি হয়েছে কলেজ। ফলে, উচ্চ শিক্ষার সুযোগ বেড়েছে।

উচ্চ মাধ্যমিকের জেলার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মধুসূদন গাঁতাইতও সেই কথাই জানালেন, “প্রত্যন্ত এলাকাতেও পরিকাঠামো গড়ে উঠছে। ফলে, আগামী দিনে পাশের হার আরও বাড়তে পারে।”

পরিস্থিতি যে পাল্টেছে মানছেন শিক্ষকরাও। মেদিনীপুর টাউন স্কুলের (বালক) প্রধান শিক্ষক বিবেকানন্দ চক্রবর্তী বলেন, “এখন পশ্চিম মেদিনীপুরেও পঠনপাঠনের মান বাড়ছে।” ভাদুতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরীর কথায়, “এখন পারিবারিক শিক্ষা সচেতনতা বাড়ছে। ফলে ফল আগের থেকে ভাল হচ্ছে।”

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেল, এ বারই প্রথম নতুন সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় প্রাপ্ত নম্বর বেড়েছে। নতুন এই সিলেবাসে ছোট প্রশ্নের সংখ্যা বেশি। তার উপর প্রোজেক্টেও নম্বর ছিল। ফলে, ছাত্রছাত্রীদের নম্বর পাওয়া সহজ হয়েছে। পাশের হার বাড়ার এটাও একটা কারণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE