Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
পিংলা বিস্ফোরণ

পাকড়াও সুরজ, তদন্তে গতির আশা

নিজের গ্রাম ও লাগোয়া এলাকা থেকে অল্পবয়সী ছেলেদের পিংলার কারখানায় নিয়ে আসার ব্যাপারে যে তিনিই মধ্যস্থতা করেছিলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তা সিআইডির কাছে স্বীকার করলেন সুরজ শেখ। অল্পবয়সী ছেলেদের টাকার লোভ দেখিয়ে পিংলার কারখানায় নিয়ে আসার ব্যাপারে সুরজের দাবি, কাজের জন্যই তিনি কয়েকজন ছেলেকে পিংলায় পাঠিয়েছিলেন।

মেদিনীপুর আদালতে সুরজ শেখ।—নিজস্ব চিত্র।

মেদিনীপুর আদালতে সুরজ শেখ।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৫
Share: Save:

নিজের গ্রাম ও লাগোয়া এলাকা থেকে অল্পবয়সী ছেলেদের পিংলার কারখানায় নিয়ে আসার ব্যাপারে যে তিনিই মধ্যস্থতা করেছিলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তা সিআইডির কাছে স্বীকার করলেন সুরজ শেখ। অল্পবয়সী ছেলেদের টাকার লোভ দেখিয়ে পিংলার কারখানায় নিয়ে আসার ব্যাপারে সুরজের দাবি, কাজের জন্যই তিনি কয়েকজন ছেলেকে পিংলায় পাঠিয়েছিলেন।
ঘটনার পর থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন পিংলা কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত সুরজ। মঙ্গলবার রাতে তিনি সিআইডির হাতে ধরা পড়েন। ঘটনার পরপরই সুরজের খোঁজে সুতিতে গিয়েছিলেন তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা। যদিও তাঁর নাগাল মেলেনি। সুরজের বাড়ি সুতির নতুন চাঁদরায়। সিআইডি সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগেই জানা যায়, সুরজ রঘুনাথগঞ্জের চরকায় এক পরিচিতের বাড়িতে আছেন। ফোনে আড়ি পেতেই এটা জানতে পারেন গোয়েন্দারা। অবশ্য সুরজ নিজের ফোন ব্যবহার করতেন না। অন্য কারও ফোন থেকে মাঝে-মধ্যে বাড়িতে ফোন করতেন।
গত সোমবার সিআইডির একটি দল মুর্শিদাবাদে যায়। আট সদস্যের এই দলে ‘স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ’-এর (ওএসজি) চারজন ছিলেন। সোমবার রাতেই ওই গ্রামে হানা দেয় পুলিশ। যদিও রাতের অন্ধকারে গ্রামে তল্লাশির ঝুঁকি নেয়নি পুলিশ। মঙ্গলবার সকাল হতেই গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। গ্রামের কারও বাড়িতে সুরজ আশ্রয় নিয়ে থাকলেও পুলিশকে জানাতে বলা হয়। ওই গ্রামেই নবাব শেখ নামে তার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পাকড়াও করা হয় সুরজকে। এ দিন রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ রঘুনাথগঞ্জ থানা থেকে সুরজকে নিয়ে পুলিশ মেদিনীপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। পিংলার বিস্ফোরণে প্রাণ গিয়েছে নতুন চাঁদরার জিন্নাতুন বিবির দুই ভাইপোর। বুধবার জিন্নাতুন বিবি বলেন, ‘‘গ্রামের সকলে পুরনো স্মৃতি ভুলতে চায়। সুরজ ধরা পড়লেও গ্রামবাসীদের কিছু যায় আসে না। আমরা শুধু শান্তি চাই।’’ সুরজের সাম্প্রতিক কোনও ছবি তদন্তকারী সংস্থার কাছে ছিল না। ধৃত যে সুরজই, তা চিহ্নিত করে দেওয়ার জন্য গোয়েন্দারা সঙ্গে নিয়েছিলেন পিংলা কাণ্ডে মৃত ওয়াসিম শেখের ভাই রাহুল শেখকে। রাহুলই সুরজকে চিহ্নিত করে।
বুধবার মেদিনীপুরের সিজেএম মঞ্জুশ্রী মণ্ডলের এজলাসে হাজির করে সুরজকে ছ’দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চায় সিআইডি। বিচারক ধৃতের পাঁচদিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন। সিআইডির এক অফিসার বলেন, “যে কোনও সময় যে সে ধরা পড়ে যাবে, তা জানত সুরজ। তাই ঘটনার পরপরই নিজের মোবাইল ব্যবহার করা বন্ধ করে দেয়। গোড়ার দিকে বাড়ির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখত না। পরে অন্য নম্বর থেকে বাড়িতে মাঝে-মধ্যে ফোন করত।”

সিআইডি সূত্রে খবর, ঘটনার দিন সুরজ পিংলার কারখানাতেই ছিলেন। বিস্ফোরণের আগে পর্যন্ত তিনি কারখানায় ছিলেন। যখন বিস্ফোরণ হয়, তখন তিনি কারখানার অদূরে দাঁড়িয়ে এক পরিচিত মহিলার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। বিকট শব্দ পেয়ে সুরজ বুঝে যান, কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে। ভয়াবহ বিস্ফোরণের কথা তিনি ওই পরিচিত মহিলাকে জানিয়েও দেন। পরে মৃতদের পরিবারের লোকেদের সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। সুরজ তাঁদের মেদিনীপুরে চলে আসার কথা জানিয়ে দেন। তবে নিজে পিংলা থেকে চম্পট দেন।

গত ৬ মে রাতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয় পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ে। মৃত্যু হয় ১৩ জনের। জখম হয় ৩ জন। মৃতদের মধ্যে ৯ জনই নাবালক। ঘটনা নিয়ে রাজ্য- রাজনীতি তোলপাড় হয়। সুরজই নিজের গ্রাম এবং লাগায়ো এলাকা থেকে অল্পবয়সী ছেলেদের টাকার লোভ দেখিয়ে পিংলার কারখানায় নিয়ে আসার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেন। সুতির অনেকে এই যুবকের উপর চটেও আছেন।

পিংলা বিস্ফোরণের ঘটনায় আগেই গ্রেফতার হয়েছেন কারখানার অন্যতম মালিক রঞ্জন মাইতি। ধৃত রঞ্জন তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ঘটনায় রঞ্জনের ভাই নিমাই মাইতিও যুক্ত। নিমাইয়ের একটি পিক-আপ ভ্যান আছে। এই ভ্যানে করেও বিভিন্ন এলাকায় বাজি সরবরাহ করা হত। এই পরিস্থিতিতে রঞ্জনের ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। নিমাই-এর নাগাল এখনও পায়নি সিআইডি।

ঘটনার পর বিস্ফোরণস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে তদন্তকারী সংস্থা। ওই সব নমুনা পরীক্ষা- নিরীক্ষার জন্য ‘সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি’-তে (এসএফএসএল) পাঠানো হয়েছে। অবশ্য তার রিপোর্ট এখনও আসেনি। এই মামলায় এখনও আদালতে চার্জশিট জমা দেয়নি সিআইডি। অগস্টের গোড়ায় চার্জশিট জমা দেওয়া না- হলে রঞ্জনের জামিন পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকত। সিআইডি সূত্রে খবর, এই পরিস্থিতিতে সুরজকে ধরার সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। সিআইডির এক অফিসার বলেন, “অগস্টের গোড়াতেই আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE