পুরভোটের আর এক বছরও বাকি নেই। তার আগে দুর্গাপুরে পরপর ভোটের ফলে পিছিয়ে পড়ায় তলানিতে কর্মীদের মনোবল। রবিবার বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পর্যালোচনা বৈঠকে তাই তৃণমূলের বর্ধমান জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস পুরসভা নিয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে যেমন পুরসভায় নির্দিষ্ট সময় দেওয়ার নির্দেশ, কাউন্সিলরদের একাংশের আয় বহির্ভূত সম্পত্তি নিয়ে সতর্কবাণী থেকে বেশ কয়েকজন মেয়র পারিষদকে বদলের ইঙ্গিতও তিনি দিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
২০১১-র বিধানসভা ভোটে দুর্গাপুরের দু’টি আসনেই জেতার পরে ২০১২-য় বামেদের হাত থেকে পুরসভা ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। তবে সে বার বিধানসভা ভোটের তুলনায় পুরভোটে তৃণমূলের ভোট কমে শহরে। তৃণমূলের ভোট আরও কমে যায় ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে। এ বার বিধানসভা ভোটে দু’টি আসনই হাতছাড়া হয়েছে। দুর্গাপুর পশ্চিমের প্রার্থী তথা শহরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় হেরেছেন সাড়ে ৪৪ হাজার ভোটে।
প্রচারে বিরোধীরা অপূর্ববাবুকে ‘পার্ট টাইম’ মেয়র বলে কটাক্ষ করে দাবি করেছিল, সর্বক্ষণের মেয়র ছাড়া শহরের প্রকৃত উন্নয়ন হবে না। এমনকী, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিরোধীদের সেই অভিযোগ কার্যত মান্যতা দিয়ে দুর্গাপুরে সভায় বলে যান, ‘‘সব সময় হয়তো ওর (অপূর্ববাবু) দেখা পাওয়া যায় না। ওকে বলব এমন না করতে। অভিমান হলে অপুকে দুই চড় মেরে জিজ্ঞাসা করবেন, কেন দেখা করনি?’’
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবারের বৈঠকে পর্যবেক্ষক অরূপবাবু মেয়রকে সতর্ক করে জানিয়েছেন, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পুরসভায় থাকতেই হবে। এটা যে মেয়রের জন্য দলনেত্রীর তরফে শেষ সতর্কবার্তা, সেটাও তিনি জানাতে ভোলেননি বলে বৈঠকে হাজির নেতাদের কয়েকজনের দাবি। বৈঠকের শেষ ভাগে পুরসভার ওয়ার্ড সংখ্যা বাড়ানো নিয়ে প্রশ্ন করেও মেয়র অরূপবাবুর অসন্তোষের মুখে পড়েন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
তৃণমূল সূত্রের খবর, কয়েকজন মেয়র পারিষদের কাজে যে দল খুশি নয়, তা-ও জানিয়েছেন অরূপবাবু। পানীয় জলের বিষয়টি দেখার নির্দেশ দিয়েছেন ডেপুটি মেয়র অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দল সূত্রে জানা যায়, মেয়র পারিষদ (জল সরবরাহ) পদ থেকে প্রমোদ সরকারের সরে যাওয়া কার্যত নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। এক মহিলা মেয়র পারিষদ বৈঠকে হাজির হননি দেখে চটে যান অরূপবাবু। ওই মেয়র পারিষদের ঘনিষ্ঠ এক মহিলা কাউন্সিলর জানান, তিনি চিকিৎসার জন্য ভেলোরে গিয়েছেন। অরূপবাবু পাল্টা দাবি করেন, ভোলোর নয়। চিকিৎসার নাম করে ওই মেয়র পারিষদ কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছেন বলে তাঁর কাছে খবর রয়েছে।
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, দলের শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এক মেয়র পারিষদের বিরুদ্ধে অরূপবাবু সরাসরি সংগঠনের নাম করে পকেট ভরানোর অভিযোগ তোলেন। তিনি তাঁর কাছে থাকা অর্থের উৎস জানিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁকে চুপ করিয়ে দেন অরূপবাবু। এমনকী, তিনি সতর্ক করে জানান, তৃণমূলের সমর্থকদেরও কাজ পেতে আইএনটিটিইউসি নেতাদের টাকা দিতে হচ্ছে বলে দলের কাছে সব খবর আছে। আবার নেতারা কারখানা মালিকদের কাছেও টাকা নিচ্ছেন। ওই দুই মেয়র পারিষদকেই সরিয়ে দেওয়া হবে বলে দলের একাংশের অনুমান।
কাউন্সিলরদের একাংশের আয় বহির্ভূত সম্পত্তি নিয়েও ওই বৈঠকে সরব হয়েছেন অরূপবাবু। তার মধ্যে অন্তত দু’জন বরো কমিটির চেয়ারম্যান বলে দলীয় সূত্রে খবর। সেই তালিকায় যেমন রয়েছেন কাউন্সিলর হওয়ার পরে তোলাবাজি, মারধরে অভিযুক্ত হয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেল খাটা কেউ, তেমনই রয়েছেন প্রকাশ্যে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখা বিধাননগর এলাকার এক কাউন্সিলর। রয়েছেন ইস্পাতনগরীর একাধিক কাউন্সিলর এবং দলের নেতাও। অরূপবাবু সবাইকে বলে গিয়েছেন, ‘‘সতর্ক না হলে বিপদ আছে।’’
তৃণমূলের বৈঠক নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি সিপিএম। দলের অভ্যন্তরের বিষয় বলে এড়িয়ে গিয়েছেন নেতারা। তবে পাশাপাশি দাবি করেছেন, বেহাল পুর পরিষেবা নিয়ে বছরখানেক আগে থেকে যে ধারাবাহিক আন্দোলন তাঁরা চালাচ্ছেন, তার সারবত্তা প্রমাণ হয়ে গেল এই বৈঠকে। সিপিএমের দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনালের সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘স্মার্ট সিটির কথা ভাবা হচ্ছে। অথচ, ন্যূনতম পরিষেবার বালাই নেই। শাসক দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মানুষ হাতের কাছে পান না। শহরের উন্নয়ন স্তব্ধ।’’
মেয়র অপূর্ববাবুকে দলীয় বৈঠকের নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি শুধু বলেন, ‘‘জবাব মিলবে সময়ে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy