Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নবান্নের নির্দেশ উড়িয়ে জিএসটি ফাঁকির তল্লাশি

জিএসটি ফাঁকি দিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী যে দেদার পণ্য ভিন রাজ্য থেকে আনছেন সেই খবর পেয়েছিলেন কর কর্তারা।

পাকড়াও: বিনা জিএসটি-র মালপত্র নিয়ে আসায় আটক করা হয়েছে কন্টেনার দু’টি। বুধবার হাওড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

পাকড়াও: বিনা জিএসটি-র মালপত্র নিয়ে আসায় আটক করা হয়েছে কন্টেনার দু’টি। বুধবার হাওড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:২৩
Share: Save:

প্রস্তুতি ছিলই, বুধবার ভোর রাতে হাওড়ায় তল্লাশি অভিযানে নেমে দু’টি কন্টেনার ভর্তি পণ্য বাজেয়াপ্ত করলেন বাণিজ্য কর কর্তারা। জিএসটি চালুর পর এটিই প্রথম অভিযান। এবং নাটকীয়ভাবে নবান্নের একাংশ অভিযান থেকে ফিরে আসতে বললেও, তাঁরা ফিরতে রাজি হননি। বরং প্রতিটি পণ্যের হিসাব মিলিয়ে বুধবার ভোরে শুরু হওয়া অভিযান তাঁরা শেষ করেন এ দিন সন্ধ্যায়। যে পরিমাণ পণ্য বাজেয়াপ্ত হয়েছে তাতে অন্তত ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে বলে অর্থ দফতরের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন সূত্রের খবর।

জিএসটি ফাঁকি দিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী যে দেদার পণ্য ভিন রাজ্য থেকে আনছেন সেই খবর পেয়েছিলেন কর কর্তারা। ‘কাঁচা কারবার’-এ কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হলেও এতদিন কোনও অভিযানে নামা হয়নি। গত ৯ ডিসেম্বর দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সারা দেশের বাণিজ্য কর কর্তাদের আলোচনায় ঠিক হয়, এ বার অভিযানে নামতে হবে। বেশ কিছু রাজ্য অভিযান শুরুর কথাও জানায়। তার পরে এখানেও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। এর মধ্যেই খবর আসে দিল্লি থেকে দু’টি পণ্যবাহী কন্টেনার বহুমূল্যের পণ্য নিয়ে কলকাতা পৌছচ্ছে। তারা দ্বিতীয় হুগলি সেতুর নীচে একটি গুদামে পণ্য খালাস করবে।

খবর পেয়ে বুধবার ভোরেই সেখানে যান জনা দশেক কর কর্তা। ধরা পড়ে যায় দু’টি কন্টেনার। তাতে দেড় হাজার কেজি গোলমরিচ গুঁড়ো থেকে, রেডিমেড পোশাক, প্লাস্টিকের সামগ্রী, জাঙ্ক জুয়েলারি, প্লাস্টিকের ঝাড়ু থেকে ঘর সাজানো সামগ্রীর হদিশ মেলে। একটি পরিবহণ সংস্থা জিএসটি না দিয়ে নগদে কেনা ওই সামগ্রী এনেছিল। কলকাতার বিভিন্ন পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে তা যাওয়ার কথা ছিল।

কর কর্তারা যখন প্রায় চার-পাঁচ ঘন্টা তল্লাশি চালিয়ে পণ্যের তালিকা তৈরি করছেন, তখন খবর আসে নবান্নের উঁচু মহল চাইছেন না এই তল্লাশি চলুক। নির্দেশ যায়, তড়িঘড়ি তল্লাশি শেষ করে ফেরত আসুন অফিসাররা। কিন্তু ঘটনাস্থলে যাওয়া অফিসাররা তাতে বেঁকে বসেন। তাঁরা জানিয়ে দেন, কাজ যখন শুরু হয়েছে, তা শেষ করেই তাঁরা ফিরবেন। মাঝখানে যাবেন না। এর পর বেলেঘাটা বাণিজ্য কর অফিস থেকেও কর-কর্তাদের যুক্তি মেনে নেওয়া হয়। পাঠানো হয় আরও জনা কুড়ি অফিসার। ৩০ জনের বেশি অফিসার দিনভর কয়েকশো সামগ্রীর মূল্যায়ণ ও জরিমানা ধার্য করেন।

বছর দুয়েক আগে সরকার ঘনিষ্ঠ এক সিনেমা প্রযোজকের অফিসেও একইভাবে তল্লাশিতে গিয়েছিলেন কর কর্তারা। তখনও নবান্নের একটি মহল থেকে তল্লাশির মাঝপথেই তাঁদের ফেরত আনা হয়। এ বার অবশ্য কর-কর্তারা সেই চাপে নতি স্বীকার করেননি। বরং জিএসটি জমানার প্রথম তল্লাশি অভিযানের সাফল্য নিয়ে বেশ খুশিই তাঁরা। এ ব্যাপারে বাণিজ্য কর কমিশনার স্মারকি মহাপাত্রের বক্তব্য জানতে চেয়ে বার বার ফোন বা এসএমএস পাঠানোর পরও তিনি জবাব দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE