Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলে ঢুকে মার প্রধান শিক্ষককে, অভিযুক্ত তৃণমূল

স্কুলে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে লাঠিপেটা করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। শনিবার ২২ শে শ্রাবণের অনুষ্ঠান চলছিল কোচবিহারের মাথাভাঙার নিশিগঞ্জের নিশিময়ী হাইস্কুলে।

আক্রান্ত প্রধান শিক্ষক নির্মল সাহা।—নিজস্ব চিত্র।

আক্রান্ত প্রধান শিক্ষক নির্মল সাহা।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০৮
Share: Save:

স্কুলে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে লাঠিপেটা করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। শনিবার ২২ শে শ্রাবণের অনুষ্ঠান চলছিল কোচবিহারের মাথাভাঙার নিশিগঞ্জের নিশিময়ী হাইস্কুলে। সেখানেই অনুষ্ঠানের কার্ডে স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি সাবলু বর্মনের নাম না থাকার ‘ক্ষোভে’ তৃণমূল কর্মীদের একাংশ এই ঘটনা ঘটান বলে অভিযোগ।

যদিও বিরোধী সিপিএম এই ঘটনার পিছনে সিন্ডিকেট যোগের অভিযোগ তুলেছে। তাদের দাবি, স্কুলঘর নির্মাণে ১৪ লক্ষ টাকা নিয়েই গণ্ডগোল। ওই এলাকার তৃণমূলের কয়েক জন ওই কাজের বরাত চেয়েছিলেন। স্কুল নিজেই সে কাজ করাচ্ছে। বরাত না পেয়ে তৃণমূলের স্থানীয় কিছু কর্মী প্রধান শিক্ষকের উপরে ক্ষুব্ধ ছিলেন। তারাই এ দিন হামলা চালায়।

এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ অনুষ্ঠান শুরুর কিছু ক্ষণ আগেই একদল লোক ঢুকে প্রধান শিক্ষক নির্মল সাহার খোঁজ করে। তাঁকে দেখেই টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে লাঠিপেটা করতে থাকে জনা পনেরো যুবক। স্কুলের মাঝে জমায়েত ছিল আরও জনা তিরিশেক লোক। নির্মলবাবুর অভিযোগ, ‘‘দুষ্কৃতীরা বলছিল, মেরে তোর মাথা ফাটিয়ে দেব। তার পরে স্কুলের পার্কেই তোকে পুঁতে দেব!’’ সহ-শিক্ষক গোবিন্দ সরকারও তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জখম দুই শিক্ষকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। নির্মলবাবুর ডান হাতের কড়ে আঙুলে চোট লেগেছে।

তবে তথ্য সংস্কৃতি দফতর আয়োজিত অনুষ্ঠান বলে এ দিনের অনুষ্ঠানে পরিচালন সমিতির সভাপতির নাম থাকার কথা নয় বলে স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে। সাবলুবাবু নিজেও জানিয়েছেন, ওই বিষয় নিয়ে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই। সরকারি অনুষ্ঠানে নাম থাকবে না তিনি তা আগে থেকেই জানতেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুষ্কৃতীরা নির্মলবাবুকে মারতে মারতে কার্ডে সাবলুবাবুর নাম না রাখার কথা বলছিল।

বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। বনমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মাথাভাঙার বিধায়ক বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “শিক্ষকের উপরে হামলা কোনও ভাবেই মেনে নিই না। যারা অন্যায় করেছে তাঁদের শাস্তি হওয়া উচিত। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।’’ স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি সাবলুবাবু তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তিনি দাবি করেন, ঘটনার কথা শুনে তিনি সেখানে গেলে অভিভাবকেরা প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধেই বিক্ষোভ দেখান। তিনি বলেন, “মারধর হয়েছে কি না আমি জানি না। যদি হয় অন্যায় হয়েছে। পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। যে অভিভাবকরা এদিন বিক্ষোভ দেখান তাঁদেরও অভিযোগও খতিয়ে দেখা দরকার।” প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের পাল্টা অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে অব্যবস্থা চলছে। মিড-ডে মিলে অত্যন্ত নিম্ন মানের খাবার দেওয়া হচ্ছে। সর্বশিক্ষা মিশনের টাকায় স্কুলের কয়েকটি ক্লাস ঘর নির্মাণের কাজেও নিম্নমানের জিনিসপত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নারায়ণ সরকারের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের সিন্ডিকেট থেকে নির্মাণকাজের সামগ্রী না কেনাতেই প্রধানশিক্ষকের উপরে তৃণমূল হামলা চালিয়েছে।’’

নির্মলবাবু বলেন, “সবাই সব দেখেছে। কারা হামলা করেছে তা আর আমি বলতে চাই না। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। যাঁরা মারধর করেছেন তাঁরা কেউই অভিভাবক নন।” মাথাভাঙার এসডিপিও গণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coochbehar Teacher Trinamool police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE