Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পাশ-ফেল বৈঠকে ডাক নেই, ক্ষুব্ধ শিক্ষক সংগঠন

প্রাত্যহিক পঠনপাঠন, পরীক্ষা থেকে শুরু করে স্কুলের যাবতীয় কর্মকাণ্ডে যাঁদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ, সেই শিক্ষকদের দূরে রেখে পাশ-ফেল সংক্রান্ত বৈঠক কী ভাবে হতে পারে?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:২৬
Share: Save:

শিক্ষাবিদ থেকে রাজনীতিক পর্যন্ত আমন্ত্রণ পেয়েছেন অনেকেই। কিন্তু স্কুল স্তরে পাশ-ফেল ফেরানোর ব্যাপারে প্রস্তাবিত বৈঠকে শিক্ষক সংগঠনগুলি ডাক পায়নি। এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ডাকে শনিবার বিকাশ ভবনে ওই বৈঠক হওয়ার কথা।

প্রাত্যহিক পঠনপাঠন, পরীক্ষা থেকে শুরু করে স্কুলের যাবতীয় কর্মকাণ্ডে যাঁদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ, সেই শিক্ষকদের দূরে রেখে পাশ-ফেল সংক্রান্ত বৈঠক কী ভাবে হতে পারে? প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষক শিবির। এই নিয়ে ক্ষোভের সঙ্গে সঙ্গে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে ওই মহলে। স্কুলশিক্ষা নিয়ে রাজ্য সরকারের দূরদর্শিতাকেও তীব্র কটাক্ষ করেছে শিক্ষক সংগঠন। এমনকী শিক্ষা নিয়ে আলোচনায় কাদের ডাকা উচিত বা অনুচিত, সেই বিবেচনার তুলনামূলক বিচারে এগিয়ে রাখা হয়েছে বাম আমলকে। শিক্ষাজগতের একাংশের বক্তব্য, দীর্ঘদিন পাশ-ফেল প্রথা কার্যকর নেই। সেই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যবহারিক সুবিধা-অসুবিধা ভাল বুঝবেন শিক্ষকেরাই।

শনিবারের বৈঠকে রাজনীতি জগতের প্রতিনিধি হিসেবে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী, এসইউসি নেতা তরুণ নস্কর প্রমুখকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শিক্ষাবিদ হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়েছেন পবিত্র সরকার, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীরা। সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার এবং প্রাথমিক সংসদ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আর এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতিদের কাছেও আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। বাম জমানায় প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি ফিরিয়ে আনার জন্য পবিত্রবাবুর নেতৃত্বে কমিটি গড়া হয়েছিল। পবিত্রবাবু জানান, তিনি তৃণমূল সরকারের ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। সুজনবাবু আর মান্নান সাহেব অবশ্য শনিবার কলকাতায় থাকবেন না বলে বৈঠকে যেতে পারছেন না। এসইউসি-র দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক আন্দোলনের বিষয় পাশ-ফেল ফিরিয়ে আনা। ওই দিনের বৈঠকে তরুণবাবু তাই অবশ্যই উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন।

বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের বক্তব্য, পাশ-ফেল ফেরানোর মতো বিষয়ে শিক্ষাবিদ-রাজনীতিকদের সহযোগ নিশ্চয়ই দরকার। কিন্তু সব থেকে বেশি প্রয়োজন তো শিক্ষকদের। অথচ কোনও স্কুলশিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিকেই বৈঠকে ডাকা হল না! কেন? এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বুধবার বলেন, ‘‘শিক্ষকদের সঙ্গেই পড়ুয়াদের সব থেকে বেশি যোগাযোগ। অথচ ওই বৈঠকে শিক্ষকেরা কেউ ডাক পাননি। এর থেকেই বোঝা যায়, সরকারের দূরদর্শিতার অভাব যে কত!’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের বক্তব্য, শিক্ষকদের মতামত ছাড়া সিদ্ধান্ত নিলে পাশ-ফেল নিয়ে সরকার যা করতে যাবে, তা ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। আর অ-বাম শিক্ষক সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকারের অভিযোগ, এই সরকার কখনওই কোনও শিক্ষক সংগঠনকে ডাকে না। বামফ্রন্টের আমলে অন্তত আমন্ত্রণটুকু মিলত।

পার্থবাবু সম্প্রতি বিধানসভায় জানিয়েছিলেন, পাশ-ফেল সম্পর্কে সব রকম সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, শুধু শিক্ষাবিদ নয়, রাজনীতিবিদদেরও আমন্ত্রণ জানানোর পথেই গিয়েছে সরকার। কিন্তু শিক্ষকদের ডাকা হল না কেন? স্কুলশিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানান, রাজনীতিক ও শিক্ষাবিদদের সঙ্গে প্রথমে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে ঠিকই। তবে তার পরে শিক্ষকদের যে আদৌ ডাকা হবে না, এমন কথা এখনই বলা যাচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE