Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গা টিপিয়ে সিগারেটের ছেঁকা, কিশোরী থানায়

বাড়িতে অভাব। তাই বনগাঁ থেকে কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করতে এসেছিল বছর বারোর এক কিশোরী। তার পর থেকে বছরখানেক তার কোনও সন্ধান পাচ্ছিলেন না পরিবারের লোকজন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে শ্যামপুকুর এলাকায় এক ব্যক্তির বাড়িতে ওই কিশোরীকে খুঁজে পান তার এক পরিচিত যুবক। দেখেন, মেয়েটির সারা গা পোড়া দাগে ভর্তি!

বৃষ্টি সর্দারের গায়ে সিগারেটের ছেঁকা। শুক্রবার বনগাঁয় নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

বৃষ্টি সর্দারের গায়ে সিগারেটের ছেঁকা। শুক্রবার বনগাঁয় নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

বাড়িতে অভাব। তাই বনগাঁ থেকে কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করতে এসেছিল বছর বারোর এক কিশোরী। তার পর থেকে বছরখানেক তার কোনও সন্ধান পাচ্ছিলেন না পরিবারের লোকজন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে শ্যামপুকুর এলাকায় এক ব্যক্তির বাড়িতে ওই কিশোরীকে খুঁজে পান তার এক পরিচিত যুবক। দেখেন, মেয়েটির সারা গা পোড়া দাগে ভর্তি!

ওই কিশোরী জানায়, অনিমেষ সমাদ্দার নামে বনগাঁর এক ব্যক্তির মাধ্যমে কাজ পেয়েছিল সে। অনিমেষের দাদা হৃষীকেশ সমাদ্দারের বাড়িতেই পরিচারিকা হিসেবে নিযুক্ত করা হয় তাকে। কিশোরীর অভিযোগ, ঘরের যাবতীয় কাজের সঙ্গে সঙ্গে হৃষীকেশ এবং তাঁর স্ত্রীর গা-হাত-পা টিপে দিত হতো তাকে। অস্বীকার করলে বা কাজে কোনও রকম ভুলচুক হলে বিড়ি-সিগারেটের ছেঁকা দেওয়া হতো। পুলিশি সূত্রের খবর, শ্যামপুকুর থেকে বনগাঁয় ফিরে স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল ওই কিশোরী। সেখানে লিখিত অভিযোগ জমা দিলেও তাকে শ্যামপুকুর থানায় ফের অভিযোগ জানাতে বলা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় সপরিবার শ্যামপুকুর থানায় এসে হৃষীকেশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ওই কিশোরী। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে কিশোরীর।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, হৃষীকেশ সমাদ্দার এখন বৃদ্ধ। কিন্তু যুবা বয়সে তিনি নানা অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ। কয়েক বার গ্রেফতারও হয়েছিলেন তিনি।

হৃষীকেশের পরিবার অবশ্য ওই কিশোরীর পরিবারের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছে। তাদের দাবি, এক বছর আগে কিশোরীর মা-ই তাকে রেখে গিয়েছিলেন। ৫০০ টাকার বিনিময়ে সে শুধু চা তৈরির কাজ করত। মা মাঝেমধ্যেই এসে জমানো টাকা নিয়ে যেত। মাস দুয়েক আগে কিশোরীর মা এক যুবককে নিয়ে হাজির হন। তার পরে ওই যুবক এক দিন ফোন করে বেতন বাড়ানোর দাবি তোলেন। কয়েক দিন পরে মেয়েটির মা এবং এক প্রতিবেশী এসে কার্যত জোর করে তাকে নিয়ে যান। হৃষীকেশের পরিবারের অভিযোগ, ষড়যন্ত্র করে তাদের ফাঁসানো হয়েছে।

ওই কিশোরীর মা জানান, কয়েক বছর আগে তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন। অভাবের কারণেই মেয়েকে পরিচারিকার কাজে নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন তিনি। কাজের খোঁজ পান বনগাঁ গোপালনগরের বাসিন্দা অনিমেষ সমাদ্দারের মাধ্যমে। ওই মহিলা বলেন, ‘‘পরিচারিকার কাজ করে মাসে তিন হাজার টাকা মিলবে বলেও জানিয়েছিলেন অনিমেষবাবু।’’

কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে মেয়ের আর কোনও খোঁজই পাচ্ছিলেন না ওই মহিলা। ঘটনাটি তিনি রাজু চক্রবর্তী নামে এক যুবককে জানান। রাজুই অনিমেষবাবুর কাছ থেকে ওই কিশোরীর ঠিকানা বার করেন। এ দিন বনগাঁ থানার সামনে দাঁড়িয়ে ওই কিশোরী বলে, ‘‘ওই বাড়ির দাদু-দিদার গা টিপে না-দিলেই ছেঁকা দেওয়া হতো। চিৎকার করলে জুটত মারধর। ঠিকমতো খেতেও দিত না। বাড়ি থেকে মোটেই বেরোনোর অনুমতি ছিল না।’’

এই ঘটনার কথা শুনেছেন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য। তিনি বলেন, ওই মহিলা অভাবের কারণেই মেয়েকে কাজ করতে পাঠিয়েছিলেন। সব জেনে মহিলাকে পুরসভায় অস্থায়ী পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। মেয়েটিকে স্কুলে ভর্তি করানো হবে। তার পড়াশোনার খরচও বহন করবে পুরসভা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE