Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জোয়ারে ভাঙল জেটি, মৃত তিন

পাকা জেটির দাবিটা জোরালো হয়েছিল বছর দুয়েক আগে থেকেই। সে বার জোয়ারের ধাক্কায় ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়া ফেরিঘাটের বাঁশের জেটি ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল দু’জনের।

মরিয়া: ভাঙা জেটি ধরেই বাঁচার চেষ্টা। বুধবার ভদ্রেশ্বেরের তেলেনিপাড়ায়। রাত পর্যন্ত নিখোঁজ অন্তত ১৩। ছবি: তাপস ঘোষ।

মরিয়া: ভাঙা জেটি ধরেই বাঁচার চেষ্টা। বুধবার ভদ্রেশ্বেরের তেলেনিপাড়ায়। রাত পর্যন্ত নিখোঁজ অন্তত ১৩। ছবি: তাপস ঘোষ।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৫৮
Share: Save:

পাকা জেটির দাবিটা জোরালো হয়েছিল বছর দুয়েক আগে থেকেই। সে বার জোয়ারের ধাক্কায় ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়া ফেরিঘাটের বাঁশের জেটি ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল দু’জনের। তবু সম্বিত ফেরেনি প্রশাসনের। পুরনো অস্থায়ী জেটি দিয়েই চলছিল পারাপার। কিন্তু বুধবার সকালে ফের একই রকম দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকল ওই ঘাট। তলিয়ে গেলেন অন্তত ৪০ জন। রাত পর্যন্ত তিন জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। নিখোঁজ অন্তত ১৩ জন। জখম ১১ জনকে চন্দননগর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

দু’বছরের ব্যবধানে ফের একই দুর্ঘটনায় ওই ঘাটে এসে সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের প্রশ্ন, এতদিনেও কেন জেটির ব্যবস্থা হল না? কেন ফের দুর্ঘটনা? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন আলিপুরদুয়ার থেকে মৃতদের পরিবারপিছু ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে কৃষি বিপণনমন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, এই ঘাট নিয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে শীঘ্রই আলোচনায় বসা হবে। কিন্তু
তাতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি।

মৃতদের মধ্যে মানস ঘোষ (২৬) চন্দননগরের এবং রাজা চৌধুরী (২৪) তেলেনিপাড়ার বাসিন্দা। মৃত এক বৃদ্ধার পরিচয় জানা যায়নি। আলো জ্বালিয়ে রাত পর্যন্ত চলতে থাকে তল্লাশি।

আরও পড়ুন:মমতার অস্ত্র বন্ধ চা-বাগান

তেলেনিপাড়া ঘাটের উল্টো দিকেই শ্যামনগর ঘাট। এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ভুটভুটি ধরার জন্য তেলেনিপাড়া ঘাটের জেটিতে অন্তত ৮০ জন দাঁড়িয়েছিলেন। তার মধ্যেই জোয়ার আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একে যাত্রীদের ভিড়, তার উপরে জোয়ারের ধাক্কা। প্রায় ৮০ মিটার লম্বা বাঁশের জেটিটি মাঝখান থেকে ভেঙে পড়ে। ভেসে যান যাত্রীরা। দু’হাত তুলে তাঁরা বাঁচার আকুতি জানাতে থাকেন। ঘাটে বাঁধা নৌকা নিয়ে সাধারণ মানুষ পৌঁছে যান দুর্ঘটনাস্থলে। কিন্তু অনেককেই তাঁরা উদ্ধার করতে পারেননি। পরে নামে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। তেলেনিপাড়া ঘাটে আসেন হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল, পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন এবং মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত। তাঁরা বিক্ষোভের মুখে পড়েন।

ভাই সুজিত সিংহ বাড়ি না-ফেরায় ওই ঘাটে এসেছিলেন দাদা কৃষ্ণ সিংহ। কৃষ্ণ বলেন, ‘‘ভাঙা জেটি বলে আমি ভাইকে এ পারেই স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। ও টিউশন নিতে ও পারে যাচ্ছিল। আমরা আর এই ঘাটে ভুটভুটি চালাতে দেব না।’’ ভেসে গিয়েও স্কুলশিক্ষক রাজীব আকুঞ্জি এক মাঝির হাত ধরে প্রাণ ফিরে পান। তিনি বলেন, ‘‘ভাসতে ভাসতে গোন্দলপাড়া ঘাটের কাছে চলে গিয়েছিলাম। বাঁচার আশাই হারিয়ে ফেরেছিলাম। মাঝি এসে না তুললে আমিও হয়তো তলিয়ে যেতাম।’’

জেলা পরিষদের থেকে ইজারা নিয়ে ওই ঘাটের ফেরি পারাপার দেখভাল করেন তেলেনিপাড়ার বাসিন্দা মিহির ভট্টাচার্য। জেটির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বিকেলে ওই ঘাটে এবং নিখোঁজ দু’জনের বাড়ি যান বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। দুর্ঘটনার জন্য রাজ্য সরকারকে দুষে মান্নান বলেন, ‘‘সরকার মেলা-খেলায় যা খরচ করছে, তার সামান্য অংশে এই ধরনের জেটি সংস্কার করলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। দাবি থাকা সত্ত্বেও জেটি সংস্কার হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Temporary jetty Ganges
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE