Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দু’দলের দ্বন্দ্বে তপ্ত দিনহাটা

এলাকায় কর্তৃত্ব কায়েম নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি লড়াইয়ে দিনভর উত্তপ্ত দিনহাটা। শনিবার সকাল থেকে কয়েক দফা সংঘর্ষে দু’পক্ষের ১০ জনের বেশি জখম হয়েছেন। বেশ কয়েকটি বাড়ি, পার্টি অফিস ভাঙচুর, তাতে আগুন ধরানোর ঘটনাও ঘটেছে।

নমিতেশ ঘোষ
দিনহাটা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৭ ০৩:৫৮
Share: Save:

এলাকায় কর্তৃত্ব কায়েম নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি লড়াইয়ে দিনভর উত্তপ্ত দিনহাটা। শনিবার সকাল থেকে কয়েক দফা সংঘর্ষে দু’পক্ষের ১০ জনের বেশি জখম হয়েছেন। বেশ কয়েকটি বাড়ি, পার্টি অফিস ভাঙচুর, তাতে আগুন ধরানোর ঘটনাও ঘটেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে চারটি গাড়ি, দশটি মোটরবাইক এবং বেশ কিছু টোটো। দু’পক্ষেরই অভিযোগ, প্রায় সব ঘটনাই হয়েছে পুলিশের চোখের সামনে। অথচ তারা পুরো সময়টাই দর্শক হিসেবে রয়ে গিয়েছে।

কোচবিহারে যে বামের ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু এবং তাদের জায়গায় বিজেপি শক্তি বাড়াচ্ছে, সেটা বোঝা গিয়েছিল লোকসভা উপনির্বাচনেই। বাম-কংগ্রেসকে পিছনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিলেন বিজেপি প্রার্থী। অনেকেই মনে করছেন, পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসবে, ততই ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে বিজেপি জড়িয়ে পড়বে শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে। এ দিন যা হয়েছে, তা তারই মহড়া বলেও মনে করছেন তাঁরা।

শনিবার ঘটনার সূত্রপাত সকাল ১১টা নাগাদ। বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় দলের রাজ্য নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার ও জেলা নেতাদের নিয়ে ভেটাগুড়িতে এক বিজেপি কর্মীর বাড়ি যাচ্ছিলেন। তখন পথে তাঁকে তৃণমূল কর্মীরা কালো পতাকা দেখায় বলে অভিযোগ। ভেটাগুড়িতে থেকে ফেরার সময়েই গোলমাল শুরু হয়।

লকেট চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, তাঁদের কনভয়ের উপরে হামলা চালান তৃণমূল কর্মীরা। বিজেপির জেলা নেতা ব্রজগোবিন্দ বর্মনের গাড়ি, কয়েক জন কর্মীর মোটরবাইক ভাঙচুর করা হয়। কয়েক জনকে মারধরও করা হয়। নাজিরহাটের একটি পেট্রোল পাম্পে বিজেপির দুই কর্মীকে আটকে রেখে মারধরের ঘটনা শুনে লকেট সেখানে যান। তখন দু’পক্ষের মধ্যে আবার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। তৃণমূলের অভিযোগ, লকেটের সঙ্গে আগাগোড়া লাঠিসোটা হাতে বিজেপি কর্মীরা ছিলেন। তাঁরাই এ সব করেছেন।

এই ঘটনায় তৃণমূলের প্রায় সব নেতাই বিজেপির বিরুদ্ধে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘বিজেপি কো সব জায়গাতেই অশান্তি বাধাতে চাইছে। আমি রবিকে (রবীন্দ্রনাথ ঘোষ) বলেছি, কোনও রকম প্ররোচনায় যেন পা দেওয়া না হয়।’’ দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহের অভিযোগ, ‘‘বিজেপি নেত্রী সশস্ত্র অবস্থায় মিছিল নিয়ে গিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা করেন। নাজিরহাট তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। বিধায়ক উন্নয়ন তহবিলের দেওয়া একটি অ্যাম্বুল্যান্স ভাঙা হয়।’’

লকেট অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘ওরাই (তৃণমূল) প্রথমে গোলমাল শুরু করেছে। আমাদের কর্মীদের আক্রমণ করেছে। পার্টি অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে।’’ একই সঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যে ভাষায় ওরা আমাদের মারবে, সেই ভাষাতেই আমরা উত্তর দেব।’’ একই সুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও জানিয়েছেন, তৃণমূল এ ভাবে গোলমাল করলে তাঁরাও চুপ করে বসে থাকবেন না।

পুরো ঘটনায় পুলিশ কেন দর্শক হয়ে রইল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ তৃণমূলের মধ্যেই। ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতারা বলছেন, বাইক বাহিনী নিয়ে ঘুরেছেন বিজেপি নেতারা। সঙ্গে লাঠিয়ালও ছিল। কোনও অনুমতি ছাড়া তাঁরা মিছিল করেছেন। কিন্তু পুলিশ সব দেখেও চুপ করে ছিল। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল এ সব নিয়ে কিছুই বলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইন মেনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC Conflict Dinhata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE