Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পরীক্ষার খাতা উইয়ে নষ্ট, তদন্ত

পুজোর আগে পার্ট ৩-এর ফল বেরোয়। তার পরে পার্ট ১-এর উত্তরপত্র পরীক্ষকদের কাছে পাঠানোর কথা ছিল।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটী ক্যাম্পাস।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটী ক্যাম্পাস।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫৯
Share: Save:

প্রায় ১৭০ বছরের পুরনো বাড়িতে ঘাঁটি গেড়েছে উইপোকা। প্রতি মাসে উই মারার ওষুধ ছ়ড়াতে এক সংস্থা থেকে লোক আসে। কিন্তু বিল নিয়ে গোলমালে মাস তিনেক তা বন্ধ। তারই দৌলতে উইয়ে কেটেছে জনা চল্লিশ পড়ুয়ার পরীক্ষার খাতা। তাঁদের ভাগ্য এখন অনিশ্চিত। অথচ, ফল বেরনোর কথা চলতি মাসেই।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিভ্রাট হয়েছে স্নাতক পার্ট ১ পরীক্ষার পাস কোর্সের দর্শনের খাতা নিয়ে। খাতা নষ্টের বিষয়টি ধরা পড়ে পুজোর ঠিক আগে। কেন এমন গাফিলতি হল, তার তদন্তে রেজিস্ট্রার, কলেজসমূহের পরিদর্শক ও সহকারী পরীক্ষা নিয়ামককে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গোটা বিষয়টি নিয়ে উপাচার্য নিমাই সাহা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্তারই মুখে কুলুপ।

পরীক্ষার পরে বিভিন্ন কলেজ থেকে আসা উত্তরপত্র রাখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটী ভবনে পরীক্ষা নিয়ামক দফতরের ‘এপি সেকশন’-এ। গত জুনে স্নাতক স্তরে কলা বিভাগের পার্ট ১ পরীক্ষা শেষ হয়। তার পর থেকে উত্তরপত্রগুলি ওই সেকশনে ছিল। পুজোর আগে পার্ট ৩-এর ফল বেরোয়। তার পরে পার্ট ১-এর উত্তরপত্র পরীক্ষকদের কাছে পাঠানোর কথা ছিল।

পরীক্ষা নিয়ামক দফতর সূত্রে জানা যায়, খাতা নামাতে গিয়ে কর্মীরা দেখেন, দর্শনের চল্লিশটি খাতা পড়ার মতো অবস্থায় নেই। সেগুলো কেটে ঝুরঝুরে করে দিয়েছে উইপোকা। সহকারী পরীক্ষা নিয়ামক প্রদীপ রায় বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানান। পুজোর পরে উপাচার্য তিন কর্তাকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গড়েন।

প্রাথমিক তদন্তে ওই কমিটি জেনেছে, ১৮৪৮ সালে তৈরি রাজবাটী ভবনে উইপোকা মারার জন্য লোক পাঠানো প্রায় তিন মাস বন্ধ রেখেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। বিল নিয়ে গোলমালে এই সমস্যা হয়েছে, সে কথা জানিয়ে কর্তৃপক্ষকে পুজোর আগে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন প্রদীপবাবু। কিন্তু সে সমস্যা মেটার আগেই ধরা পড়ে অঘটন।

কখনও মার্কশিটে ভুল, কখনও ফল প্রকাশে দেরি— পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে নানা সময়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই তালিকায় এ বার যোগ হল উইয়ে খাতা নষ্টের ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক নন্দী বলেন, ‘‘এই গাফিলতির দায় কার, জানতে চাই আমরা।’’ এসএফআই-এর রাজ্য কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষেরও প্রশ্ন, ‘‘পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এ রকম ছেলেখেলা কেন?’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তার আশ্বাস, পরীক্ষার্থীদের যাতে অসুবিধা না হয়, তা দেখা হচ্ছে। আপাতত ঠিক হয়েছে, পরীক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে, তাঁরা পাসকোর্সের যে বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পাবেন, দর্শনের ক্ষেত্রেও তাঁদের সে নম্বরই দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE