পার্থ চট্টোপাধ্যায়।ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচিত ছাত্র সংসদের বদলে অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল তৈরির সিদ্ধান্ত শুধু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, সারা রাজ্যের কথা ভেবেই নেওয়া হয়েছে। তাই কোনও মতেই এই সিদ্ধান্ত বদলানো সম্ভব নয় বলে সোমবার যাদবপুরের পড়ুয়া-প্রতিনিধিদের পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
শিক্ষামন্ত্রী এ দিন একই সঙ্গে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-প্রতিনিধিদের জানান, যাদবপুরের ক্যাম্পাসে মদ-গাঁজা খাওয়ার অভিযোগ উঠছে বারবার। এই ধরনের আচার-আচরণও মোটেই ‘ছাত্রসুলভ নয়’।
এ দিন যাদবপুরের তিন ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল নিয়ে তাঁদের আপত্তি ঠিক কোন কোন জায়গায়, শিক্ষামন্ত্রীর কাছে তা ব্যাখ্যা করেন তাঁরা। আইন বিভাগের শ্রেণি-প্রতিনিধিরা জানান, প্রস্তাবিত ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক বাছাইয়ের বিষয়ে তাঁদের আপত্তি আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নয়, তিনটি ছাত্র ইউনিয়নই চান তাঁরা। সেই সঙ্গে পড়ুয়া-প্রতিনিধিরা জানান, যাদবপুরের কোনও ছাত্র সংসদের বিরুদ্ধে কখনও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি এবং ছাত্র সংসদের ভোট ঘিরে কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি।। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রেও ছাত্র সংসদের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দাবি করেন তাঁরা।
এই সময়েই যাদবপুর ক্যাম্পাসে মদ-গাঁজা খাওয়া নিয়ে অভিযোগের প্রসঙ্গ তোলেন মন্ত্রী। প্রতিনিধিদলের অন্যতম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ছাত্র সংগঠন ফেটসু-র সাধারণ সম্পাদক অভীক দাস পরে বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে প্লেসমেন্টের (বিভিন্ন সংস্থায় নিয়োগের বন্দোবস্ত) ক্ষেত্রেও ছাত্র সংসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্লেসমেন্ট পরিচালনার জন্য কো-অর্ডিনেটর কে হবেন, তা ঠিক করে দেয় ছাত্র সংসদ। এটাও আমরা মন্ত্রীকে জানিয়েছি।’’
অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিলের বিরোধিতা করে অগস্ট থেকে আন্দোলনে নেমেছেন যাদবপুরের পড়ুয়াদের একাংশ। প্রায় দেড় দিন ধরে তাঁরা উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে ঘেরাও করে রাখেন। তাঁদের অন্যতম দাবি ছিল, সরকারের সঙ্গে তাঁরা কথা বলতে চান। তখনও শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, আইনের বদল হবে না। পড়ুয়ারা এ দিন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে একই কথা বলেন তিনি।
এ দিন বৈঠকের পরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘যাদবপুরের পড়ুয়াদের বলে দিয়েছি, আইন বদলানো সম্ভব নয়।। যদি এই বিষয়ে ওদের বোঝার কোনও ভুল হয়ে থাকে, তা হলে অবশ্যই বোঝাবো।’’ যাদবপুরে যে মদ-মাদক সেবনের অভিযোগ বারংবার উঠছে, সেই বিষয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণের কথাও ছাত্র-প্রতিনিধিদের জানান শিক্ষামন্ত্রী। গত সপ্তাহেই বিশ্ববিদ্যালয়ে মদ ও মাদক দ্রব্য সেবনের বিরোধিতা করে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস মন্তব্য করেন, এ-সব ঘটনার জন্যই জনমানসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রেও এর খারাপ প্রভাব পড়ে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ দিনের বৈঠকের পরে অন্যতম ছাত্র-প্রতিনিধি, কলা বিভাগের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথ জানান, এর পরে তাঁদের কর্মসূচি কী হবে, সেই বিষয়ে তাঁরা় কিছু দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল তৈরির সরকারি সিদ্ধান্ত তাঁরা কিছুতেই মানবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy