লড়াকু: পরীক্ষার হলে অঙ্কিতা। —নিজস্ব চিত্র।
পরীক্ষা শেষ হতে আর কয়েক মিনিট বাকি। শিক্ষিকা বলছেন, ‘‘চাইলে আরও ৪০ মিনিট নিতে পারো। তোমার জন্য নিয়ম আছে।’’ কিন্তু তিনি বললেন, ‘‘নাহ! চারটেতেই হয়ে যাবে।’’
দরজার বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, গত দু’দিন ধরে তাঁর উপর দিয়ে কী ঝড় বয়ে গিয়েছে। রবিবার ভোরে আত্মহত্যা করেছেন তাঁর ক্যানসার-আক্রান্ত মা। আর তিনি, অঙ্কিতা সাহা মঙ্গলবার বাংলা পরীক্ষা (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট ১-এর আবশ্যিক) দিতে এসেছেন উইমেন্স কলেজে (বাগবাজার)। বছর কুড়ির কন্যা বলছেন, ‘‘মা অনেক কষ্ট করে কলেজে ভর্তি করিয়েছিল। পরীক্ষা না দিলে আর পড়তে পারব না। মায়ের জন্যই পরীক্ষা দিতে এলাম।’’
বিকেল ৪টেয় পরীক্ষা শেষ হতেই সদ্য মা হারানো ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরলেন শিক্ষিকারা। তাঁদেরই একজন, মানসী সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘তোকে দেখে অবাক হচ্ছি। তুই-ই আমাদের ইন্সপিরেশন।’’ আর এক শিক্ষিকা দীপ্তি চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘অঙ্কিতার মা চলে যাওয়ার পর ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম। ও তখন থেকেই বলছে, দিদি, আমি কিন্তু পরীক্ষা দেব।’’
বাংলা স্নাতক স্তরের পড়ুয়া অঙ্কিতা। জন্ম থেকেই সঙ্গী শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। চলাফেরা করেন মূলত হুইলচেয়ারেই। কষ্ট করেই লেখেন। অঙ্কিতা বলেন, ‘‘বেলঘরিয়া মহাকালী গার্লস হাইস্কুলে ফাইভ থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত পড়েছি। মা আমাকে ধরে ধরে স্কুলে নিয়ে যেত। কলেজে ভর্তি করিয়েছে। কলেজেও নিয়ে আসতো। সব সময় বলত, আলাদা নয়, আর পাঁচ জন মেয়ের সঙ্গেই তোকে পড়াব। মায়ের জন্যই পড়াশোনা চালিয়ে যাব।’’ বেলঘরিয়ার নবীনপল্লির বাসিন্দা অঙ্কিতার বাবা ১০০ দিনের কাজ করে আয় করেন। সেই টাকা আর সরকারি ভাতায় সংসার চলে। স্কুলে পড়ে ভাই অনুপম।
গত ডিসেম্বরে অসুস্থ হয়ে পড়েন অঙ্কিতার মা রুবিদেবী। জানা যায়, ক্যানসার। অঙ্কিতা বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছিলেন, হাসপাতালে রেখে লাভ নেই।’’ এরপর মা’কে বাড়িতে নিয়ে আসেন অঙ্কিতারা। কন্যার কথায়, ‘‘শনিবার রাত থেকেই মা প্রবল যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। রাত তিনটের পর আমরা ঘুমিয়ে পড়তেই মা বাথরুমে গিয়ে গায়ে আগুন দেয়।’’
তবে তিনি কাঁদেননি। অঙ্কিতা বললেন, ‘‘আমি কাঁদব না। মা শিখিয়েছিল, কাঁদবি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy