২০১৩ সালে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছিল, ১০ লক্ষ টাকার বন্ড দিয়ে মেডিক্যালের স্নাতকোত্তর পাঠ নিতে হবে। প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে যে-সব চিকিৎসক স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা পেয়েছেন, এ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে নির্দিষ্ট কয়েক বছর কাজ না-করলে তাঁদের ‘বন্ড’-এর টাকা মেটাতে বলে বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে তৃণমূল সরকার। আদালত অবমাননা সংক্রান্ত একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছেন, ওই সব বিজ্ঞপ্তি এখন রূপায়ণ করা যাবে না। সব বিজ্ঞপ্তিই আপাতত স্থগিত। তাই কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন ডাক্তারেরা।
বিচারপতির নির্দেশ, স্বাস্থ্যসচিবকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, কেন আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হল এবং কেন তিনি শাস্তি পাবেন না।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, ২০১৩ সালে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়, ১০ লক্ষ টাকার বন্ড দিয়ে মেডিক্যালের স্নাতকোত্তর পাঠ নিতে হবে। সেই ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা পাওয়ার পরে এক বছর কাজ করতে হবে রাজ্যের হাসপাতালে। তা না-করলে বন্ডের ১০ লক্ষ টাকা মেটাতে হবে পাঁচ কিস্তিতে। পরের বছর ফের একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পিজি ডিপ্লোমা কোর্স পাশ করে রাজ্যে কাজ করতে হবে অন্তত দু’বছর। না-করলে বন্ডের ২০ লক্ষ টাকা মেটাতে হবে। এমডি-এমএস পাশ করে রাজ্যে তিন বছর কাজ করতে হবে। না-করলে মেটাতে হবে বন্ডের ৩০ লক্ষ টাকা।
বিজ্ঞপ্তির বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা করেন ১৩৯ জন চিকিৎসক। তাঁদের আইনজীবী প্রতীক ধর জানান, মামলার আবেদনে বলা হয়, আইন পাশ না-করে কেবল বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চিকিৎসকদের কাজ করতে বাধ্য করানো যায় না। কারণ, মামলাকারীদের অনেকেই আরও উচ্চশিক্ষিত হতে চান। বিচারপতি মুখোপাধ্যায় ৩ নভেম্বর বলেছিলেন, রাজ্য সরকার যে-বন্ড দিতে বলছে, তা আসলে ‘বন্ডেজ’ (বন্দিদশা)। তিনি নির্দেশ দেন, পাঁচ কিস্তিতে ১০ লক্ষ টাকা বন্ড দিতে হবে এবং দুই বা তিন বছর নয়, চিকিৎসকেরা এ রাজ্যে কাজ করবেন এক বছর।
প্রতীকবাবু জানান, সেই নির্দেশ কার্যকর না-হওয়ায় আদালত অবমাননার মামলা হয় বিচারপতি মুখোপাধ্যায়ের আদালতে। ২৯ জুন তার শুনানিতে বিচারপতি মুখোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মাকে ৬ জুলাই তাঁর আদালতে হাজির হতে হবে।
এ দিন মামলাটি উঠলে রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল অভ্রতোষ মজুমদার জানান, স্বাস্থ্যসচিব হাজির আছেন। তবে শুনানি কিছু দিনের জন্য মুলতুবি রাখার আবেদন জানানো হচ্ছে। কারণ, রাজ্য সরকার আপিল করেছে। চিকিৎসকদের আইনজীবী জানান, রাজ্য যদি আপিল করে থাকে, তার নথি মামলার আবেদনকারীদের দেওয়া উচিত ছিল। তা করা হয়নি। সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে আট মাসেও বিচারপতির নির্দেশ রূপায়ণ করেনি।
বিচারপতি সরকারি আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপিল করার অধিকার আছে রাজ্য সরকারের। কিন্তু সে-ক্ষেত্রে ৩ নভেম্বর যে-নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তার উপরে ডিভিশন বেঞ্চ থেকে তাদের স্থগিতাদেশ নিয়ে আসতে হবে অথবা আদালতের সেই নির্দেশ রূপায়ণ করতে হবে।’’ একই সঙ্গে বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘রাজ্য সরকার এই ভাবে হাইকোর্টের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy