Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বেআইনি ব্রডব্যান্ড জাল ভিন্‌ রাজ্যেও, ধৃত কর্তা

ব্যারাকপুর থেকে বিরাটির দিকে যাওয়ার কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের মোড় থেকে খানিকটা এগোলেই পেল্লায় সাইজের চারতলা বাড়ি। নীচে লোহার দোকান। তার ঠিক পাশের দোকানটায় শাটার ফেলা। চারতলায় ঝাঁ-চকচকে অফিস— ‘এক্স-নেট’। অফিসে ছড়িয়েছিটিয়ে গোটা দশেক ডেস্কটপ এবং ল্যাপটপ।

বেআইনি ব্রডব্যান্ড পরিষেবার সরঞ্জাম। মঙ্গলবার টিটাগড়ের শিউলি এলাকায় একটি ব্রডব্যান্ড অফিসে হানা দিয়ে এ-রকম বহু সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করে সিআইডি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

বেআইনি ব্রডব্যান্ড পরিষেবার সরঞ্জাম। মঙ্গলবার টিটাগড়ের শিউলি এলাকায় একটি ব্রডব্যান্ড অফিসে হানা দিয়ে এ-রকম বহু সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করে সিআইডি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

অত্রি মিত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০২
Share: Save:

ব্যারাকপুর থেকে বিরাটির দিকে যাওয়ার কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের মোড় থেকে খানিকটা এগোলেই পেল্লায় সাইজের চারতলা বাড়ি। নীচে লোহার দোকান। তার ঠিক পাশের দোকানটায় শাটার ফেলা। চারতলায় ঝাঁ-চকচকে অফিস— ‘এক্স-নেট’। অফিসে ছড়িয়েছিটিয়ে গোটা দশেক ডেস্কটপ এবং ল্যাপটপ। দেওয়ালে বিরাট বড় এলসিডি স্ক্রিনে অহরহ ফুটে উঠছে বিভিন্ন ইন্টারনেট পরিষেবা গ্রাহকদের সর্বশেষ পরিস্থিতির খুঁটিনাটি খতিয়ান।

মঙ্গলবার দুপুরে কাচের দরজা ঠেলে সেই অফিসে ঢুকে কর্মীদের কাছ থেকে এক-এক করে মোবাইলগুলো কেড়ে নিলেন সিআইডি অফিসারেরা। তত ক্ষণে সংস্থার ডিরেক্টর নিজামুদ্দিন মণ্ডলকে ডেকে টেলিকম এনফোর্সমেন্ট রিসোর্স অ্যান্ড মনিটরিং (টার্ম) সেলের কর্তারা অন্যতম জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দিয়েছেন। টানা চার ঘণ্টা জেরার পরে টিটাগড় থানা এলাকার শিউলির বাসিন্দা নিজামুদ্দিনকে ভারতীয় টেলিগ্রাফ আইন, তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের আওতায় গ্রেফতার করল সিআইডি-র সাইবার সেল। তাঁর দাদা নাসিরুদ্দিনকেও আটক করা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।

অভিযোগ, ব্যারাকপুরে বসে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা তো বটেই, এমনকী ঝাড়খণ্ডের মধুপুর, বিহারের ভাগলপুর, আরা এবং পটনার কয়েকটি জায়গাতেও বেআইনি ব্রডব্যান্ড পরিষেবা দিচ্ছিল ‘এক্স-নেট ব্রডব্যান্ড সার্ভিস’। অভিযোগ, সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর নিজামুদ্দিন মণ্ডল গুজরাতের একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে নামমাত্র ব্রডব্যান্ডের লাইসেন্স নিয়ে বেআইনি ‘ব্রডব্যান্ড সার্ভিস প্রোভাইডার’-এর ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন।

এক্স-নেটের ওই অফিসে তল্লাশি চালিয়ে এবং নিজামুদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যা পাওয়া গেল, তা দেখে অভিযানে আসা অফিসারেরা থ। এত বড় বেআইনি ব্রডব্যান্ড পরিষেবা দেওয়ার জন্য জনা দশেক কর্মী নিয়োগ করেছেন নিজামুদ্দিনেরা। ওই সব কর্মীকে পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দেওয়া হয়। এক কর্মীর কথায়, ‘‘মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা পাশ করে এখানে চাকরি পেয়েছিলাম। কিন্তু এটা যে এত বড় বেআইনি কারবার, ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।’’

সিআইডি সূত্রের খবর, জেরায় নিজামুদ্দিন জানিয়েছেন, কেব্‌ল টিভি-র ব্যবসায়ীদের ব্রডব্যান্ড পরিষেবা দিচ্ছেন তাঁরা। কেব‌্‌ল টিভি সংস্থাগুলি এক্স-নেটের কাছ থেকে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা নিয়ে তার মাধ্যমে চ্যানেলের ছবি ছড়িয়ে দিচ্ছেন গ্রাহকদের ঘরে ঘরে। এবং তাঁদের কাছ থেকে প্রতি মাসে মোটা টাকা গুনে নিচ্ছে সংস্থাটি। হিসেব বলছে, প্রতি মাসে সংস্থাটির আয় প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা।

টার্ম সেলের ডিরেক্টর অরূপ দাস এ দিন বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ চালানোর চক্রকেও আমরা ধরেছি। কিন্তু বেআইনি ভাবে টেলিকম নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফেলার চক্র এই প্রথম আমাদের নজরে এল।’’ এই ধরনের চক্রের কাজকর্ম দেশের নিরাপত্তার দিক থেকে আত্যন্ত আশঙ্কার বলেই মনে করেন অরূপবাবু।

তিনি বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে ব্যবসা করে টাকা তোলা বা জালিয়াতি তো আছেই। তার চেয়েও বড় চিন্তার বিষয় হল, প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এমন টেলিকম নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফেলা। এরা তো সার্ভার থেকে শুরু করে টান্সমিটার, মাস্ক, ডি-মাস্ক, অপটিক্যাল ফাইবার— সব কিছুই নিজেরা ব্যবহার করছিল!’’

অরূপবাবুদের বক্তব্য, এখানেই তদন্ত শেষ নয়। বরং শুরু। এক্স-নেট সংস্থার কাগজপত্র, তথ্যভাণ্ডার ঘেঁটে আরও বড় চক্রের এবং বেআইনি কাজকর্মের হদিস মিলতে পারে বলে মনে করছে টার্ম সেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Broadband connection
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE