Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কমিশন তো হয়, কাজ হয় কতটুকু

বসিরহাটে অশান্তির পিছনে কাদের মদত ছিল, তা খুঁজতেই বিচার বিভাগীয় কমিশন গড়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। কার্যকাল বেঁধে দিয়ে জানানো হয়েছে, প্রথম শুনানির দিন থেকে ছ’মাসের মধ্যে কমিশনকে রিপোর্ট দিতে হবে। কমিশনের মাথায় আছেন কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৌমিত্র পাল।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অত্রি মিত্র
শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৭ ০৫:১৯
Share: Save:

অশুভের দাপটে বাদুড়িয়া-বসিরহাটে গোলমাল বেধেছিল। মানুষেরই শুভবুদ্ধি তা নিয়ন্ত্রণে এনেছে। কিন্তু বসিরহাটের হাঙ্গামার তদন্তে তৈরি বিচার বিভাগীয় কমিশনের ফল কী হবে, তা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের একাংশের কর্তারাই সংশয়ে। কেন? কারণ, গত ছ’বছরে কমিশন হয়েছে অন্তত ১০টি। কিন্তু নিট ফল শূন্য!

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছ’বছরের শাসনে গোটা দশেক বিচার বিভাগীয় কমিশন তৈরি হয়েছে। নবান্নের কর্তারা জানাচ্ছেন, তার মধ্যে মাত্র দু’টি কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়েছে। কিন্তু সেই রিপোর্ট দিনের আলো দেখেনি। সাতটি কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়েনি। আর বসিরহাট নিয়ে কমিশন সবে তৈরি হয়েছে।

বসিরহাটে অশান্তির পিছনে কাদের মদত ছিল, তা খুঁজতেই বিচার বিভাগীয় কমিশন গড়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। কার্যকাল বেঁধে দিয়ে জানানো হয়েছে, প্রথম শুনানির দিন থেকে ছ’মাসের মধ্যে কমিশনকে রিপোর্ট দিতে হবে। কমিশনের মাথায় আছেন কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৌমিত্র পাল। ২ জুলাই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট থেকে উত্তেজনা ছড়ায় উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া, বসিরহাট, দেগঙ্গা ও স্বরূপনগর থানা এলাকায়। কয়েকটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমে কিছু ভিত্তিহীন খবর প্রচারের জেরে সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার করে সরকারের মনে হয়েছে, এর পিছনে গভীর পরিকল্পিত চক্রান্ত রয়েছে। ষড়যন্ত্রের উৎস কী, সেটাই খুঁজে বার করবে কমিশন।

কিন্তু ইতিপূর্বে ন’টি কমিশন গড়ে যে-ফল মিলেছে, তা থেকে প্রশ্ন উঠেছে, বসিরহাটের ঘটনার আদৌ কোনও কিনারা হবে কি? ২০১১ সালের মে মাসে ক্ষমতায় আসার পরে পরেই কয়েকটি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে বিচার বিভাগীয় কমিশন তৈরি করেছিল মমতা প্রশাসন। তার মধ্যে সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে ২১ জুলাইয়ের গুলিচালনা, বরাহনগর-কাশীপুর গুলিচালনা, রাজারহাটের জমি বিলি, বিডিও কল্লোল শূরের অপমৃত্যু, আনন্দমার্গী হত্যাকাণ্ডও রয়েছে। পরবর্তী সময়ে মগরাহাটে গুলিচালনা, তেহট্টের গুলিচালনা, সারদা কেলেঙ্কারি নিয়েও গড়া হয়েছে বিচার বিভাগীয় কমিশন। তৈরির ছ’মাসের মধ্যে বিধানসভায় রিপোর্ট পেশ করার কথা প্রতিটি বিচার বিভাগীয় কমিশনেরই। কিন্তু বেশির ভাগ কমিশন তৈরির পরে পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। অথচ রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, কর্তা জানাচ্ছেন, কল্লোল শূরের মৃত্যু এবং ২১ জুলাইয়ের গুলিচালনার ঘটনা ছাড়া অন্য কোনও কমিশনেরই রিপোর্ট জমা পড়েনি। এবং ওই দু’টি ঘটনার রিপোর্ট জমা পড়লেও তা পেশ হয়নি বিধানসভায়।

কেন এই টালবাহানা?

নবান্নের কর্তাদের যুক্তি, বেশ কিছু ক্ষেত্রে কমিশনের অফিস পেতে পেতে দেরি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বিচারক ঠিক করতেই ছ’মাস পেরিয়ে গিয়েছে। তার উপরে সাক্ষ্য নেওয়া, শুনানি সম্পূর্ণ করে রিপোর্ট তৈরি করতে গড়িয়ে গিয়েছে বছরের পর বছর। আবার সারদা কমিশনের মতো কয়েকটি কমিশনের কাজকর্ম গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু তার রিপোর্ট কী হবে, কবেই বা জমা পড়বে, তার সদুত্তর মেলেনি নবান্নের তাবড় কর্তাদের কাছে। নিকট অতীতের বিভিন্ন কমিশনের এই অবস্থা দেখেই বসিরহাট কমিশনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় জেগেছে নবান্নের একাংশে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE