Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গর্ভপাতে অনুমতি রাজ্যের দম্পতিকে

এ দেশে ভ্রূণের বয়স ২০ সপ্তাহ হয়ে গেলে আর গর্ভপাত করানো যায় না। সেই কারণেই বারাসতের অন্তঃসত্ত্বা শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের জটিল হৃদরোগ ধরা পড়েছে। জন্মের পরেই কঠিন অস্ত্রোপচার দরকার হবে। তাতেও বাঁচার আশা বিশেষ থাকবে না বলেই চিকিৎসকদের মত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৭ ০৪:১৪
Share: Save:

ভ্রূণের বয়স ২৬ সপ্তাহ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও গর্ভপাতের অনুমতি পেলেন বারাসতের দম্পতি। সন্তান প্রসব করা বা না করা নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার বলে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্ট আজ এই অনুমতি দিল।

এ দেশে ভ্রূণের বয়স ২০ সপ্তাহ হয়ে গেলে আর গর্ভপাত করানো যায় না। সেই কারণেই বারাসতের অন্তঃসত্ত্বা শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের জটিল হৃদরোগ ধরা পড়েছে। জন্মের পরেই কঠিন অস্ত্রোপচার দরকার হবে। তাতেও বাঁচার আশা বিশেষ থাকবে না বলেই চিকিৎসকদের মত। সে কথা জেনেই গর্ভপাতের কথা ভাবেন ওই দম্পতি। ওঁদের আবেদনে আইনি গর্ভপাতের সময়সীমা ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত বেঁধে রাখার আইনকেও চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। যুক্তি ছিল, ভ্রূণের ২০ সপ্তাহের মধ্যে কিছু সমস্যা ধরা গেলেও অনেক জটিল শারীরিক সমস্যা ২০ সপ্তাহের পরেই ধরা পড়ে।

আজ বিচারপতি দীপক মিশ্র ও বিচারপতি এম খানউইলকরের বেঞ্চ বলেছে, সব মহিলারই তার নিজের শরীরের উপর অলঙ্ঘনীয় অধিকার রয়েছে। শিশু বাঁচবে না জেনেও সেই ভ্রূণকে গর্ভে ধরে রাখা যে অতীব যন্ত্রণাদায়ক, আদালত তা মেনে নিয়েছে। ফলে বারাসতের অন্তঃসত্ত্বা শিশুর জন্ম দিলে যে অপরিসীম মানসিক আঘাত পাবেন, তা-ও মেনে নিয়েছেন বিচারপতিরা।

আরও পড়ুন: ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভে লাঠি মোদীর রাজ্যেই

আদালতের নির্দেশ, অবিলম্বে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে গর্ভপাতের প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে হবে। দম্পতি আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরেই কোর্টের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এসএসকেএম হাসপাতালে সাতজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করে দিয়েছিল। মহিলার শারীরিক অবস্থা, ভ্রূণের অবস্থা এবং গর্ভপাত হলে মায়ের ঝুঁকির বিষয়টি খতিয়ে দেখে সেই বোর্ডই রিপোর্ট দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টকে। মহিলাকেও সেই রিপোর্ট পড়ে দেখার জন্য সময় দিয়েছিলেন বিচারপতিরা। আজ আদালত জানাল, বোর্ডের রিপোর্টের ভিত্তিতেই গর্ভপাতের আর্জিতে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে।

চলতি বছরের শুরুতে মুম্বইয়ের এক অন্তঃসত্ত্বাকেও তাঁর ২৪ সপ্তাহের ভ্রূণের গর্ভপাত করানোর অনুমতি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেক্ষেত্রেও গর্ভস্থ শিশুর প্রাণঘাতী রোগ ধরা পড়েছিল। এ সব ক্ষেত্রে আদালতে ছোটাছুটি ও হয়রানিতে দাঁড়ি টানতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক গর্ভপাত আইন সংশোধনের সিদ্ধান্তও নিয়েছে। ২০ সপ্তাহের সময়সীমা বাড়িয়ে ২৪ সপ্তাহ করতে চাইছে মন্ত্রক। কিন্তু এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি। বারাসতের দম্পতির আইনজীবীদের দাবি, ১৯৭১-এ যখন গর্ভপাত আইন তৈরি হয়েছিল, তখন হয়তো ২০ সপ্তাহের সময়সীমা ঠিক ছিল। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের পরে গর্ভপাত হলে মায়ের প্রাণের ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এখন চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে ২৬ সপ্তাহ বা তার পরেও গর্ভপাত সম্পূর্ণ সুরক্ষিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE