ঘরে-বাইরে ইংরেজির প্রয়োজন কতটা, শহরের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামও তা বুঝছে মর্মে মর্মে। বাম জমানায় দীর্ঘদিন ইংরেজিকে দূরে রাখার ক্ষত সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে হাড়ে হাড়ে। তার পরেই প্রাক্-প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠন চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু যাঁরা পড়াবেন, সেই শিক্ষকেরই যে বেজায় অভাব! এতটাই যে, রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে প্রাক্-প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরেজি মাধ্যম চালু করার পরিকল্পনা গিয়েছে থমকে।
বেসরকারি ইরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলি ছাত্রছাত্রী টেনে নেওয়ায় শুধু কলকাতা নয়, জেলা শহরগুলিতেও সরকারি স্কুলের প্রতি অভিভাবকদের আকর্ষণ কমছে। পড়ুয়া ধরে রাখতে ২০০৯ সালে, বাম আমলেই সরকারি স্কুলে প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরেজি মাধ্যমের শাখা চালু করার ভাবনা শুরু হয়েছিল। ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ইংরেজি মাধ্যম শাখা খোলাও হয়েছিল কয়েকটি স্কুলে।
তৃণমূল ক্ষমতায় এসে ২০১২ সালে প্রাক্-প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি মাধ্যম চালু করার পরিকল্পনা তৈরি করে। কিন্তু সেখানে পড়ানোর জন্য যথেষ্ট সংখ্যায় শিক্ষক মিলছে না। ওই শাখার জন্য সরকারি স্কুলগুলিতে দু’টি করে শিক্ষক-পদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও শিক্ষক পাওয়া যায়নি। ওই সব স্কুলের প্রধানদের মতে, মূলত শিক্ষকের অভাবেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা যাচ্ছে না।
সাখাওয়াত মেমোরিয়াল সরকারি গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক পাপিয়া নাগ জানান, ২০১০ সালে তাঁর স্কুলে একাদশ-দ্বাদশে ইংরেজি মাধ্যম বিভাগ চালু হয়েছিল। সেই সময় যে-ক’জন শিক্ষক দেওয়ার কথা ছিল, তাঁদের পাওয়া গিয়েছে গত বছর।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগে অনেক সময় চলে যায়। বিধাননগর সরকারি স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তারাপদ সাঁতরা বলেন, ‘‘সরকারি স্কুলগুলিতে ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠন চালু হলে তবেই সেখানে সন্তানদের ভর্তির প্রবণতা বাড়বে অভিভাবকদের মধ্যে। সেই জন্য দ্রুত ওই বিষয়ের শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি।’’ শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সরকারি স্কুলে প্রাথমিক স্তরে যে-ক’টি বিভাগ থাকার কথা, তাতে সব ক্ষেত্রে শিক্ষক দেওয়া যায় না। তাই কখনও কখনও দু’টি বিভাগকে এক করে পড়ান এক জন শিক্ষক। এই অবস্থায় যথেষ্ট শিক্ষকের বন্দোবস্ত না-করে ইংরেজি মাধ্যম চালু হলে সমস্যা বাড়বে। ছাত্র টানার উদ্দেশ্যও পূরণ হবে না।
রাজ্যের সরকারি স্কুলের মধ্যে আছে হিন্দু স্কুলও। তাদের ২০০ বছর পূর্তি হল ২০১৭-তেই। চলতি শিক্ষাবর্ষেই পড়ুয়া কমে যাওয়ায় প্রথা ভেঙে সেখানে পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি করতে হয়েছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি সামন্ত বলেন, ‘‘প্রাক্-প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরেজি চালু হলে কিছু অভিভাবক অন্তত বেসরকারি স্কুলের বদলে এই সব স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করানোর ব্যাপারে আগ্রহ দেখাবেন।’’
কিন্তু শিক্ষক মিলবে কোথায়, প্রশ্ন সেটাই। সেখানেই আটকে থাকছে ইংরেজি মাধ্যম চালু করার প্রকল্প।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy