Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দ্বন্দ্ব কাটিয়ে একই মঞ্চে

 জেলা নেতৃত্ব পারেননি। দলের পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাওয়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কাজ দিল। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফরের আগেই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নিয়ে এক মঞ্চে উঠলেন রঘুনাথপুরের শাসকদলের দুই নেতা।

কাছাকাছি: মাইক হাতে বিধায়ক। একেবারে বাঁ দিকে বসে শান্তিভূষণবাবু। সড়বড়ি কমিউনিটি হলে। নিজস্ব চিত্র

কাছাকাছি: মাইক হাতে বিধায়ক। একেবারে বাঁ দিকে বসে শান্তিভূষণবাবু। সড়বড়ি কমিউনিটি হলে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:১৭
Share: Save:

জেলা নেতৃত্ব পারেননি। দলের পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাওয়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কাজ দিল। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফরের আগেই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নিয়ে এক মঞ্চে উঠলেন রঘুনাথপুরের শাসকদলের দুই নেতা। দেড় বছর আগে বিধানসভা ভোটের পর থেকে রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি ও নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদবের মধ্যে যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, পঞ্চায়েত ভোটের আগে শনিবার তাঁদের পাশাপাশি দেখতে পেয়ে স্বস্তি পেলেন দলের কর্মীরা।

এ দিন সড়বড়ি কমিউনিটি হলে এক মঞ্চে দু’জনকে দেখে কর্মীদের মধ্যে কানাঘুঁষো শুরু হয়ে গিয়েছিল। পরে যখন দুই নেতাকে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে দেখা গেল, তখন কর্মীদের অনেকে হাঁ হয়ে যান। তবে দু’পক্ষের সম্পর্কের শীতলতা কেটে গিয়েছিল শুক্রবারই। সে দিন দুপুরে সড়বড়ি গ্রামে পূর্ণচন্দ্রবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন শান্তিভূষণবাবু। দু’জনের মধ্যে ঘণ্টা দেড়েক আলোচনা হয়। তবে কী দ্বন্দ্ব পুরোপুরি মিটে গেল?

প্রশ্ন শুনে এ দিন শান্তিভূষণবাবু পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘আমাদের আবার কবে দ্বন্দ্ব ছিল? সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাই দলের বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যানের (পূর্ণচন্দ্র) বাড়িতে গিয়ে নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরি আলোচনা করেছি। এ দিনও সড়বড়ির সভাতেও ছিলাম।’’ আর বিধায়ক দাবি করেছেন, ‘‘রঘুনাথপুর বিধানসভা এলাকায় আমাদের দলে কারও মধ্যেই দ্বন্দ্ব নেই। ও সব বিরোধীদের অপপ্রচার।”

তাঁরা যাই বলুন, রঘুনাথপুর কেন্দ্রে বিধানসভা ভোটে নিতুড়িয়া এলাকা থেকে ভোট কম পাওয়ার পরেই বিধায়কের গোষ্ঠী দলের তৎকালীন ব্লক সভাপতি শান্তিভূষণবাবুর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুলেছিলেন। সেই থেকে আর এক সঙ্গে ওই দুই নেতাকে দেখা যায়নি। এরই মধ্যে জেলার অন্যত্র নতুন ব্লক কমিটি গঠন করা হলেও, দুই নেতার দ্বন্দ্বে নিতুড়িয়ায় তা এখনও গঠিত হয়নি।

তাঁদের মনোমালিন্যে আখেরে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে বুঝে জেলা নেতৃত্ব মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। গত মাসে পুরুলিয়ায় দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের রণকৌশল স্থির করতে বৈঠক করেছিলেন জেলার পর্যবেক্ষক যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেও দুই শিবিরের নেতা-কর্মীরা একে অন্যের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। বিধানসভা নির্বাচনে শান্তিভূষণবাবু তাঁর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত করেছেন বলে অভিষেকের কাছে নালিশ করেন বিধায়ক। সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনকেই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে এক যোগে কাজ করার নির্দেশ দেন। দল সূত্রের খবর, তাঁদের দ্বন্দ্বে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের ফল খারাপ হলে, সবার বিরুদ্ধেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন পর্যবেক্ষক।

সেই ওষুধেই কাজ দিয়েছে বলে মনে করছেন দলের বহু নেতা-কর্মী। তা ছাড়া আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলকে পুরোপুরি পাশে পেতে শান্তিভূষণবাবুর তরফেও সমঝোতা করা জরুরি হয়ে উঠেছিল। দল সূত্রের খবর, কিছু দিন ধরেই তিনি বিধায়কের কাছে সমঝোতার বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করছিলেন। শেষে শুক্রবার এক অনুগামীকে নিয়ে বিধায়কের বাড়িতে যান শান্তিভূষণবাবু। এ দিন মঞ্চ থেকে শান্তিভূষণবাবুকে ডেকে নেন পূর্ণচন্দ্রবাবু। সব দেখে এক কর্মীর মন্তব্য— ‘‘ফের বিধানসভা ভোটের আগের চেনা ছবিটা ফিরে এসেছে। স্বস্তি পেলাম আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Group Clash TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE