মুখোমুখি: বাঁকুড়া পুলিশ লাইনে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: শুভ্র মিত্র
সমস্যাটা ছাই চাপা আগুনের মতো লুকিয়ে ছিল এত দিন। শেষ পর্যন্ত তা এল খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই। প্রশাসনিক বৈঠকের মধ্যেই যা নিয়ে শোরগোল উঠে গেল।
দীর্ঘ দিন ধরে বাঁকুড়া মেডিক্যালের মর্গে জমে থাকা বেওয়ারিশ দেহ সৎকারের কাজ আটকে ছিল। তাতে দিনের পর দিন একের পর এক দেহ ডাঁই হয়ে জমে রয়েছে মর্গের একটি ঘরে। এতে দুর্গন্ধ তো বটেই, এই অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন মর্গের কর্মীরা। মর্গে আসা সাধারণ লোকজনও নাজেহাল হচ্ছেন।
এ দিন বাঁকুড়া মেডিক্যালের মর্গের পরিকাঠামোর সেই কঙ্কাল বেরিয়ে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই। বাঁকুড়ার বিধায়ক শম্পা দরিপা মুখ্যমন্ত্রীকে বাঁকুড়া মেডিক্যালের সমস্যার কথা বলতে গিয়ে বলেন, “এখানকার মর্গের অবস্থা খুবই খারাপ। যে কোনও সময় বিপদ হতে পারে। এক হাজার মৃতদেহ পড়ে আছে মর্গে!’’ শম্পাদেবী জানান, কিছু দিন আগে এক সিভিক ভলান্টিয়ার মারা যাওয়ায় মর্গে তিনি গিয়েছিলেন।
মৃতদেহের সংখ্যা শুনেই দৃশ্যত চমকে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের নজর টেনে তিনি বলেন, “কী বলছে! এক হাজার মৃতদেহ পড়ে আছে!” এরপরেই তিনি জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর কাছে বিষয়টি জানতে চান। মৌমিতাদেবী বলেন, “প্রায় দশ থেকে বারো বছর ধরে অজ্ঞাত পরিচয় দেহ পড়ে রয়েছে। হিন্দু সৎকার সমিতির মাধ্যমে দেহগুলির সৎকার করার জন্য আমরা পুরসভাকে বলেছি।’’ এরপরেই জেলাশাসককে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘‘আগে কেন সমস্যাটি দেখা হয়নি?’’ অজ্ঞাত পরিচয় দেহ কত দিন রাখা যায়, সে বিষয়ে তিনি রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে জিজ্ঞাসা করেন।
সুরজিৎবাবু জানান, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দেহ ফেলে রেখে তারপর সরকারের তরফে সৎকার করে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, নিয়ম অনুযায়ী যত দিন দেহ রাখার, তা রেখেই সৎকার করে দিতে হবে। সৎকারের দায়িত্ব প্রশাসনের তরফে বাঁকুড়া পুরসভাকে দেওয়া হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানান জেলাশাসক। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, “এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দেহ সৎকার করে জায়গাটাকে ভাল করে পরিষ্কার করতে হবে। যাতে দূষণ মুক্ত হয়। তা না হলে সেখান থেকে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব হবে।”
এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী বাঁকুড়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিষয়টি পরিচালনা করার নির্দেশ দেন। স্বাস্থ্য দফতর পুরসভাকে সাহায্য করবে। জেলাশাসক, মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক, স্থানীয় বিধায়ক ও পুরপ্রধানকে নিয়ে কমিটি গড়ে গোটা কাজটি ‘চটপট’ করে ফেলতে হবে। বাঁকুড়ার পুরপ্রধানের কাছে মমতা জানতে চান, ‘‘কত দিনের মধ্যে কাজটি শেষ করা হবে?’’ মহাপ্রসাদবাবু জানান, দিন পনেরোর মধ্যেই সৎকার সেরে ফেলা হবে। চলতি মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলেন মমতা।
এরপরেই শম্পা দরিপা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বাঁকুড়ায় একটি নতুন মর্গ গড়ার প্রস্তাব দেন। মুখ্যমন্ত্রী সেই মর্গ তৈরির নির্দেশ দেন। এক রাজ্য প্রশাসনিক কর্তাকে নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে দ্রুত নতুন মর্গের জন্য টাকা বরাদ্দ করে দেওয়ার। তিনি বলেন, “পরের বৈঠকে এসে যেন না শুনি যে নতুন মর্গ হয়নি।”
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে মর্গের সমস্যার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে জেনে শাপ মুক্তি হবে বলেই আশাবাদী মর্গের কর্মীরা। বাঁকুড়া মেডিক্যালের মর্গের এক কর্মী দাবি করেন, “বাঁকুড়া মেডিক্যাল ও পুলিশের উদ্ধার করা অন্তত দেড় হাজার বেওয়ারিশ লাশ পড়ে রয়েছে মর্গে। গত দেড় বছর ধরে সৎকার বন্ধ রয়েছে।”
কেন বন্ধ রয়েছে ওই কাজ? মর্গ সূত্রে জানা যাচ্ছে, এখন মাত্র এক জন চুক্তিভিত্তিক ডোম রয়েছেন। দেহ দাহ করার জন্য বরাদ্দ অর্থও কম। সে জন্য সৎকারের কাজে কোনও উৎসাহ দেখাচ্ছেন না ডোম। নতুন মর্গ গড়ে দিলে কর্মী নিয়োগ হবে বলেও আশাবাদী মর্গের আধিকারিকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy