Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আজ বিকেলে পাহাড় নিয়ে উত্তরকন্যায় ফের সর্বদলীয় বৈঠক

পাহাড়ে প্রায় তিন মাস ধরে বন্‌ধ চলছে। আগের সর্বদল বৈঠক সেরে ফেরার পরে বিনয় তামাঙ্গ ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্‌ধ শিথিল করার কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা ঘটেনি। বরং বিমল গুরুঙ্গ তাঁর গোপন ডেরা থেকে পাল্টা বন্‌ধ চালিয়ে যাওয়ার আবেদন রাখেন পাহাড়বাসীর কাছে।

স্বাগত: বাগডোগরা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভ্যর্থনা জানালেন পাহাড়বাসীরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

স্বাগত: বাগডোগরা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভ্যর্থনা জানালেন পাহাড়বাসীরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৪
Share: Save:

পাহাড়ের গুরুঙ্গপন্থী তিন বিধায়ক যদি আজ, মঙ্গলবার সর্বদল বৈঠকে হাজির থাকেন, তা হলে প্রশাসন তাঁদের স্বাগত জানাবে। এ দিন শিলিগুড়িতে পৌঁছে সে কথাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘যে কোনও জনপ্রতিনিধিই বৈঠকে স্বাগত।’’

পাহাড়ে প্রায় তিন মাস ধরে বন্‌ধ চলছে। আগের সর্বদল বৈঠক সেরে ফেরার পরে বিনয় তামাঙ্গ ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্‌ধ শিথিল করার কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা ঘটেনি। বরং বিমল গুরুঙ্গ তাঁর গোপন ডেরা থেকে পাল্টা বন্‌ধ চালিয়ে যাওয়ার আবেদন রাখেন পাহাড়বাসীর কাছে। গুরুঙ্গপন্থীরা বন্‌ধের সমর্থনে প্রায় সর্বত্র মিছিল করেন। পাহাড়ের মানুষের একটি বড় অংশের মতে, গুরুঙ্গের প্রতি ভরসায় নয়, বরং গুরুঙ্গপন্থীদের ভয়েই দোকান খুলতে পারছেন না তাঁরা।

মঙ্গলবার উত্তরকন্যায় হবে সর্বদল বৈঠক। তার আগে রাজ্য প্রশাসনের কাছে পাহাড়কে স্বাভাবিক করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। এক সূত্রের দাবি, এই অবস্থায় তিন মোর্চা বিধায়ক যখন বৈঠকে হাজির থাকতে আবেদন জানিয়েছেন, তখন কৌশলগত ভাবেই তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে রাজ্য। নবান্নের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, রবিবার সকালে তিন বিধায়ক কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে আবেদনের চিঠিটি দিয়ে আসেন। এর পরে পুলিশ মারফত ৩ জনকে ইতিবাচক বার্তাই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও রবিবার মোর্চার তিন বিধায়কই সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছিলেন, কোনও বার্তাই তাঁরা পাননি। সে জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজে এ দিন আলাদা করে বিষয়টি উল্লেখ করেন।

এই বৈঠকে হঠাৎ কেন মোর্চা বিধায়কদের দাবি মেনে তাঁদের স্বাগত জানানো হচ্ছে? প্রশাসন সূত্রে বক্তব্য, এর পিছনে দু’টি কারণ রয়েছে। প্রথমত, বিধায়কেরা পাহাড়ের জনপ্রতিনিধি। তাই গুরুঙ্গপন্থী হলেও তাঁদের বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। তেমন কিছু হলে গুরুঙ্গরা প্রশ্ন তুলবেন, জনপ্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে বৈঠক হয় কী করে? দ্বিতীয়ত, বিনয় তামাঙ্গ যে বন্‌ধ শিথিলের ঘোষণা করেছিলেন, তা-ও বিশেষ কাজে দেয়নি। উল্টে গুরুঙ্গ তাঁকে দল-বিরোধী কাজের জন্য মোর্চা থেকে বহিষ্কার করেন। প্রশাসনের সাহায্যে বিনয় ও তাঁর সঙ্গী অনীত থাপা কয়েকটি মিছিল ও সভা করেছেন ঠিকই। কিন্তু তাতে পাহাড়ের পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি।

আরও পড়ুন: সিবিআই জেরায় মুকুল, শুভেন্দুর হাজিরা ইডি-তে

অথচ পাহাড়ের মানুষ যে টানা বন্‌ধে বিপর্যস্ত, সে কথা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা জানেন। কিন্তু পালিয়ে বেড়ানো গুরুঙ্গের ভয় এখনও পুরো মুছে যায়নি। তাই পাহাড়বাসীর মনে আস্থা জোগাতে প্রশাসন চেষ্টার কসুর করেনি। তাতে কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য কাজ হচ্ছে। কালিম্পং, কার্শিয়াঙে পুলিশ-প্রশাসনের আশ্বাস পাওয়ার পরে ব্যাঙ্ক খুলেছে এ দিন। স্কুলগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা হাজিরা দিয়েছেন। পড়ুয়ারাও শীঘ্রই আসতে শুরু করবে ধরে নিয়ে ক্লাসঘর সাফাই হয়েছে। দার্জিলিঙে ফুটপাথের বাজার বসেছে।

এই অবস্থায় পাহাড়কে স্বাভাবিক করাই মূল কাজ প্রশাসনের। তাই গুরুঙ্গপন্থী বিধায়কদেরও স্বাগত জানানো হয়েছে। যদিও গুরুঙ্গকে কোণঠাসা করে রাখার প্রক্রিয়া বন্ধ করেনি প্রশাসন। ইউএপিএ ও একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মোর্চা প্রধান। পাহাড়কে স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে আজ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকছেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশে ডিজি, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) এবং এডিজি (সিআইডি)। থাকবেন দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও গৌতম দেবও। পাহাড়ের প্রতিনিধি হিসেবে হাজির থাকবেন বিনয় তামাঙ্গ, অনীত থাপা, আর বি ভুজেল ও তাঁদের সহযোগীরা। থাকবে হরকাবাহাদুর ছেত্রীর জন আন্দোলন পার্টি ও মন ঘিসিঙ্গের জিএনএলএফ-ও। থাকবেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ
শান্তা ছেত্রী।

কিন্তু আশার আলো কি দেখা যাবে? দার্জিলিঙের বিধায়ক অমর সিংহ রাই বলেন, ‘‘পাহাড়বাসীরা যা চান সেটাই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE