Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভয় নেই, বলে মেয়েকে নিয়ে জলে নামেন বাবা

আড্ডার স্মৃতি বুকে নিয়ে উদ্ধারে বেরোন উপকূলরক্ষী-কর্তা। কাউকে বাঁচানো যায়নি। তবে রাতভর তল্লাশির পরে উদ্ধার হয়েছে তিনটি দেহই। স্ত্রী তন্দ্রিমা ও মেয়ে মাম্পুকে নিয়ে শনিবার সকালে ফ্রেজারগঞ্জ বে়ড়াতে যান হালতুর বাসিন্দা সোমরাজ। সঙ্গে ছিলেন কৈখালির বাসিন্দা সুমন্ত প্রামাণিক, স্ত্রী ঋষিতা ও তাঁদের বছর দু’য়েকের ছেলে।

বাঁ দিকে, বাবার সঙ্গে মাম্পু। ডান দিকে, ঋষিতা।

বাঁ দিকে, বাবার সঙ্গে মাম্পু। ডান দিকে, ঋষিতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও ফ্রেজারগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ১৩:১৫
Share: Save:

বহু বছর পরে বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল ফ্রেজারগঞ্জে উপকূলরক্ষী বাহিনীর স্টেশন কম্যান্ডান্ট অভিজিৎ দাশগুপ্তের। ঘণ্টা দু’য়েক আড্ডাও হয়েছিল। অভিজিৎবাবু ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি, সে দেখাই শেষ দেখা হবে!

শনিবার দুপুরে আড্ডা শেষে বিদায় নিয়েছিলেন অভিজিৎবাবুর বন্ধু, নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কম্যান্ডার সোমরাজ গুপ্ত (৩৭)। ঘণ্টাখানেক পরেই অভিজিৎবাবু খবর পান, হেনরিজ আইল্যান্ডের কাছে তলিয়ে গিয়েছেন সোমরাজ ও তাঁর মেয়ে সোমরিমা ওরফে মাম্পু (৭)। তলিয়ে গিয়েছেন পারিবারিক বন্ধু ঋষিতা প্রামাণিকও (৩০)।

আড্ডার স্মৃতি বুকে নিয়ে উদ্ধারে বেরোন উপকূলরক্ষী-কর্তা। কাউকে বাঁচানো যায়নি। তবে রাতভর তল্লাশির পরে উদ্ধার হয়েছে তিনটি দেহই। স্ত্রী তন্দ্রিমা ও মেয়ে মাম্পুকে নিয়ে শনিবার সকালে ফ্রেজারগঞ্জ বে়ড়াতে যান হালতুর বাসিন্দা সোমরাজ। সঙ্গে ছিলেন কৈখালির বাসিন্দা সুমন্ত প্রামাণিক, স্ত্রী ঋষিতা ও তাঁদের বছর দু’য়েকের ছেলে। বাহিনীর এক কর্তা জানান, পাখির ছবি তোলার শখ ছিল সোমরাজের। নতুন কেনা গাড়িতে সকলকে নিয়ে বকখালির হোটেল থেকে বিকেলে যান হেনরিজ আইল্যান্ডে। মেয়েকে নিয়ে জলে নেমেছিলেন তিনি। ছিলেন বাকিরাও।

ভরা কোটালের ভাটা চলছিল তখন। আচমকা সোমরাজের মেয়ে ও বন্ধুর স্ত্রী তলিয়ে যান। তাঁদের উদ্ধার করতে গিয়ে চোরাস্রোতে হারিয়ে যান সোমরাজও। শনিবার রাতে ৪ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে উদ্ধার হয় ঋষিতার দেহ। রবিবার লুথিয়ান দ্বীপের কাছে মেলে সোমরাজ ও মাম্পুর দেহ। উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই সৈকতে চোরাস্রোত থাকায় কেউ নামেন না। সোমরাজবাবুরা কেন যে নামলেন!’’

শোকার্ত: সদ্য স্বামী সন্তানকে হারিয়েছেন তন্দ্রিমা। নিজস্ব চিত্র

গুপ্ত পরিবার সূত্রের খবর, মেয়েকে নিয়ে সমুদ্রে নামতে সোমরাজকে নিষেধ করেছিলেন তন্দ্রিমা। কোনও ভয় নেই, বলেছিলেন সোমরাজ। কিন্তু তন্দ্রিমার চোখের সামনেই সব তছনছ হয়ে গেল।

উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রে খবর, পাঠভবন স্কুলের প্রাক্তনী সোমরাজ নৌসেনার চিকিৎসক ছিলেন। অবসর নেওয়ার পরে চাকরি করতেন কল্যাণীর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে, মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে। তন্দ্রিমা কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা অফিসার। কর্মজীবনে উপকূলরক্ষী বাহিনীতে ডেপুটেশনে ছিলেন সোমরাজ। অভিজিৎবাবুর সঙ্গে বন্ধুত্ব তখনই।

ঘটনার পর থেকে কার্যত নির্বাক হালতুর পি মজুমদার রোডের গুপ্ত বাড়ি। সোমরাজের বাবা-মা প্রদীপ ও মীনাক্ষী গুপ্ত গিয়েছেন বকখালি। পরিবার সূত্রের খবর, দার্জিলিং-গ্যাংটক বে়ড়াতে যাওয়ার কথা ছিল সোমরাজের। কিন্তু সাম্প্রতিক গোলমালের জেরে তা বাতিল করেন তিনি।

এলাকার বাসিন্দারা বলছিলেন, রোজ বাসে চেপে স্কুলে যেত মাম্পু। বাড়ি ফিরে স্কুলবাস থেকে নেমে ‘দাদুভাই, নেমে এসো’ বলে হাঁক পাড়ত। সেই ডাকটা আর শোনা যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE