Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চুল ধরে, চড় মেরে পুরভবনে হাতাহাতি দুই তৃণমূল কাউন্সিলরের

নিত্যানন্দের হাতের মুঠোয় মল্লিকার চুল। মল্লিকার সপাট চড় নিত্যানন্দের গালে! চুলে টান খেয়ে মল্লিকার পরিত্রাহী চিৎকার। চড়ের চোটে নিত্যানন্দেরও নিজের নাম ভোলার জোগাড়! এটুকু পড়ে যদি ভাবেন দুই স্কুলপড়ুয়ার মধ্যে ঝামেলা বেধেছে, তা হলে ভুল ভাববেন!

সৌমেন দত্ত
গুসকরা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৫
Share: Save:

নিত্যানন্দের হাতের মুঠোয় মল্লিকার চুল। মল্লিকার সপাট চড় নিত্যানন্দের গালে!

চুলে টান খেয়ে মল্লিকার পরিত্রাহী চিৎকার। চড়ের চোটে নিত্যানন্দেরও নিজের নাম ভোলার জোগাড়!

এটুকু পড়ে যদি ভাবেন দুই স্কুলপড়ুয়ার মধ্যে ঝামেলা বেধেছে, তা হলে ভুল ভাববেন! মঙ্গলবার বারবেলায় গুসকরা পুরসভার তিন তলার বারান্দায় এই চুলোচুলি, থুড়ি, চড়-চুলির কুশীলব স্কুলের বাচ্চারা নয়, বরং শাসকদলের দুই দাপুটে কাউন্সিলর মল্লিকা চোঙদার ও নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়! দলনেত্রী, দলের পর্যবেক্ষক—সকলের বার্তা উড়িয়ে যাঁরা এ দিন বাচ্চাদের মতোই মারামারি করেছেন পুরসভার বাকি
সব কাউন্সিলর, কর্মী ও সাধারণ মানুষের সামনে।

নীচতলা থেকে ওই দৃশ্য দেখে ততক্ষণে বুকে হাত দিয়ে বসে পড়েছেন গুসকরার তৃণমূলের পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়। ‘এই রে দাদার কিছু একটা না হয়ে যায়!’—বলতে বলতে পুরপ্রধানকে ধরাধরি করে তাঁর ঘরে নিয়ে গেলেন অনুগামীরা। তলব পড়ল ডাক্তারের। ডাক্তার বললেন, রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে। একদম টেনশন নয়! যা শুনে এলাকারই কিছু তৃণমূল কর্মীর মন্তব্য, ‘‘আজ যা হল, তার পরে টেনশন বা রক্তচাপের আর দোষ কী! লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।’’ শেষে পুলিশ গিয়ে দু’জনকে উদ্ধার করে।

সুযোগ পেয়ে হুল ফোটাচ্ছেন বিরোধীরাও। তাঁদের কটাক্ষ, দলনেত্রী বন্ধ ঘরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কমাতে নির্দেশ দিচ্ছেন। আর ঘর থেকে বেরিয়েই নিজেদের মধ্যে চুলোচুলি, হাতাহাতি করছেন নিচুতলার নেতা-নেত্রীরা।

অথচ এই সেই গুসকরা, বলা হয়, যার হাত ধরে বর্ধমানের মতো ‘লাল দুর্গে’ বামেদের (আরও নির্দিষ্ট করলে বললে সিপিএমের) পতনের সূচনা। সিপিএমের প্রবল দাপটের দিনেও গুসকরার মানুষ ঝুলি উপুড় করে ভোট দিয়ে জিতিয়ে এনেছিলেন তৃণমূলের প্রার্থীদের। কিন্তু, তার পর থেকে তাঁরা শুধুই দেখেছেন তৃণমূলের কাউন্সিলরদের খেয়োখেয়ি, মাঝেসাজে চুলোচুলিও। স্থানীয় রাজনীতিতে মল্লিকা পুরপ্রধানের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। নিত্যানন্দ বিরোধী গোষ্ঠীর। পুরসভার কর্মীদের একাংশের দাবি, কিছুদিন আগেই পুরপ্রধান ও নিত্যানন্দের লোকজনের মধ্যে মারপিট বেধেছিল। মল্লিকা-নিত্যানন্দ কাজিয়ায় গুসকরার উন্নয়নই বন্ধ বলে অভিযোগ স্থানীয় সিপিএম নেতা মনোজ সাউয়ের।

এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ তিন তলার ‘মিটিং রুমে’ পুরসভার করণিক ও চতুর্থ শ্রেণি পদে নিয়োগ নিয়ে বৈঠক ছিল। সূত্রের খবর, বৈঠকের শুরুতেই নিত্যানন্দ বলে ওঠেন, ‘বৈঠকের কোনও দরকার নেই। ভোটের পরে লোক নিয়োগ করা হবে।’ এ নিয়ে তর্কাতর্কি শুরু হয়ে যায় কাউন্সিলরদের মধ্যে। নিত্যানন্দ ফের বলে ওঠেন, ‘শহরে কানপাতা দায়। ৫-৭ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি করতে চাইছেন পুরপ্রধান ও তাঁর ঘনিষ্ঠেরা।’

ব্যস, হাওয়া নিমেষে গরম!

গলা চড়িয়ে মল্লিকা পাল্টা বলেন, ‘নিত্যানন্দবাবু নিজে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেবেন বলে সরকারি স্তরের বৈঠক ভেস্তে দিতে চাইছেন।’ অভিযোগ, এর পরেই চুলের
মুঠি ধরে মল্লিকাকে ঘর থেকে বারান্দায় টেনে আনেন নিত্যানন্দ। মল্লিকাও কষে চড় বসিয়ে দেন ‘হামলাকারীর’ গালে। পরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আমাকে কী ভাবে হেনস্থা করা হয়, সবাই দেখেছে। নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতেই আমি চড় মেরেছি।’’ ততক্ষণে মাঠে নেমেছেন মল্লিকার স্বামী সোমনাথ চোঙদার। নিত্যানন্দের অভিযোগ, ‘‘সোমনাথ লোকজন নিয়ে হামলা চালায়। আমার মাথায় পিস্তলের বাঁট দিয়ে মারে। আমার এক সঙ্গীকেও রক্তাক্ত করে দেয়।”

যা শুনে মল্লিকার বক্তব্য, ‘‘স্ত্রী-কে সকলের সামনে লাঞ্ছিত হতে দেখে এক জন স্বামীর যা কর্তব্য, তিনি তাই করেছেন।” গুসকরা বিট অফিসে নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন মল্লিকা। সোমনাথের বিরুদ্ধে মারধরের নালিশ করেন নিত্যানন্দ। তাঁর অনুগামী কাউন্সিলর রাখি মাঝি শ্লীলতাহানির অভিযোগও আনেন।

‘আমি কিছু বলব না’ বলে দায় এড়িয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ। দলের তরফে বর্ধমানের আউশগ্রাম-কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটের পর্যবেক্ষক, অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি দেখছি।”

(অঙ্কন: সুমন চৌধুরী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE