Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেলায় থমকে উন্নয়ন

তৃণমূলের নেতাদের মতবিরোধের জেরে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় অন্তত কয়েক কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প থমকে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শাসক দলের কয়েকজন নেতা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তৃণমূলেরই বিভিন্ন নেতাদের মতামত থেকে বোঝা যাচ্ছে, অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।

অনুপরতন মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০২:৪৫
Share: Save:

তৃণমূলের নেতাদের মতবিরোধের জেরে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় অন্তত কয়েক কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প থমকে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শাসক দলের কয়েকজন নেতা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তৃণমূলেরই বিভিন্ন নেতাদের মতামত থেকে বোঝা যাচ্ছে, অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।

যেমন, গঙ্গারামপুরের বিধায়ক তৃণমূলের সত্যেন রায়ই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা চান না ভাল কাজ হোক।’’ সত্যেনবাবুর বিধানসভা এলাকা গঙ্গারামপুরে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বি আর অম্বেডকর আবাসিক স্কুল এবং তপনের নওগাঁতে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনর্ভবা সেতু তৈরির কাজ দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে থমকে গিয়েছে বলে অভিযোগ। প্রচন্ড বিরক্ত সত্যেনবাবু বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন বলে মন্তব্য করেছেন।

সত্যেনবাবুর অভিযোগের তির দলেরই জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের দিকে। বিপ্লববাবুর বক্তব্য, ‘‘গঙ্গারামপুরের রতনমালা এলাকায় ওই আবাসিক স্কুল তৈরির জায়গায় অন্তত ৩০টি পরিবার বাস করেন। তাদের বিকল্প ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করা যাবে না।’’ তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘তপনের নওগাঁতে মাত্র তিনটি পরিবার রয়েছে। তাদের সরকারি ভাবে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও তাঁরা কেন উঠছেন না?’’

কুমারগঞ্জের বরাহার এলাকায় ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পাবলিক টয়লেট তৈরি প্রকল্পের কাজ আটকে যাওয়ার পিছনে সরাসরি গোষ্ঠী রাজনীতিকে দায়ী করেছেন তৃণমূলের বিধায়ক মাহমুদা বেগম। তাঁর অভিযোগ, বরাহার মোড় থেকে দু’জন দোকানদারকে ওই শৌচালয় পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলে তাঁরা সরে যেতে রাজী হন। কিন্তু এলাকার আইএনটিটিইউসি-র এক অঞ্চল নেতা বাধা দেওয়ায় দোকানিরা পরে বেঁকে বসলে প্রকল্পের কাজ থমকে গিয়েছে।

এ জেলায় কয়েক মাস ধরে জেলাপরিষদের মাধ্যমে কোনও উন্নয়নের কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলাপরিষদের মতো তৃণমূল পরিচালিত পুরসভাগুলিরও কার্যত একই অবস্থা বলে বিরোধীদের অভিযোগ। এই অবস্থায় কেন্দ্র ও রাজ্যের বরাদ্দে গুরুত্বপূর্ণ স্কুল, সেতু, হাইড্র্যান্ট, কৃষিভবন, পাবলিক শৌচালয়ের মতো পরিষেবামূলক উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ণে সরকারি স্তরে গত প্রায় এক বছর ধরে কাজের ওয়ার্ক অর্ডার হলেও শাসক দলের কয়েক জন নেতার মতবিরোধের জেরে প্রকল্পগুলি থেকে প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিশেষত সরকারি জায়গা থেকে দখলদারদের সরানো এবং পছন্দের লোককে কাজ পাইয়ে দেওয়া নিয়ে দলের গোষ্ঠী বিরোধে ওই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে দলের মধ্যেই অভিযোগ উঠেছে।

তপনের বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদা অভিযোগ করেন, ‘‘আমার এলাকায় কী কাজ হচ্ছে দল থেকে আমাকে জানানো হয় না।’’ পাছে পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করাতে অসুবিধা হয়, সেই আশঙ্কা থেকেও এটা হতে পারে বলে বাচ্চুবাবু অনুমান করেছেন।

থমকে থাকা প্রকল্পের মধ্যে পূর্ত দফতরের বেশ কিছু বড় প্রকল্প রয়েছে। পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘উন্নয়নের স্বার্থে সকলকে কিছুটা স্বার্থ ত্যাগ করতে হবে। না হলে প্রকল্পের টাকা ফেরত চলে যাবে।’’ তবে দলের কয়েক জন নেতার কোন্দলের জেরে উন্নয়ন ব্যাহত হয়ে পড়ায় ঘনিষ্ঠ মহলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শঙ্করবাবু।

দলীয় সূত্রের খবর, জেলার সভাপতি বিপ্লববাবুর সঙ্গে দলেরই অন্য বিধায়কদের বনিবনা নেই বলে অভিযোগ। সম্প্রতি জেলার প্রতিটি বিধানসভা এলাকার বিধায়কেরা সভাপতি বিপ্লববাবুর তৈরি করা আগের অঞ্চল কমিটি ভেঙে দিয়ে তাঁদের মতো করে কমিটি তৈরি করছেন। ফলে গোষ্ঠী কোন্দলের জের উন্নয়নকেও প্রভাবিত করছে বলে অভিযোগ। প্রকল্পের সুবিধা না পেয়ে ভুগছে সাধারণ মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE