লক্ষ্মীকান্ত সরকার ও (ডান দিকে) তপন কুমার দাম। —ফাইল চিত্র।
একটি কালী পুজোর অনুষ্ঠান সেরে আর একটিতে যাচ্ছেন জলপাইগুড়ির তৃণমূলের সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মন। গাড়িতে পিছনের আসনে বসেছিলেন মেখলিগঞ্জে দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত সরকার। অভিযোগ, বর্তমান ব্লক সভাপতি তপন দাম তখন বিজয়বাবুকে বলেছিলেন লক্ষ্মীকান্তবাবুকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে। বিজয়বাবুর সঙ্গে তপনবাবুর কথাবার্তার মধ্যেই গাড়ির পিছনের দরজা খুলে লক্ষ্মীকান্তবাবুকে নামিয়ে ছুরি মারা হয়। চ্যাংরাবান্ধায় বৃহস্পতিবার রাতের এই ঘটনায় লক্ষ্মীকান্তবাবুকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তপনবাবু পলাতক। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা হয়েছে।
বিরোধীদের দাবি, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে সীমান্ত এলাকার অবৈধ কারবার নিয়ে রেষারেষি। লক্ষ্মীকান্তবাবু আগে গৃহশিক্ষকতা করতেন। মাত্র কয়েক বছর ক্ষমতায় থাকার পরেই তাঁর গাড়ি, বাড়ি হয়। একটি চা বাগানের মালিকানাও তাঁর রয়েছে বলে দাবি। তাঁর অনুগামীদের অবশ্য বক্তব্য, পারিবারিক সূত্রেই লক্ষ্মীকান্তবাবুর টাকা রয়েছে। তবে তৃণমূল সূত্রে খবর, সম্প্রতি দলনেত্রী নিজেই প্রকাশ্যে তাঁকে ধমক দিয়েছিলেন।
লক্ষ্মীকান্তবাবুর দাবি, ‘‘আমি কোনও অবৈধ কাজে থাকি না।’’ তিনি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এই ঘটনা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথবাবুর মন্তব্য, ‘‘দলের তরফে তদন্ত হচ্ছে। অভিযুক্তরা পার পাবে না।’’ কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবালও জানান, তল্লাশি চলছে।
তপনবাবু আবার মেখলিগঞ্জের বিধায়ক অর্ঘ্য রায় প্রধানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তপনবাবু ব্যবসায়ী। সম্প্রতি তাঁরই গুদাম থেকে ট্রাক ভর্তি গরু আটক করে পুলিশ ও বিএসএফ। তিনি মেখলিগঞ্জের বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধানের অনুগামী বলেও পরিচিত। তবে অর্ঘ্যবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগাযোগ নেই। যা বলার দলীয় নেতৃত্বকে বলেছি।’’ তপনবাবুকে পুলিশ রাত পর্যন্ত খুঁজে পায়নি। ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি।
চ্যাংরাবান্ধায় কিন্তু কয়েক জন তৃণমূল কর্মী শুক্রবারও ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে রয়েছেন। এ বার বিধানসভা ভোটের পরেই লক্ষ্মীকান্তবাবুকে সরিয়ে তপনবাবুকে ক্ষমতায় আনা হয়। তৃণমূল কর্মীরা জানাচ্ছেন, তার পর থেকেই এলাকায় ক্ষমতা নিয়ে রেষারেষি শুরু হয়েছিল। তপনবাবুর অনুগামীদের এক জনের কথায়, “এক সময় তোলাবাজির স্বর্গরাজ্য মেখলিগঞ্জ। তপনবাবু ব্লক সভাপতি হওয়ার পরে তা পাল্টে গিয়েছে।”
সেই সঙ্গে তপনবাবুর দাবি, ‘‘বিজয়বাবু লক্ষ্মীকান্তবাবুকে গাড়িতে নিয়ে ঘুরলে এলাকায় ভুল বার্তা যায়। কিন্তু বিজয়বাবু তা বোঝেন না।’’
সাংসদ অবশ্য জানিয়েছেন, তপনবাবু ও লক্ষ্মীকান্তবাবু দু’জনেই তাঁকে খুব ভালবাসেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘তাই ওখানে গেলে ওদের দু’জনের সঙ্গেই সমানভাবে মিশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy