Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
গায়ের জোরে মাছের ভেড়ি তৈরির অভিযোগ

জলাজমিতে রক্তাক্ত দেহ তৃণমূল নেতার

নান্টু ও তাঁর দলবল মোবারকপুরের একাংশে চাষজমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে ভেড়ি বানাতে চেয়েছিলেন। তাতে বাধা দেন দোলই পাড়়ার কৃষকেরা। লাঠি, ধারালো অস্ত্র নিয়ে বাধে সংঘর্ষ।

নান্টু প্রধান। ফাইল চিত্র

নান্টু প্রধান। ফাইল চিত্র

আনন্দ মণ্ডল ও গোপাল পাত্র
তমলুক ও ভগবানপুর শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪৯
Share: Save:

সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে জমি-দখল ঘিরে রক্তাক্ত হল পূর্ব মেদিনীপুর। ভগবানপুর-১ ব্লকের মোবারকপুরে খুন হলেন তৃণমূলের উপ-প্রধান নান্টু প্রধান (৩৮)।

শনিবার সকালে মহম্মদপুর-১ পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান নান্টুর দেহ মেলে জলাজমিতে। চাষজমিতে মাছের ভেড়ি তৈরি নিয়ে সংঘর্ষের জেরেই নান্টু খুন হয়েছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। যদিও রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, ‘‘এই খুন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এতে বিজেপি এবং সিপিএম জড়িত।’’

তা হলে কি ভেড়ি তৈরি নিয়ে অশান্তি হয়নি? শুভেন্দুর জবাব, ‘‘গোলমাল অরাজনৈতিক কারণে হলেও কেন শুধু নান্টুকেই খুন করা হল সেটা দেখতে হবে।’’ নান্টুর পরিবারের কেউ অবশ্য মুখ খোলেননি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর গোলমালের শুরু শুক্রবার বিকেলে। অভিযোগ, নান্টু ও তাঁর দলবল মোবারকপুরের একাংশে চাষজমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে ভেড়ি বানাতে চেয়েছিলেন। তাতে বাধা দেন দোলই পাড়়ার কৃষকেরা। লাঠি, ধারালো অস্ত্র নিয়ে বাধে সংঘর্ষ। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত দফায় দফায় চলা সেই সংঘর্ষেই মাথায় ও ঘাড়ে ভারী অস্ত্রের ঘায়ে নিহত হন নান্টু।

গ্রামবাসীর দাবি, সংঘর্ষে নান্টুর দুই সঙ্গীরও প্রাণ গিয়েছে। তবে জেলার পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেসাকুমার বলেন, ‘‘এক জনেরই মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। দু’জন জখম। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দু’জনকে আটক করা হয়েছে।’’

শাসক দলের কিছু নেতার ‘ত্রাস’ হয়ে ওঠা আর তার জেরে জনরোষ, এমন ছবি রাজ্যের নানা প্রান্তেই সামনে এসেছে। সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম সফরের সময় মুখ্যমন্ত্রীর কানেও উঠেছে দলের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ। নান্টুও এলাকায় কার্যত ‘পঞ্চায়েত রাজ’ কায়েম করেছিলেন বলে অভিযোগ।

রক্তাক্ত: জলাজমিতে পড়ে তৃণমূলের উপ-প্রধান নান্টু প্রধানের দেহ।
শনিবার পূর্ব মেদিনীপুরের মোবারকপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

২০০৩ সালে তৃণমূলের টিকিটে জিতে মহম্মদপুর-১ পঞ্চায়েতের প্রধান হন নান্টুর বাবা চাঁদহরি প্রধান। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন তিনি। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে মহম্মদপুরের শেখবাড়ের প্রধান পরিবারের দাপট বাড়ে। নান্টু উপপ্রধান হন। স্ত্রী অপর্ণা হন পঞ্চায়েত প্রধান। নান্টুর ভাই পিন্টু ভগবানপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আর নান্টুর শাশুড়িও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। বহু মাছের ভেড়ি, বিএড কলেজ, মাটি কাটার একাধিক যন্ত্র এবং একাধিক লরি— নান্টুর সম্পত্তিও বেড়েছিল বহুগুণ।

পাল্লা দিয়ে বাড়ে অভিযোগও। পঞ্চায়েতে দুর্নীতি, তোলাবাজি থেকে সেচ দফতরের আধিকারিকদের মারধর করে কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদী সংস্কারের কাজ থমকে দেওয়া, বেনামে ঠিকাদারি, ডাকাতি— নানা কুকর্মে নাম জড়ালেও বহাল তবিয়তে ছিলেন নান্টু। ২০১৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে এক বার গ্রেফতার হলেও জামিন পেতে দেরি হয়নি তাঁর।

এহেন নান্টুকে নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভের অন্ত ছিল না। আর সেই জনরোষেই বাহিনী নিয়ে ঘোরা নান্টুকে মরতে হল বলে ভগবানপুর জুড়ে জল্পনা চলছে। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘কম মানুষের জমি কেড়ে ভেড়ি বানায়নি নান্টু। একটা সময় লোকে তো রুখে দাঁড়াবেই।’’

শুভেন্দু বিজেপির দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেও ঘটনায় দলীয় যোগ উড়িয়ে রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘মানুষের সঙ্গে শত্রুতা করে পার পাওয়া যায় না।’’ আর বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘যাঁরা অত্যাচারের শিকার, তাঁদের থেকে তো শুভেন্দু অধিকারী বেশি জানেন না। অত্যাচারীরা কেন তৃণমূলে যুক্ত হয়, শুভেন্দু বরং সেটা ভাবুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE