এক মন্ত্রী ঢিল ছুড়েছিলেন নির্দিষ্ট নিশানায়। ব্যক্তিকে লক্ষ করে। কিন্তু ঢিল গিয়ে পড়েছে দলের মৌচাকে! ফলে নিশানা গিয়েছে ছ়়ড়িয়ে!
কলেজের পরিচালন সমিতির মাথায় মন্ত্রীদের থাকা উচিত কি না, দু’দিন আগে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্যের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। কারও নাম না করলেও উত্তর কলকাতায় তৃণমূলী রাজনীতির অলিগলিতে বোঝাই যাচ্ছিল, সাধনবাবুর নিশানা ছিলেন আর এক মন্ত্রী শশী পাঁজা। যিনি উত্তরের একাধিক কলেজের পরিচালন সমিতির শীর্ষে অধিষ্ঠিত। তির লেগেছে ঠিক জায়গাতেই। গোলমালের জেরে জয়পুরিয়া কলেজে সরকারি প্রতিনিধির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে শশীকে। তাঁর পরিবর্তে মঙ্গলবারই নিয়োগ করা হয়েছে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু সাধনবাবুর মন্তব্য যে শশীদেবীকে ছাড়িয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাঁকিয়ে বসা দীর্ঘ দিনের রোগকেও ধরিয়ে দিচ্ছে, অস্বীকার করতে পারছে না শাসক দল!
কলেজ পরিচালন সমিতিতে মন্ত্রী-সান্ত্রী বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বসিয়ে রাখার চল বাম আমলেও ছিল। অনিল বিশ্বাসের ঘরানা বিশ্বাস করত, কলেজ পরিচালনায় রাজনীতির ব্যক্তিত্বেরা থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সুবিধা হয়। খাতায়-কলমে যুক্তি ছিল, এতে আর্থিক বা অন্যান্য দাবি-দাওয়া আদায় সহজ হয়। জমানা বদলেছে। কিন্তু পরম্পরা বদলায়নি। সেই একই যুক্তি সামনে রেখে কলেজে কলেজে মাথায় বসে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মন্ত্রীরা—ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, শশী পাঁজা...।
জয়পুরিয়া কলেজে দু’দল ছাত্রের অশান্তি এবং শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনার পরে পরিচালন সমিতি থেকে শশীকে সরিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী। তার পরেই সাধনবাবু বলেছিলেন, ‘‘ট্রেড ইউনিয়নের মাথায় যেমন কোনও মন্ত্রীর থাকা ঠিক নয়, তেমনই কলেজ পরিচালন সমিতির মাথাতেও মন্ত্রীকে রাখা ঠিক নয়। দলের প্রতি এটা আমার পরামর্শ। আমি আট বারের বিধায়ক। কখনও বলিনি, আমি কলেজে পরিচালন সমিতিতে থাকব!’’
সাধনবাবু যে ভুল বলছেন না, অস্বীকার করতে পারেননি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘সাধনবাবু যা বলেছেন, ভাল কথা। কিন্তু ওঁর কিছু বলার থাকলে দলের ভিতরে বলতে পারতেন।’’ সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে সাধনবাবুকে দলের তরফে চিঠি পাঠানোরও ইঙ্গিত দিয়েছেন পার্থবাবু। সাধনবাবু কিন্তু তাঁর মন্তব্যে অনড়।
ফলে বিতর্ক থেমে থাকছে না। বিতর্কের মুখে মুরলীধর গার্লস কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি, বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব বলছেন, ‘‘কলেজের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করি না। বরং আমার দ্বারা কলেজ উপকৃতই হয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী নিষেধ করলে সরে যাব।’’
আবার হরিমোহন ঘোষ কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি ফিরহাদের দাবি, তাঁরা মিলেমিশেই কাজ করেন। ওই কলেজে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তিনি বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেছেন। শশীর সঙ্গে এ দিন চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy