ফের ওসি বদলাল কেশপুর থানায়। এই নিয়ে গত সাড়ে চার বছরে ছ’বার!
গত জানুয়ারির শেষে কেশপুরের ওসি হন অভিজিত্ বিশ্বাস। তার আগে তিনি নারায়ণগড়ের ওসি ছিলেন। হঠাৎ এক মাসের মাথায় কেন ওসি বদল? পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখরের জবাব, “এটা রুটিন বদলি।’’ তবে জেলা পুলিশের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে অন্য খবর। পুলিশেরই একাংশ জানাচ্ছে, অধুনা জঙ্গলমহলে কর্মরত রাজ্য পুলিশের এক পদস্থ কর্তার কাছে কেশপুরের ওসির ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা। ওই নেতার দাবি ছিল, ওসি তেমন সক্রিয় নন। গোলমালে জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ঘটনাচক্রে তার দু’দিনের মাথায় এল বদলির নির্দেশ। রবিবার সন্ধ্যায় নির্দেশ জারি হয়। সোমবার দুপুরে তা কার্যকরও হয়ে গিয়েছে। অভিজিত্ বিশ্বাসের জায়গায় কেশপুরের নতুন ওসি হলেন হাসানুজ্জামান মোল্লা। অভিজিত্বাবুকে ডিআইবি-তে (মেদিনীপুর) বদলি করা হয়েছে। আর হাসানুজ্জামান মোল্লা আনন্দপুর থানার ওসি ছিলেন। তাঁর জায়গায় আনন্দপুর থানার ওসি হয়েছেন অমিত মুখোপাধ্যায়। অমিতবাবু কেশপুর থানাতেই কর্মরত ছিলেন।
শাসক দলের রোষে পড়ার কারণেই কি সরতে হল কেশপুরের ওসিকে, নেমে এলো শাস্তির খাঁড়া, জল্পনা চলছে। চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে পুলিশ মহলেও। বিশেষ করে পুলিশের নিচুতলায়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মীর কথায়, “যে ভাবে ওসিকে সরানো হল তা ঠিক নয়। একজনের পক্ষে তো সকলকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়!” ওই পুলিশ কর্মীর ইঙ্গিত তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের দিকেই। এক সূত্রের দাবি, তৃণমূলের ওই শীর্ষ নেতা অধুনা জঙ্গলমহল এলাকায় কর্মরত রাজ্য পুলিশের ওই পদস্থ কর্তার কাছে ওসির ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করার পরে জেলা পুলিশ সুপারের কাছেও এক বার্তা আসে। বার্তা পেয়ে পদক্ষেপ করতে সময় নেননি পুলিশ সুপার। দ্রুত তিনি কেশপুরের ওসির বদলির নির্দেশ দেন।
কেশপুরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান আবার দলের অন্দরে জেলা তৃণমূলের ওই শীর্ষ নেতার অনুগামী বলে পরিচিত। দলের এক সূত্রের দাবি, মাথায় এই নেতার হাত রয়েছে বলেই তৃণমূলের ব্লক সভাপতি পদে রয়েছেন সঞ্জয়বাবু। এ দিকে, কেশপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলও নতুন কিছু নয়। যদিও শাসক দলের জেলা নেতৃত্ব কখনও এই কোন্দলের কথা মানতে চান না। দুই গোষ্ঠীর একদিকে রয়েছেন সঞ্জয়বাবুর অনুগামীরা। অন্য দিকে, রয়েছেন দলেরই জেলা পরিষদ সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদের অনুগামীরা। সপ্তাহ খানেক আগে কেশপুরের মুকুন্দপুর, গরগজপোতায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমাল হয়। এই এলাকার পাশেই খেজুরবনি। সঞ্জয়-অনুগামীদের ধারণা, খেজুরবনির লোকেরা গিয়েই মুকুন্দপুর, গরগজপোতায় গোলমাল করে। খেজুরবনিতে আবার মহিউদ্দিন-গোষ্ঠীর প্রভাব রয়েছে। গোলমালে জড়িতদের ধরপাকড় করতে একবার খেজুরবনিতে গিয়েছিল পুলিশ। অবশ্য ওই দিন কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশের বিরুদ্ধে নিরীহ গ্রামবাসীদের উপরে লাঠিচার্জের অভিযোগ ওঠে।
চার জন জখমও হন। সঞ্জয়-অনুগামীদের একাংশ মনে করেন, চাইলে ওই দিন পুলিশ মহিউদ্দিন-অনুগামী কয়েকজনকে গ্রেফতার করতে পারত। কিন্তু করেনি।
অসন্তোষের সূত্রপাত এখান থেকেই। সঞ্জয়-অনুগামী বলে পরিচিত কেশপুরের এক নেতার কথায়, “ওই দিন তো কাউকে গ্রেফতার করা হলই না, এমনকী তারপরেও কাউকে গ্রেফতার করা হল না! পুলিশ এত নরম হলে চলে!” মহিউদ্দিন-অনুগামী বলে পরিচিত এক নেতার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘ওসি দক্ষ অফিসার ছিলেন। শুধু একপক্ষের কথা শুনে কাজ করতেন না। সব দিক দেখেই পদক্ষেপ করতেন।’’ এই পরিস্থিতিতেই ওসি বদল বলে জানা যাচ্ছে। যদিও তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পানের দাবি, “ওসির বদলির ব্যাপারে কিছুই জানি না!” জেলা পরিষদ সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদেরও বক্তব্য, ‘‘ওই ওসি ভাল ছিলেন। কেন সরানো হল বুঝতে পারছি না।’’ আর তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের দাবি, ‘‘আগে কে ওসি ছিলেন, এখন কে ওসি রয়েছেন, সত্যিই এ সব ব্যাপারে কিছু জানি না!”
অভিজিত্বাবুকে নিয়ে বিশেষ অভিযোগ ছিল না সিপিএমেরও। দলের কেশপুর জোনাল সম্পাদক মানিক সেনগুপ্তের বক্তব্য, ‘‘সপ্তাহ দুয়েক আগেই তো আমরা ওঁর কাছে ডেপুটেশন দিয়েছি। কেন ওঁকে সরানো হল বুঝতে পারছি না। নিশ্চয়ই কোনও ব্যাপার রয়েছে।’’
পুলিশ কর্তাদের বদলির সুপারিশ করে শাসক দলের নেতাদের প্রশাসনের উপরে চাপ বাড়ানো নতুন নয়। এ ক্ষেত্রে কি এমন কিছুর জন্যই শাস্তির খাঁড়া নেমে এসেছে, জল্পনা চলছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, “কেশপুর এলাকাটাই অন্য রকম। ওখানে কাজ করাটা শুধু কঠিন নয়, বেশ কঠিন!”
সরছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
নিজস্ব সংবাদদাতা ও মেদিনীপুর
সামনে বিধানসভা নির্বাচন। যে কোনও দিন নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা হতে পারে। ঠিক এই সময়েই বদলি হলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অংশুমান সাহার। সোমবার বিকেলে তাঁর বদলির নির্দেশ বেরিয়েছে। জেলার নতুন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) হবেন অমিতাভ মাইতি। অমিতাভবাবু আসানসোল- দুর্গাপুর কমিশনারেটে ছিলেন। এই পুলিশ- কর্তা তৃণমূলের খুব ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতও ছিলেন না। ঠিক কী কারণে এই বদলি, স্বাভাবিক ভাবে সেই নিয়ে জেলার পুলিশ মহলে জল্পনা চলছে। অংশুমানবাবুর বদলি হয়েছে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের সেকেন্ড ব্যাটালিয়নে। তিনি এই ব্যাটেলিয়নের ডেপুটি কমান্ডান্ট হবেন। আজ, মঙ্গলবারই এই বদলির নির্দেশ কার্যকর হওয়ার কথা। সোমবার রাজ্যের তিন পুলিশ- কর্তার বদলির নির্দেশ হয়। অংশুমানবাবু এঁদেরই একজন। মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের বার্ষিক ক্রীড়া শেষ হবে। বিকেলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান রয়েছে। এই অনুষ্ঠান শেষেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) পদের দায়িত্বভার ছাড়ার কথা অংশুমানবাবুর। এই বদলি নিয়ে নানা জল্পনা চললেও রাজ্য পুলিশের অবশ্য বক্তব্য, এটা রুটিন বদলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy