Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আরও পড়তেই চাই, স্কুলে এসে বলল তুহিনা

প্রধান শিক্ষকের চিঠি পেয়ে ওসি লিটন বিশ্বাস মেয়েটির বাড়িতে পুলিশ পাঠান। তুহিনার বাবা-মা প্রথমে বিয়ে বন্ধে রাজি হননি। তাঁদের বোঝানো হয়, অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে হলে নানা শারীরিক সমস্যা হতে পারে। নাবালিকার বিয়ে আইনের চোখেও অপরাধ।

তুহিনা পারভিন। —নিজস্ব চিত্র।

তুহিনা পারভিন। —নিজস্ব চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র
দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩০
Share: Save:

স্কুলে কন্যাশ্রীর অনুষ্ঠান চলছিল। প্রধান শিক্ষক কথা বলছিলেন পরিচালন সমিতির সম্পাদকের সঙ্গে। হঠাৎ নবম শ্রেণির ছাত্রীটি হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘‘স্যার আমি পড়তে চাই। বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আমি বিয়ে করব না।’’

শুক্রবার দেগঙ্গার হাদিপুর আদর্শ হাইস্কুলের ঘটনা। তুহিনা পারভিন নামে মেয়েটি পড়ে নবম শ্রেণিতে। তার সমস্যার কথা জানতে পেরে প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম, পরিচালন সমিতির সম্পাদক হুমায়ুন চৌধুরীরা বিষয়টি লিখিত ভাবে বিডিও এবং থানার ওসিকে জানান। পরে পুলিশ ওই কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করার ব্যবস্থা করে।

শুক্রবার তুহিনার বিয়ের ‘পাকা কথা’ হওয়ার কথা ছিল। মরিয়া মেয়েটি বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে সোজা স্কুলে এসে ঘটনা জানায়।

আরও পড়ুন: রূপার জবাবে অখুশি সিআইডি

প্রধান শিক্ষকের চিঠি পেয়ে ওসি লিটন বিশ্বাস মেয়েটির বাড়িতে পুলিশ পাঠান। তুহিনার বাবা-মা প্রথমে বিয়ে বন্ধে রাজি হননি। তাঁদের বোঝানো হয়, অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে হলে নানা শারীরিক সমস্যা হতে পারে। নাবালিকার বিয়ে আইনের চোখেও অপরাধ। তুহিনার বাবা হাফিজুল বিশ্বাস চায়ের দোকান চালান। দুই মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, এই অবস্থায় বড় মেয়ের জন্য ‘ভাল পাত্র’ হাতছাড়া হোক, চাননি তিনি। তবে শেষমেশ, মুচলেকা দিয়ে হাফিজুল বলেছেন, মেয়ের বয়স আঠারো না হলে বিয়ে দেবেন না। এই সিদ্ধান্তে যাতে নড়চড় না হয়, সে জন্য নজর রাখবে পুলিশও। তুহিনাকে থানার ফোন নম্বর ও এক অফিসারের মোবাইল নম্বর দিয়ে বলা হয়েছে, অসুবিধা হলেই সে যেন পুলিশকে জানায়।

শুক্রবার ভালয় ভালয় সব মিটলেও শনিবার স্কুলে আসেনি তুহিনা। চিন্তায় পড়েন প্রধান শিক্ষক। তিনি লোক পাঠিয়ে তুহিনাকে স্কুলে নিয়ে আসেন। তুহিনা জানায়, বাবা বলেছিলেন, তোর বিয়েও দেব না। তবে আর পড়াশোনাও করতে হবে না। তবে হাফিজুল অবশ্য এ দিনই স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষককে বলেছেন, ‘‘ভুল হয়ে গিয়েছিল। মেয়ে লেখাপড়া করুক, সেটাই চাই। অভাবের জন্য নিজে পড়াশোনা করতে পারিনি। এখন মেয়েকে পড়াতে চাই।’’

তুহিনার পড়াশোনার দায়িত্ব স্কুলই নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। সে কথা জানতে পেরে আনন্দে তখন চোখের জলে ভাসছে তুহিনা। তার কথায়, লেখাপড়া করে বড় হতে চাই। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। তাই বিয়েতে আপত্তি করেছি।’’ হুমায়ুন বলেন, ‘‘মেয়েটার সাহসের তারিফ না করে পারছি না। সকলের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে তুহিনা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Marriage Kanyasree Divas Minor Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE